Price Hike

কিছু বাজারে পাইকারির দ্বিগুণ দাম আনাজের! টাস্ক ফোর্সের দাবি, নিয়ন্ত্রণেই আছে আলু ও পেঁয়াজের দাম

কিছু জেলায় আবার অভিযোগ উঠেছে, নির্দেশের পর কোনও সক্রিয়তাই দেখা যায়নি প্রশাসনের আধিকারিকদের। ক্রেতাদের বড় অংশের অভিযোগ, নজরদারিই সার! কাঁচা আনাজের দাম কমেনি।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন প্রতিবেদন

কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ জুলাই ২০২৪ ১৬:০০
Share:

কলকাতার বাজারে হানা টাস্ক ফোর্সের। ছবি: পিটিআই।

মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পর কলকাতা-সহ জেলাগুলির বিভিন্ন বাজারে নজরদারি জারি শুক্রবারও। আলু এবং পেঁয়াজের দাম অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে এসেছে বলেও দাবি বাজার পর্যবেক্ষণকারী টাস্ক ফোর্সের সদস্যদের। তবে কিছু জেলায় আবার অভিযোগ উঠেছে, নির্দেশের পর কোনও সক্রিয়তাই দেখা যায়নি প্রশাসনিক আধিকারিকদের। ক্রেতাদের বড় অংশের অভিযোগ, নজরদারিই সার! কাঁচা আনাজের দাম কমেনি। আরও অভিযোগ, কলকাতার কিছু বাজারে পাইকারির থেকে দ্বিগুণ দামে আনাজ বিক্রি হচ্ছে খুচরো বাজারে। যদিও টাস্ক ফোর্সের কর্তাদের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, এই নজরদারি চলবে। শিলিগুড়ির মেয়র গৌতম দেবও দিয়েছেন কড়া বার্তা।

Advertisement

বৃহস্পতিবারের পর শুক্রবারেও কলকাতায় নজরদারি চালিয়েছে টাস্ক ফোর্স। শ্যামবাজারে চলেছে অভিযান। টাস্ক ফোর্সের তরফে জানানো হয়েছে, পাইকারি বাজারের থেকে খুচরো বাজারে কিছু ক্ষেত্রে দ্বিগুণ দাম নেওয়া হচ্ছে। এই নিয়ে বিক্রেতাদের ধমকও দেওয়া হয়েছে। হুঁশিয়ারি দিয়ে বলা হয়েছে, এ রকম চললে পুলিশ ব্যবস্থা নেবে। কিছু আনাজ পাইকারি বাজারে ৩৬ টাকায় বিক্রি করা হয়েছে। খুচরো বাজারে তা ৭০-৮০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। বেলডাঙার লঙ্কা বলে খুচরো বাজারে ১৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে লঙ্কা। পাইকারি বাজারে তা ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হচ্ছে। টাস্ক ফোর্সের সদস্যেরা জানিয়েছেন, আদৌ সেগুলি বেলডাঙার লঙ্কা কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। এমনি লঙ্কা ৬০-৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হচ্ছে। তবে আলু-পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে এসেছে। টাস্ক ফোর্সের সদস্য রবীন্দ্রনাথ কোলে জানিয়েছেন, এই নজরদারি চলবে।

উত্তর ২৪ পরগনার বিভিন্ন বাজারে শুক্রবারও চালানো হয়েছে অভিযান। কোন বাজারে আনাজের দাম কত, খতিয়ে দেখছেন টাস্ক ফোর্সের সদস্যেরা। ক্রেতাদের বড় অংশের দাবি, নজরদারি চললেও দাম খুব একটা কমেনি।

Advertisement

মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পর গত দু’দিন হুগলির শহর এবং গ্রামের বাজারগুলিতে নজরদারি চালিয়েছে প্রশাসন। বিক্রেতা সূত্রে জানা গিয়েছে, বাজারগুলিতে সব্জির আমদানি হয়েছে ভালই। ক্রেতাদের একাংশের দাবি, আনাজের দাম কিছুটা কমেছে। আলু-পেঁয়াজের দাম একই থাকলেও কিছু সব্জির দাম কেজিপ্রতি ১০ থেকে ২০ টাকা করে কমেছে। শুক্রবার নতুন করে বাজারে অভিযান না হলেও নজরদারি চলবে বলে জানিয়েছে প্রশাসন।

শুক্রবার পূর্ব বর্ধমানে আনাজের দামে লাগাম পরাতে বাজারে উপস্থিত ছিলেন খোদ মন্ত্রী। তার আগে গত দু’দিন বাজারে বাজারে ঘুরেছে টাস্ক ফোর্স। শুক্রবার রাজ্যের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ কালনার চকবাজার গিয়ে সরেজমিনে দেখলেন বাজারদর। পাশাপাশি, চকবাজারে ২৮ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রি শুরু করল রাজ্য সরকার। স্বপন জানিয়ে দেন, বাজারের থেকে দু’টাকা কম দামে কিসান মাণ্ডিতে আলু এবং পেঁয়াজ বিক্রি করা হবে সরকারের তরফে। স্বপনের সঙ্গে বাজারে যান কালনা পুরসভার পুরপ্রধান তপন পড়েল ।

বসিরহাটে ক্রেতাদের একাংশের দাবি, নজরদারির পর কিছুটা হলেও কমেছে সব্জির দাম। আদা, রসুন, উচ্ছে, ক্যাপসিকাম দাম কেজিপ্রতি প্রায় ২০ টাকা কমেছে। এক কেজি কাঁচা লঙ্কা আগে বিক্রি হত ১৫০ টাকায়। এখন তার দাম ১২০ টাকা। আলুর দাম প্রতি কেজিতে ৩ থেকে ৫ টাকা কমেছে। বেগুন, ঝিঙে, গাজরের দামও কেজি প্রতি ১০ টাকা করে কমেছে।

হাওড়ার বাসিন্দাদের অভিযোগ, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পরের দিন অভিযান চালানো হয়েছিল। তার পর তেমন নজরদারি চালানো হয়নি। জিনিসপত্রের দামও আগের মতোই।

মালদহে বাজার এখনও অগ্নিমূল্য বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পর টাস্ক ফোর্স গঠন করা হয়েছে। বাজারগুলিতে টাস্ক ফোর্সের সদস্যেরা সব্জির দর বেঁধে দিয়েছেন। ক্রেতাদের অভিযোগ, তার পরেও কাজ হয়নি। বাজারে যখন টাস্ক ফোর্সের সদস্যেরা ঘুরছেন, তখন আলুর দর কমে ৩০ টাকা কেজি হচ্ছে। কিন্তু তাঁরা চলে যাওয়ার পর সেই পুরোনো দর ৪০টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে আলু। অন্যান্য সব্জির ক্ষেত্রেও একই কাণ্ড হচ্ছে। বিক্রেতাদের আবার দাবি, আড়তদারেরা দাম কমিয়ে সব্জি দিচ্ছেন না। ফলে অভিযানের ফলে ক্ষতির মুখে পড়ছেন তাঁরা।

ক্রেতাদের দাবি, টাস্ক ফোর্সের অভিযানের পর পশ্চিম বর্ধমানে সব্জির দাম অনেকটাই কমে গিয়েছিল। দাঁড়িপাল্লায় কারচুপিও ধরা পড়েছিল। কিন্তু দু’দিন পর শুক্রবার আবার সব্জির দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। এক কেজি টম্যাটোর দাম আবার ৮০ টাকা হয়ে গিয়েছে, পটল ৪০ টাকা। দেশি শসা ৭০ টাকা, ঢেঁড়স ৫০ টাকা, জ্যোতি আলু ৩৪ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। পেঁয়াজ ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে আসানসোল দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলে।

মেদিনীপুর শহরের রাজাবাজারে শুক্রবার ঘুরে দেখলেন সদর মহকুমা শাসক মধুমিতা মুখোপাধ্যায়। সঙ্গে ছিলেন পুইরসভার প্রতিনিধিরা। ক্রেতা এবং বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলেন তাঁরা। মহকুমা শাসক নিজেই স্বীকার করেছেন যে, একই বাজারে জিনিসের দাম ওঠা-নামা করে। যে ফড়ে বেশি দামে জিনিস বিক্রি করছেন, তার থেকে মাল নিতেও নিষেধ করা হয়েছে বিক্রেতাদের। বাজারে এখন আলু ৩০ টাকা, পেঁয়াজ ৪০-৫০ টাকা, লঙ্কা ১৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পর বৃহস্পতিবার থেকে বাঁকুড়ার বিভিন্ন বাজারে অভিযান শুরু করেছে কৃষি বিপণন দফতর এবং এনফোর্সমেন্ট বিভাগ। শুক্রবারও বাঁকুড়া শহরের বাজারগুলিতে সেই অভিযান অব্যাহত রয়েছে। আর তাতেই কিছুটা হলেও বাজারদর কমেছে বলে দাবি ক্রেতাদের। শুক্রবার বাঁকুড়া পুরসভা বাজারে আলু ৩০ টাকা, পেঁয়াজ ৪০ টাকা, টম্যাটো ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

শুক্রবার কোচবিহারের নতুন বাজারে অভিযান চালায় টাক্স ফোর্সের প্রতিনিধি দল। জেলা পরিষদের অতিরিক্ত জেলাশাসক সৌমেন দত্ত জানান, বৃহস্পতিবার থেকে অভিযান শুরু হয়েছে। কোচবিহারের ছোট-বড় সব বাজারে এই অভিযান চলবে। ক্রেতাদের দাবি, অভিযানের পর সব্জির দাম কিছুটা কমেছে।

নজরদারি চলছে শিলিগুড়িতেও। তবে অভিযোগ, টাস্ক ফোর্সের কর্তারা বাজার থেকে বার হতেই দাম বেড়ে যাচ্ছে সব্জির। শুক্রবার শিলিগুড়ি পুরনিগমে সাংবাদিক বৈঠকে মেয়র গৌতম দেব আনাজের মূল্যবৃদ্ধি কড়া হাতে দমনের কথা বলেছেন। এই নিয়ে জেলাশাসকের সঙ্গে বৈঠক করেছেন তিনি। মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে একাধিক পরিকল্পনাও নেওয়া হয়েছে বলে জানান মেয়র। তিনি বলেন, ‘‘দার্জিলিং জেলাশাসক, এসডিও-সহ বিভিন্ন সরকারি আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ যাতে মানা হয়, তা নিয়েও আলোচনা হয়েছে। টাস্ক ফোর্সের পরিদর্শনের পরই দাম বেড়ে যাচ্ছে। পাইকারি দাম আর খুচরো দামের অনেকটাই তারতম্য থাকছে। সেগুলো কী ভাবে নিয়ন্ত্রণে আনা যায়, তা নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয়েছে। কাজটা জেলাপ্রশাসন থেকেই করতে হবে। মাঝেমধ্যে সারপ্রাইজ ভিজিটও করা হবে। এই কৃত্রিম দ্রব্যমূল্যকে নিয়ন্ত্রণে আনতেই হবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement