—প্রতীকী চিত্র।
ব্যবধান বছর তিনেকের। কেন্দ্রীয় সরকারি চাকরিতে ডেপুটেশন বা অফিসার পাঠানো নিয়ে
ফের কড়া বার্তা পাঠাল কেন্দ্রের মোদী সরকার। তবে কেন্দ্রীয় কর্মিবর্গ ও প্রশিক্ষণ (ডিওপিটি) দফতরের বদলে এ বার দেশের ক্যাবিনেট সচিব টি ভি সোমনাথন রাজ্যের মুখ্যসচিব মনোজ পন্থকে লিখিত বার্তা পাঠিয়েছেন।
কেন্দ্রীয় সরকারি সূত্রের খবর, এই বার্তা মেনে চলার উপরে ভবিষ্যতে রাজ্যে নতুন অফিসার পাঠানোর সংখ্যাও অনেকাংশে নির্ভর করছে বলে বোঝানো হয়েছে। প্রসঙ্গত, ডেপুটেশনে অফিসার পেতে ২০২২ সালে কেন্দ্রের ক্যাডার আইন সংশোধনের প্রস্তাব, কেন্দ্র-রাজ্যের টানাপড়েন বাড়িয়েছিল। অতীতে কেন্দ্রের তরফে আইএএস আধিকারিকদের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা নিয়ে কয়েকটি বিরোধী রাজ্য আইনি পথে হাঁটারও তোড়জোড় করেছে। এ বার দেশের সর্বোচ্চ প্রশাসনিক আধিকারিক, ক্যাবিনেট সচিবের সরাসরি বার্তায় ফের জটিল পরিস্থিতির আশঙ্কা করছে সংশ্লিষ্ট মহল।
সাধারণত, চাকরি জীবনের ১৬ বছরের মাথায় কোনও আইএএস অফিসার কেন্দ্রে যুগ্ম সচিব পদের জন্য বিবেচিত হতে পারেন। ২০২০ সালের ১৮ জুন, ডিওপিটি একটি নির্দেশিকায় জানায়, দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতা বাড়াতে কেন্দ্রের উপসচিব বা ডিরেক্টর পদে আইএএস অফিসারদের অন্তত দু’বছর কাজ করা জরুরি। তবেই
তাঁরা কেন্দ্রে যুগ্ম সচিব পদের জন্য বিবেচিত হবেন।
সেই নির্দেশিকার উল্লেখ করে ক্যাবিনেট সচিব সোমনাথন নবান্নকে জানিয়েছেন, আইএএস কর্তাদের ৪০ শতাংশকে কেন্দ্রীয় নিয়োগের জন্য ধরে রাখার কথা রাজ্যগুলির। কিন্তু নির্ধারিত সংখ্যায় অফিসারদের কেন্দ্রীয় ডেপুটেশনে ছাড়া হচ্ছে না। এমনকি, কেউ কেন্দ্রের চাকরিতে আগ্রহী থাকলেও, তাঁকে সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না।
এর সঙ্গে সোমনাথনের সুপারিশ, ২০০৯এর ব্যাচ থেকে শুরু করে
যোগ্য অফিসারদের কেন্দ্রীয় ডেপুটেশনে আবেদন করায় রাজ্য উৎসাহ দিক। সেই আবেদন দ্রুত ডিওপিটি-তে পাঠানোর ব্যবস্থা করুক রাজ্যই। পাশাপাশি কেন্দ্র মনে করিয়েছে, কেন্দ্রীয় ডেপুটেশনে অফিসার কম পাঠানো হলে ‘ক্যাডার রিভিউ’ সংশ্লিষ্ট রাজ্যের অনুকূল না-ও হতে পারে।
অভিজ্ঞ আধিকারিকেরা জানাচ্ছেন, নির্দিষ্ট সময় অন্তর ‘ক্যাডার রিভিউ’ করে কোনও রাজ্যে কত জন অফিসার পাঠানো হবে, ঠিক করে কেন্দ্র। প্রতি বারই এই সংখ্যা বাড়ে। কিন্তু কোনও রাজ্য কেন্দ্রের নির্দেশ মেনে নির্ধারিত সংখ্যক অফিসার না পাঠালে ‘ক্যাডার রিভিউ’-এ অফিসারের সংখ্যা না-ও বাড়তে পারে। সূত্রের দাবি, এমন একটি ‘ক্যাডার রিভিউ’ হতে চলেছে আগামী দিনে। তাতে আরও বেশি অফিসার পেতে চাইছে রাজ্য। এই পরিস্থিতিতে ক্যাবিনেট সচিবের এই বার্তা তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল।
অভিজ্ঞ এক কর্তার কথায়, “সাধারণত কেন্দ্রীয় নিয়োগ নিয়ে এমন বার্তা ডিওপিটি-ই পাঠায়। সেখানে দেশের সর্বোচ্চ প্রশাসনিক কর্তা ক্যাবিনেট সচিবের চিঠি খুবই গুরুতর।”
যদিও রাজ্য প্রশাসনের একাংশের মতে, প্রয়োজনের তুলনায় আইএএস অফিসার কম এ রাজ্যে। তাই কেন্দ্রের নিয়মে বেশি অফিসার পাঠালে রাজ্যের প্রশাসনিক কাজ ধাক্কা খেতে পারে। তবে আধিকারিকদের অপর একটি অংশের পাল্টা যুক্তি, “ডেপুটেশনে
যাওয়া অফিসারেরা নির্দিষ্ট সময়ের পরে রাজ্যে ফেরত আসেন। তা ছাড়া, এ রাজ্যে বহু জুনিয়র অফিসার সিনিয়র পদে একাধিক দায়িত্ব সামলাচ্ছেন। আবার অনেক সিনিয়র অফিসার কম গুরুত্বপূর্ণ পদ এবং দায়িত্বে রয়েছেন। সচিব পদ মর্যাদার একাধিক অফিসার এখনও জেলাশাসকের দায়িত্বে সামলাচ্ছেন। ভিড় জমছে জুনিয়র অফিসারদের।’’ তাঁদের ব্যাখ্যা, সিনিয়রদের নিয়মিত ডেপুটেশনে পাঠানো না হলে জুনিয়র অফিসারদের উন্নতিতেও বাধা হতে পারে। ওই অফিসারেরা কেন্দ্রীয় ডেপুটেশনের সুযোগও
হারাতে পারেন।