সায়নী দাস
সাঁতারু হিসেবেই থাকতে চান তিনি। রাজনীতির তরজার কেন্দ্রে নন। স্পষ্ট বার্তা সায়নী দাসের।
ঠান্ডা জলের ভয়ঙ্কর স্রোত ও জেলিফিশের সঙ্গে প্রায় ১৪ ঘণ্টা লড়াই করে ইংলিশ চ্যানেল পেরিয়ে বাংলাকে গর্বিত করেছেন তিনি। কিন্তু, বাড়ি ফেরার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই তাঁর সাফল্য নিয়ে শুরু হয়ে গিয়েছে রাজনৈতিক টানাপড়েন। তাঁর বাবার রাজনৈতিক পরিচয়কে সামনে রেখে সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে তরজায় নেমে পড়েছেন বাম ও তৃণমূলের কিছু কর্মী-সমর্থক। রাজনীতির এই কাদা ছোড়াছুড়িতে বিরক্ত কালনার সাঁতারু সায়নী। তাঁর সাফল্যে যেন রাজনীতির রং না লাগানো হয়, ফেসবুকে বার্তা দিয়েছেন তিনি।
আরও পড়ুন: দামোদরে পড়ে প্রৌঢ়া বাঁচলেন মুণ্ডেশ্বরীতে
কালনার বারুইপাড়ার বাসিন্দা, কলেজ ছাত্রী সায়নী ২৬ জুলাই ইংলিশ চ্যানেল জয় করেন। তাঁর বাবা রাধেশ্যাম দাস বামপন্থী শিক্ষক সংগঠন এবিপিটিএ-র সদস্য। শুক্রবার রাতে সায়নী বাড়ি ফেরার পর থেকেই বামেদের নানা সংগঠন তাঁর সংবর্ধনার আয়োজন করেছে। রবিবার একটি সংবর্ধনা সভার আয়োজন করেন কালনার তৃণমূল বিধায়ক বিশ্বজিৎ কুণ্ডু। এর মাঝেই এলাকার কিছু সিপিএম কর্মী-সমর্থক সোশ্যাল মিডিয়ায় অভিযোগ করেন, রাধেশ্যামবাবুর আলাদা রাজনৈতিক মতাদর্শের জন্য তৃণমূল নানা ভাবে সায়নীকে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। কারও দাবি, তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরে রাধেশ্যামবাবুকে কালনা শহরে সুইমিং পুল পরিচালনার দায়িত্ব থেকে সরানো হয়েছিল। কারও অভিযোগ, ইংলিশ চ্যানেল পেরোতে যাওয়ার জন্য সায়নীর ভিসা পেতে সমস্যা হয়। তখন শাসকদলের কেউ সাহায্য করেননি। এক সিপিএম সাংসদের সহযোগিতায় তিনি ভিসা পান। এ সবের পাল্টা প্রতিক্রিয়া দিতে শুরু করেন তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকেরাও। সায়নীর সাফল্য নিয়ে সিপিএম রাজনীতি করার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করেন অনেকে।
সিপিএমের পূর্ব বর্ধমান জেলা সম্পাদক অচিন্ত্য মল্লিক সোশ্যাল নেটওয়ার্কে দলের লোকজনের মন্তব্য নিয়ে প্রতিক্রিয়া দিতে চাননি। তবে তাঁরও অভিযোগ, ‘‘গ্রামের মেয়ে সায়নীকে সরকার সাহায্য করেনি। সরকারের তরফে এখনও তাঁর সাফল্যের স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি।’’ যদিও বিশ্বজিৎবাবুর বক্তব্য, ‘‘সায়নী ফেরার সময়ে তাঁকে শুভেচ্ছা জানাতে রাজ্যের ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের নির্দেশে আমি দমদম বিমানবন্দরে হাজির ছিলাম। যে রাজনীতি চলছে, তা বন্ধ হওয়া উচিত।’’
রাজনীতি ও চাপান-উতোরে বিরক্ত সায়নী ও তাঁর পরিবারও। রাধেশ্যামবাবুর কথায়, ‘‘নিজেদের উদ্যোগে ভিসা জোগাড় করেছিলাম। আমার মেয়ে সাঁতারু হিসেবে সাফল্য পেয়েছে। সকলের সংবর্ধনাই গ্রহণ করছে সে। তার কৃতিত্বে রাজনীতি জড়ানো অনুচিত।’’ রবিবার সায়নী ফেসবুক পোস্টে লেখেন, ‘সকলের কাছে অনুরোধ, আমার এই সাফল্যে রাজনীতির রং না লাগানো হয়। আমি সাঁতারু হয়েই থাকতে চাই।’