শুভেন্দু অধিকারী। —ফাইল চিত্র।
বিধানসভায় আলোচনা ছাড়াই মন্ত্রী-বিধায়কদের বেতন বৃদ্ধির সরকারি ঘোষণার প্রতিবাদ করেছিলেন তিনি। এ বার তাঁর বেতনের বর্ধিত অংশ মহার্ঘ ভাতার (ডিএ) দাবিতে আন্দোলনকারীদের দেওয়ার প্রস্তাব দিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। শহিদ মিনার ময়দানে ডিএ-র প্রশ্নে ২৩৭ দিন ধরে অবস্থানরত সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের কাছে গিয়ে বুধবার বিরোধী দলনেতার প্রস্তাব, তাঁর সরকারি বেতনের ওই বর্ধিত অংশ আন্দোলনকারীদের আইনি লড়াইয়ে কাজে লাগানো হোক। যৌথ মঞ্চ ওই প্রস্তাব গ্রহণ করে বিরোধী দলনেতার প্রতি ‘কৃতজ্ঞতা’ জানিয়েছে।
রাজ্যে পূর্ণমন্ত্রীদের বেতন মাসে ৫০ হাজার টাকা করে বাড়ানোর ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রতিমন্ত্রী ও বিধায়কদের বেতন বাড়ানো হয়েছে ৪০ হাজার টাকা করে। সেই সঙ্গেই মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, তিনি সরকারি বেতন বা প্রাক্তন সাংসদের পেনশন নেন না। তাই এই সিদ্ধান্তের সুফল পাবেন অন্য মন্ত্রী ও বিধায়কেরা। রাজ্য সরকার যখন সরকারি কর্মীদের ডিএ দিতে পারছে না, নতুন নিয়োগ হচ্ছে না, সেই সময়ে এমন পদক্ষেপে প্রশ্ন তুলেছিল বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। বিরোধিতা করেছিলেন শুভেন্দুরাও। তার পরবর্তী পদক্ষেপ হিসেবেই বেতনের বর্ধিত অংশ ডিএ আন্দোলনকারীদের দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বিরোধী দলনেতা।
বিরোধী দলনেতার মর্যাদা ও বেতন পূর্ণমন্ত্রীর সমান। সরাসরি তাঁদের অ্যাকাউন্টে বেতনের টাকা জমা পড়ে। গত বারের বিধানসভায় তৎকালীন বিরোধী বামফ্রন্টের বিধায়কেরা বাড়তি বেতন নেবেন না বলে স্পিকারকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছিলেন। বর্তমান বিরোধী দলনেতা ঠিক করেছেন, তিনি ডিএ আন্দোলনকারীদের মঞ্চকে চেক পাঠাবেন। শহিদ মিনার ময়দানের ধর্না-মঞ্চে এ দিন শুভেন্দু বলেছেন, ‘‘আমার প্রত্যাখ্যান করার সুযোগ নেই। সরকার আমায় টাকা পাঠিয়ে দেয়। আমি আমার চেক এঁদের পাঠিয়ে দেব। আমি বলব, আপনাদের লড়াই আপনাদের মতো করে করুন। আমার এই অর্থ আপনারা পারলে আইনি লড়াইয়ের জন্য আইনজীবীদের দিয়ে দেবেন।’’ রাজ্যে কী ভাবে দুর্নীতি চলছে, কী ভাবে সরকারি আয়ে ফাঁকি দেওয়া চলছে, সেই সব প্রসঙ্গ তুলে রাজ্য সরকারকে এ দিন নিশানাও করেছেন বিরোধী দলনেতা।
শুভেন্দুর প্রস্তাব প্রসঙ্গে যৌথ মঞ্চের আহ্বায়ক ভাস্কর ঘোষ বলেছেন, ‘‘সরকারি কর্মচারী ছাড়া কারও কাছে আমরা টাকা-পয়সার আবেদন করিনি। বিরোধী দলনেতা সহযোগিতা করতে চেয়েছেন। আমরা সেটা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্বীকার করছি।’’ ডিএ-র দাবিতে বিরোধী দলনেতা যে ভাবে নানা মঞ্চে তুলে ধরছেন, তার জন্যও ‘কৃতজ্ঞতা’ জানিয়েছে যৌথ মঞ্চ। ভাস্করের আরও বক্তব্য, ‘‘এই ক্ষেত্রে উনি কোনও রাজনৈতিক দলের লোক বলে আমরা মনে করি না। কারণ, বিরোধী দলনেতা একটা সাংবিধানিক পদ।’’
এরই পাশাপাশি রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব বি পি গোপালিকার সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ করতে চাওয়াকে ঘিরেও সরব হয়েছেন বিরোধী দলনেতা। বিদেশে যাওয়ার সময়ে স্বরাষ্ট্রসচিবকে প্রশাসনিক সমম্বয়ের দায়িত্ব দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। স্বরাষ্ট্রসচিবের সঙ্গে এ দিন দেখা করতে চেয়েও সময় পাননি শুভেন্দু। তাঁর অভিযোগ, মুখ্যমন্ত্রীর অনুপস্থিতিতে বিরোধী দলনেতার সঙ্গে দেখা করা যাবে না, এমন ‘বার্তা’ই পেয়েছেন গোপালিকা। প্রশাসনিক স্তরে অবশ্য এই নিয়ে কোনও মন্তব্য করা হয়নি। পরে বিরোধী দলনেতাকে আগামী ২৩ সেপ্টেম্বর, শনিবার দুপুরে দেখা করার সময় দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রসচিব। সে দিনই মুখ্যমন্ত্রীর ফেরার কথা।