বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। —ফাইল চিত্র।
বালেশ্বরে রেল দুর্ঘটনার নেপথ্যে কি তৃণমূল কংগ্রেসের ভূমিকা আছে? বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর মন্তব্য ঘিরে শুরু হল এই চর্চা। কলকাতায় সোমবার শুভেন্দু বলেছেন, ‘‘এই পুরো ঘটনার পিছনে তৃণমূল আছে।’’ সেই জন্যই সিবিআই তদন্ত নিয়ে তারা উদ্বিগ্ন বলে বিরোধী দলনেতার অভিযোগ। শুভেন্দু জানিয়েছেন, রেলের দুই কর্তার ফোনের কথোপকথনের রেকর্ড কী ভাবে তৃণমূলের হাতে এল, সেই ব্যাপারে তিনি সিবিআই এবং প্রয়োজনে আদালতের দ্বারস্থ হবেন। তার বাইরে যে হেতু তিনি আলাদা করে ‘এই পুরো ঘটনা’র কথা উল্লেখ করেছেন, তাই তাঁর ইঙ্গিত রেলের দুর্ঘটনার দিকেই ছিল বলে মনে করা হচ্ছে। তৃণমূল অবশ্য বিরোধী দলনেতার এমন অভিযোগকে ‘উন্মাদের প্রলাপ’ বলে নস্যাৎ করে দিয়েছে।
রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব রবিবার ঘোষণা করেছিলেন, বালেশ্বরে রেল দুর্ঘটনার পিছনে গাফিলতি বা ত্রুটির পিছনে কে বা কারা আছে, তা চিহ্নিত করতে সিবিআইকে তদন্ত ভার দেওয়া হচ্ছে। ওই ঘোষণাকে কটাক্ষ করেছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও এ দিন সিবিআই তদন্তের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি দাবি করেছেন, শেষ বার রেলমন্ত্রী থাকাকালীন জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেস বেলাইন এবং সাঁইথিয়ায় দুর্ঘটনার তদন্ত সিবিআইকে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সিবিআই কিছুই করতে পারেনি। এর পরে সন্ধ্যায় শুভেন্দুর বক্তব্য, ‘‘এই পুরো ঘটনার পিছনে তৃণমূল আছে। তাদের ষড়যন্ত্র সামনে আনতে হবে। এত ভয় কেন কাল রাত থেকে? ঘটনা তো অন্য রাজ্যের।’’ তাঁর আরও মন্তব্য, ‘‘এই ফোন ট্যাপিং কত বড় কেলঙ্কারি হিসেবে প্রকাশিত হতে যাচ্ছে, তৃণমূল বুঝতে পারবে!’’
ঘটনার পিছনে তৃণমূলের ভূমিকা নিয়ে অভিযোগের জবাবে শাসক দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষের পাল্টা বক্তব্য, ‘‘যে কথা বিজেপি বলেনি, রেলমন্ত্রী বলেননি, রেল বলেনি, শুভেন্দু তা-ই বলেছেন! উন্মাদের প্রলাপ! মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছে!’’
রেলের দুই আধিকারিকের ফোনে কথোপকথনের একটি অডিয়ো ক্লিপ সমাজমাধ্যমে পোস্ট করে কুণাল মন্তব্য করেছিলেন, বালেশ্বরের রেল দুর্ঘটনার পিছনে ‘বড়সড় গোলমাল’ আছে। ওই অডিয়োর ভিত্তিতে কুণালের অভিযোগ ছিল, করমণ্ডলের সিগনাল ছিল মেন লাইনের কিন্তু পয়েন্ট দেওয়া হয়েছিল লুপ লাইনে। তবে কুণাল নিজেই উল্লেখ করেছিলেন, অডিয়োর সত্যতা যাচাই করা হয়নি। বালেশ্বরে গিয়ে রবিবারই শুভেন্দু প্রশ্ন তুলেছিলেন, ফোনের কথা রেকর্ড করে তার অডিয়ো তৃণমূলের হাতে এল কী ভাবে? আর এ দিন সেই সূত্রেই তাঁর বক্তব্য, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেছেন, আমি কী করে বলব? কলকাতা পুলিশের কি কাজ নেই? এটা বলেই উনি বুঝিয়ে দিয়েছেন, পুলিশই কাজটা করেছে!’’ বিরোধী দলনেতার দাবি, ‘‘কলকাতা পুলিশের এসটিএফ ফোনে আড়ি পেতে ওই রেকর্ড করে দিয়েছে। এটা একটা বড় দুর্নীতি।’’ তৃণমূলের কুণাল অবশ্য পাল্টা চ্যালেঞ্জ করেছেন, ‘‘হোক তদন্ত। যা পারে করে নিক! সিবিআইকে দিক। আমি আমার সূত্র মারফত অডিয়ো পেয়েছি। শুভেন্দু যদি চায়, আমার নাম করে বলুক আমিই অন্তর্ঘাত করেছি! তার পরে দেখা যাবে।’’ তাঁর আরও দাবি, ‘‘আমিও সিবিআইয়ে যাব, সারদার টাকা কাঁথিতে কী ভাবে গেল, তা জানতে। ওঁকে (শুভেন্দু) গ্রেফতার করা হচ্ছে না কেন, তা জানতে!’’
কলকাতায় স্বামী বিবেকানন্দের বাড়ি প্রাঙ্গণে রামকৃষ্ণ মঞ্চে এ দিন মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক, সিবিএসই এবং আইসিএসই-র দশম ও দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষার কৃতীদের সংবর্ধনা দিয়েছেন বিরোধী দলনেতা। কৃতীদের হাতে স্মারক তুলে দিয়ে উজ্জ্বল ভবিষ্যতের শুভেচ্ছা জানান তিনি।