মধ্য কলকাতা জেলা কংগ্রেসের লালবাজার অভিযান ঘিরে ধরপাকড়। ধর্মতলা এলাকায়। —নিজস্ব চিত্র।
আর জি কর-কাণ্ডকে সামনে রেখে নবান্ন অভিযানের সলতে পাকানো শুরু হয়ে গেল। কোনও দলের প্রতীক ছাড়া ‘পশ্চিমবঙ্গের ছাত্র সমাজে’র নামে নবান্ন অভিযানের ডাক দেওয়া হয়েছে আগামী ২৭ অগস্ট। সেই অভিযানেই তিনি ‘ব্যক্তিগত’ ভাবে অংশগ্রহণ করবেন বলে মঙ্গলবার জানিয়েছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তাঁর কথায়, ‘‘সব পরিবার থেকে এক জন করে ওই অভিযানে থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে। আমি ব্যক্তিগত ভাবে সেখানে যাব। এটা কোনও দলের ডাক নয়। সকলেই বুঝতে পারছেন, সব সমস্যার মাথা মুখ্যমন্ত্রী! তাঁকে বলব, ২৬ তারিখের মধ্যে পদত্যাগ-সহ সব ব্যবস্থা নিয়ে রাখুন। যাতে ২৭ তারিখ গুলি চালাতে না হয়!’’
আর জি করের ঘটনায় প্রথমে বামেরা সামনের সারিতে উঠে এলেও এখন দ্রুত জায়গা নেওয়ার চেষ্টাই করছে বিজেপি। শহরে এ দিনও বিজেপি ও তার শাখা সংগঠনগুলির বিক্ষোভে উত্তেজনা ছড়িয়েছে একাধিক জায়গায়। ছাত্র সংগঠন এবিভিপি-র স্বাস্থ্য ভবন অভিযানে ব্যারিকেড ভেঙে বিক্ষোভকারীরা এগোতে চাইলে পুলিশ লাঠি চালায়। কলেজ স্ট্রিটে দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক লকেট চট্টোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে প্রতিবাদ মিছিল হয়েছে। গড়িয়াহাটে বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল ও যুব মোর্চার রাজ্য সভাপতি ইন্দ্রনীল খাঁয়ের নেতৃত্বে পথ অবরোধ করেন বিজেপি কর্মী-সমর্থকেরা। হাওড়া সেতুতেও পথ অবরোধ করেন দলের কর্মী-সমর্থকরা। সেখান থেকে গ্রেফতার করা হয় পুরুলিয়ার সাংসদ জ্যোতির্ময় সিংহ মাহাতোকে।
শ্যামবাজার পাঁচ মাথার মোড়ের কাছে টানা ধর্না কর্মসূচি চালাতে চেয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিল বিজেপি। কলকাতা হাই কোর্ট এ দিন সেই অনুমতি দেওয়ায় আজ, বুধবার থেকে পাঁচ দিন ধর্না চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিজেপি। ধর্না-মঞ্চে আজ উপস্থিত থাকার কথা বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু ও রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের। প্রসঙ্গত, গত ১৬ অগস্ট শ্যামবাজারেই বিজেপির ধর্নার উদ্যোগ বানচাল করেছিল পুলিশ। হাই কোর্টের অনুমতি পাওয়ায় কাল, বৃহস্পতিবার বিজেপি মিছিলের কর্মসূচি নিয়েছে মৌলালি থেকে ধর্মতলার ডোরিনা ক্রসিং পর্যন্ত। যে পথে সম্প্রতি মিছিল করেন মুখ্যমন্ত্রী।
পথে রয়েছে কংগ্রেস ও বামেরাও। আর জি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ পাল ও কলকাতার নগরপাল বিনীত গোয়েলকে সিবিআই হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার দাবিতে মধ্য কলকাতা জেলা কংগ্রেসের ডাকে লালবাজার অভিযান ঘিরে এ দিন ধুন্ধুমার বেধেছিল ধর্মতলা এলাকার। জমায়েতের ডাক দেওয়া হয়েছিল টিপু সুলতান মসজিদের কাছে। সেখান থেকে মিছিল শুরুর আগেই মধ্য কলকাতা জেলা কংগ্রেসের সভাপতি সুমন পাল-সহ কয়েক জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এর পরে কংগ্রেসের কর্মী-সমর্থকেরা একাধিক দলে ভাগ হয়ে লালবাজারে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাঁদের সঙ্গে দফায়-দফায় ধস্তাধস্তি বাধে পুলিশের। বিচার চেয়ে প্রদেশ কংগ্রেসের সহ-সভাপতি মহম্মদ মোক্তারের নেতৃত্বে গার্ডেনরিচেও প্রতিবাদ মিছিল হয়েছে। পাশাপাশি, একই বিষয়ে এবং স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও পুলিশমন্ত্রীর পদত্যাগ-সহ কয়েক দফা দাবিকে সামনে রেখে লেনিন মূর্তি থেকে কলেজ স্কোয়ার পর্যন্ত বিক্ষোভ মিছিল করেছে সিটু, ইউটিইউসি,এআইটিইউসি, এআইসিসিটিইউ-সহ কেন্দ্রীয় শ্রমিক সংগঠনগুলি। মিছিল শেষে বক্তা ছিলেন সিটুর রাজ্য সম্পাদক অনাদি সাহু, এআইসিসিটিইউ-র বাসুদেব বসু প্রমুখ। নির্যাতিতার বাড়ির এলাকায় পানিহাটিতে মিছিল করেছে উত্তর ২৪ পরগনা জেলা বামফ্রন্ট, সেখানে ছিলেন সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী।