অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের শান্তিনিকেতনের বাড়ি ‘প্রতীচী’। ছবি: সংগৃহীত।
‘প্রতীচী’ বাড়ির জমি নিয়ে যে বিতর্ক দানা বেঁধেছে, তার নিষ্পত্তি করতে রাজ্য সরকার চাইলে জমি মাপজোক করে দেখতে পারে বলে জানাল বিশ্বভারতী। শুধু তাই নয়, কোনও ‘বিশেষ ব্যক্তিকে’ তাঁরা জমি-কাণ্ডে ‘ছাড়’ দেওয়া কথাও ভাবছেন না বলে জানিয়েছেন বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ।
নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের শান্তিনিকেতনের বাড়ি ‘প্রতীচী’র সীমানায় বিশ্বভারতীর নিজস্ব ১৩ ডেসিমেল জমিও ঢুকে গিয়েছে বলে সম্প্রতি অভিযোগ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এই বিষয়ে আইনের সাহায্য নিয়েই তিনি যা করার করবেন বলে জানিয়েছেন অমর্ত্যবাবু। শনিবার এক সাংবাদিক বৈঠকে বিশ্বভারতীর ভারপ্রাপ্ত কর্মসচিব অশোক মাহাতো বলেন, ‘‘বিশ্বভারতীর তরফে অভিযোগ আছে, তালিকা খুব লম্বা। তাতে ওঁর (অমর্ত্যবাবু) জমি যেমন আছে, তেমন আরও অনেকেরই জমি আছে। এর পরেও যদি কোনও রকমের নিশ্চয়তার দরকার পরে, তা হলে মাপজোক করে দেখা যেতেই পারে। মাপজোকের ব্যাপারে আমাদের আপত্তি নেই।’’
এই সূত্রেই কর্মসচিবের বক্তব্য, রাজ্যের ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের পক্ষ থেকে মেপে দেখলেই এই সমস্যার স্থায়ী নিস্পত্তি হতে পারে। তিনি বলেন, ‘‘উনি (অমর্ত্য সেন) উকিল মারফত বিশ্বভারতীকে একটি আইনি নোটিস পাঠিয়েছেন। তাই বর্তমানে এটা জমি জরিপের উপরেই নির্ভর করছে।’’ এখানেই না থেমে তাঁর বক্তব্য, ‘‘বিশ্বভারতী একটি প্রতিষ্ঠান, এখানে বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে বিশ্বভারতীর সম্পর্ক আছে। জমিজমা সংক্রান্ত সম্পর্কও আছে। সেখানে প্রফেসর সেন যেমন আছেন, তেমনই আরও অনেকেই আছেন। কিন্তু, ব্যক্তি বিষয়টা প্রতিষ্ঠানের উপর যেতে পারে না। আর পাঁচটা ক্ষেত্রে যা হবে, এ ক্ষেত্রেও তাই হবে।’’
আরও পড়ুন: বঙ্গ বিজেপি-র ‘ফাটল’ নাপসন্দ, ঐক্য প্রদর্শনের নির্দেশ অমিতের
আরও পড়ুন: মমতা-অভিষেকে আস্থা জানিয়ে সপরিবার গোয়া চললেন শতাব্দী
ডিসেম্বরে বিশ্বভারতীর অধ্যাপক সংগঠন ভিবিইউএফএ-র সভাপতি সুদীপ্ত ভট্টাচার্য অভিযোগ করেন, অধ্যাপক-অধ্যাপিকাদের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠক করেন উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী দাবি করেন, অমর্ত্যবাবু তাঁকে ফোন করে নিজেকে ‘ভারতরত্ন অমর্ত্য সেন’ বলে উল্লেখ করেছিলেন ও তাঁর ‘প্রতীচী’ বাড়ির সামনে থেকে হকার উচ্ছেদের বিরোধিতা করেন। সুদীপ্তবাবুকে ই-মেল করে এমন কোনও ঘটনাই ঘটেনি বলে জানান অমর্ত্যবাবু। এ দিন সে প্রসঙ্গও উঠেছে সাংবাদিক বৈঠকে।
বিশ্বভারতী আগে দাবি করেছিল, ২০১৯ সালের ২ জুন অথবা ১৪ জুন উপাচার্য দিল্লি থেকে কলকাতা ফিরছিলেন। কলকাতা বিমানবন্দর থেকে তিনি যখন বিশ্বভারতী ফিরছিলেন, তখন জনৈক অরবিন্দ তাঁকে ফোন করে বলেন উপাচার্যের বিশ্বভারতী ফেরার পথে অমর্ত্য সেন (ভারতরত্ন) তাঁর সঙ্গে কথা বলতে চান। এ দিনের বিবৃতিতে অবশ্য সময় হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘২০১৯ সালের জুন/জুলাই মাসে’। কর্মসচিব বলেন, ‘‘এই তথ্যপ্রযুক্তির যুগে কে কাকে ফোন করেছিলেন, তা সহজেই জানা যায়।’’ অমর্ত্যবাবুর ঘনিষ্ঠ মহল থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, এ সব বিষয়ে তাঁরা একটা শব্দও খরচ করতে রাজি নন। সম্প্রতি অধ্যাপক সুদীপ্তবাবুকে সাসপেন্ড করেছে বিশ্বভারতী। প্রতিবাদে সরব হয়েছে বহু মানুষ। বিশ্বভারতী এ দিন দাবি করেছে সুদীপ্তবাবু পাঠভবনের অধ্যক্ষার প্রতি ‘কুরুচিকর’ এবং ‘বিদ্বেষপূর্ণ’ মন্তব্য প্রচার করেছেন এবং অধ্যক্ষার নামে মিথ্যা অভিযোগ তুলে তা রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী-সহ অনেককে পাঠিয়েছেন। নিরপেক্ষ তদন্তের স্বার্থেই এই সাসপেনশন।