R G Kar Hospital Incident

আর জি করের আন্দোলনে ফিরেছে প্রতিবাদের সাহস

গত ১৯ সেপ্টেম্বর হুগলির পুরশুড়ায় প্লাবিত এলাকা পরিদর্শনে যাওয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সামনে ‘ত্রাণ নেই, জনপ্রতিনিধিদেরও পাত্তা নেই’ বলে সরব হন শ্রীরামপুর পঞ্চায়েতের শ্রীরামপুর গ্রামের বন্যাপীড়িতেরা।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৮:১৩
Share:

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

আর জি কর-আন্দোলন ফিরিয়েছে সাহস। জুগিয়েছে ভরসা। পথে নেমে অন্যায়ের প্রতিবাদের। রাজ্যের তিন জেলায় সাম্প্রতিক একাধিক ঘটনায় মিলেছে তেমন ইঙ্গিত, ধারণা রাজ্য রাজনীতির পর্যবেক্ষকদের একাংশের। সহমত বিরোধীরা।

Advertisement

গত ১৯ সেপ্টেম্বর হুগলির পুরশুড়ায় প্লাবিত এলাকা পরিদর্শনে যাওয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সামনে ‘ত্রাণ নেই, জনপ্রতিনিধিদেরও পাত্তা নেই’ বলে সরব হন শ্রীরামপুর পঞ্চায়েতের শ্রীরামপুর গ্রামের বন্যাপীড়িতেরা। তৃণমূল পরিচালিত ওই পঞ্চায়েত এলাকায় বর্ণালি মণ্ডল, পলাশ মণ্ডলদের বলতে শোনা যায়, “ভোটের সময় ছাড়া, তৃণমূলের কাউকে দেখা যায়নি। জলে ভাসছি, কেউ দেখতে আসেনি। একটা ত্রিপলও আসেনি।” সে সময় জেলার তৃণমূল নেতারা কিছুটা ধমক দেওয়ার সুরে বলেন, “পঞ্চায়েত প্রধান বা অঞ্চল সভাপতি কেউ আসেননি?” বর্ণালিকে বলতে শোনা যায়, “কেউই আসেননি।” মুখ্যমন্ত্রী সরাসরি উত্তর দেননি। তবে পরদিন সকালে রান্না করা খাবার, হাঁড়ি, বাসন-সহ ত্রাণ পৌঁছে যায় এলাকায়। মুখ্যমন্ত্রীকে ঘিরে কথা বলতে ভয় করেনি? এলাকাবাসী বলেন, “ভয় কিসের? আর জি কাণ্ডের পরে, মুখ্যমন্ত্রী এখন সবার সব কথা শুনতে চাইছেন, দেখছি।” তাঁরা জানান, মুখ্যমন্ত্রী চলে যাওয়ার পরে শাসক দলের কিছু নেতা এসে জানতে চান, কেন এ সব বলতে গেলেন? বর্ণালি বলেন, “তাঁদের বলেছি, আপনারা আসেননি, ত্রাণ পাইনি— সেটুকুই জানিয়েছি।”

বানভাসিদের এমন ক্ষোভ সামনে এসেছে পূর্ব মেদিনীপুরে পাঁশকুড়াতেও। গত সপ্তাহে পাঁশকুড়ার বন্যা-দুর্গত এলাকায় মুখ্যমন্ত্রী পৌঁছনোর ঠিক আগে, তাঁর নিরাপত্তায় মোতায়েন পুলিশকর্মীদের ঘিরে ত্রাণের দাবিতে বিক্ষোভ হয়। পরে, জাতীয় সড়ক অবরোধ করেন দুর্গতেরা। তৃণমূলের পঞ্চায়েত এলাকাতেই চলে বিক্ষোভ। পাঁশকুড়ার পশ্চিম ন্যাকড়ার বাসিন্দা শেখ হায়দার আলি বলেন, “সাধারণত রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ-আন্দোলন করতে গেলে, শাসক দলের রোষের মুখে পড়তে হয়। কিন্তু আর জি করের আন্দোলন ভয় দূরে ঠেলে, আমাদের প্রতিবাদ করতে শিখিয়েছে।” পাঁশকুড়ারই পাতন্দা গ্রামের বাসিন্দা উমারানি সাউ জানান, আর জি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদ জানাতে তাদের এলাকায় একটি মঞ্চ গড়ে ওঠে। তিনি বলেন, “দু’দিন প্রতিবাদ মিছিলে হেঁটে মনে সাহস সঞ্চয় হয়েছে। সম্প্রতি আমাদের এলাকায় একাধিক শ্লীলতাহানির ঘটনা ঘটেছে। সে সবের প্রতিবাদেও আমরা পথে নেমেছি। আর জি করের প্রতিবাদ জোট বাঁধতে শিখিয়েছে।”

Advertisement

এলাকায় আবাস যোজনায় দুর্নীতির প্রতিবাদে মানুষের সরব হওয়ার পিছনেও আর জি করের ঘটনার প্রতিবাদ-আন্দোলনের ভূমিকা রয়েছে, বিশ্বাস সুফিয়া খাতুন, মহম্মদ কবিরদের। তাঁদের এলাকা, উত্তর দিনাজপুরের ইসলামপুরের কমলাগাঁও সুজালি পঞ্চায়েতে শাসক দলের সদ্য প্রাক্তন নেত্রী তথা পঞ্চায়েত প্রধানের বিরুদ্ধে আবাস প্রকল্পে ঘর পাইয়ে দেওয়ার নামে নেওয়া ‘কাটমানি’ ফেরতের দাবিতে আন্দোলন হয়েছে। আন্দোলনের জেরে, প্রধান এক দিনে প্রায় শ’দুয়েক লোককে সাড়ে ১০ হাজার টাকা করে ফেরাতে বাধ্য হন। সুফিয়া, কবির বলেন, “আর জি কর-কাণ্ড শুধু ধর্ষণ বা খুন নয়, সে সুবাদে রাজ্য জুড়ে দুর্নীতির প্রতিবাদে মানুষ রাস্তায় নেমেছেন। আমরাও তাতে ভরসা পেয়েছি।”

রাজ্য জুড়ে ক্ষোভের জমি আগেই ছিল। আর জি করের ঘটনা এবং তার জেরে প্রতিবাদ—সে ক্ষোভের আঁচ বাড়িয়ে দিয়েছে বলে মনে করছে বিরোধীরা। রাজ্য বিজেপির প্রধান মুখপাত্র তথা রাজ্যসভার সাংসদ শমীক ভট্টাচার্যের বক্তব্য, “মানুষের মধ্যে পুঞ্জীভূত ক্ষোভ ছিল। আর জি করের ঘটনা অনুঘটকের কাজ করেছে। প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতি আর সর্ব স্তরের লুট তৃণমূলের কর্মসূচি। তার বিরুদ্ধে সামাজিক শক্তি তৈরি হয়েছে।” সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর মতে, “এখন মানুষ নতুন উদ্যমে প্রতিবাদ করছেন। সাম্প্রতিক কিছু ঘটনা তাঁদের উৎসাহ বাড়িয়েছে। দুর্নীতির প্রাতিষ্ঠানিক চেহারাও ধরা পড়ছে।”

তবে তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষের দাবি, “এত বড় দল, রাজ্য সরকারের এত কাজ— কোথাও কেউ দুর্নীতি করে থাকলে সব সময় নজরে আসে না। কিন্তু এ ব্যাপারে আপস করা হচ্ছে না। যখনই এ রকম কিছু সামনে আসছে, দল ও সরকার ব্যবস্থা নিয়েছে।” অপপ্রচারের অভিযোগ করে তিনি বলেন, “এখন সমাজমাধ্যমে অনেক কথা বলা হচ্ছে। তার সবই সত্য নয়। সেটাও বুঝতে হবে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement