Bengal BJP Survey

বঙ্গ বিজেপিতে রদবদল কি এ বার সমীক্ষার ভিত্তিতে? সভাপতি ও সম্ভাব্য ‘মুখ’ নিয়ে রিপোর্ট মোদীর বৃত্তে

পরের বিধানসভা নির্বাচন যখন এক বছর দূরে, তখন বঙ্গ বিজেপির সাংগঠনিক রদবদলের উপরেও সমীক্ষা রিপোর্টের ছায়া পড়ার সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে বলে বিজেপি সূত্রের খবর।

Advertisement

ঈশানদেব চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০৯:১৩
Share:
Survey Reports becoming important for imminent Bengal BJP rejig? Reports from agency reaches Modi’s close circle, say sources

গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।

পরবর্তী রাজ্য সভাপতি কে? আপাতত একগুচ্ছ নাম ভেসে বেড়াচ্ছে রাজ্য বিজেপিতে। প্রত্যেক নামের ‘প্লাস-মাইনাস’ নিয়ে তুফানি তর্কও হচ্ছে। কিন্তু সে তুফানের উল্টো মেরুতে দাঁড়িয়ে নিঃশব্দে রিপোর্ট তৈরি করছে একাধিক সমীক্ষক সংস্থা। এত দিন শুধু ভোটের টিকিট নির্ধারণের ক্ষেত্রে সমীক্ষার উপর ভরসা করতেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। এ বার সাংগঠনিক সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রেও সমীক্ষার গুরুত্ব বাড়ছে। পশ্চিমবঙ্গ বিজেপিতে স্রোত, পাল্টা স্রোত, চোরাস্রোতের জটিল আবর্তই তার প্রধান কারণ বলে নয়াদিল্লি সূত্রের দাবি।

Advertisement

বছরভর বিভিন্ন সমীক্ষক সংস্থাকে রাজ্যে রাজ্যে সক্রিয় রাখেন নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহেরা। নির্বাচনের প্রার্থী বাছার আগে সেই সমস্ত সংস্থার রিপোর্টে চোখ বোলানো হয়। পশ্চিমবঙ্গে ২০২১ এবং ২০২৪-এর বিধানসভা এবং লোকসভা ভোটে প্রার্থিতালিকার উপরে ওই সব সমীক্ষার ‘ছায়া’ পড়েছিল বলে রাজ্য বিজেপির একাংশের বক্তব্য। পরের বিধানসভা নির্বাচন যখন এক বছর দূরে, তখন বঙ্গ বিজেপির সাংগঠনিক রদবদলের উপরেও সমীক্ষা রিপোর্টের ‘প্রভাব’ পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে বিজেপি সূত্রের দাবি।

পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির উপরে স্বয়ং শাহের নজরদারি থাকে। অন্যান্য রাজ্যের মতো এ রাজ্যের জন্যও কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষকেরা রয়েছেন। বাংলার দায়িত্বপ্রাপ্ত পর্যবেক্ষকদের মধ্যে একাধিক এমন নাম রয়েছে, যাঁরা বিজেপির সর্বভারতীয় সদর দফতরে ‘প্রভাবশালী’। তার পরেও শাহ বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে বঙ্গ বিজেপির উপর নজর রাখেন। অহমদাবাদ-ভিত্তিক একটি সমীক্ষক তথা রাজনৈতিক রণকৌশল নির্ধারক সংস্থা পশ্চিমবঙ্গে সক্রিয়। তারা বঙ্গ রাজনীতির খুঁটিনাটি সম্পর্কে সমান্তরাল ভাবে শাহকে রিপোর্ট দিয়ে থাকে বলে বিজেপি সূত্রেই জানা যায়। কিন্তু এ বার শুধু শাহ নয়, মোদীর কাছেও বঙ্গের পরিস্থিতি নিয়ে আলাদা সমীক্ষা রিপোর্ট পৌঁছোচ্ছে বলে বিজেপির একাংশের দাবি। সে রিপোর্টে পশ্চিমবঙ্গে সাংগঠনিক রদবদল সংক্রান্ত কিছু সুনির্দিষ্ট পরামর্শও রয়েছে।

Advertisement

বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে যে সংস্থার রিপোর্ট এত দিন সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পেয়ে এসেছে, তাদের বিধিবদ্ধ দফতর অহমদাবাদের মণিনগরে। গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন যে মণিনগর মোদীর নিজের আসন ছিল। কিন্তু মণিনগর-ভিত্তিক সংস্থার রিপোর্ট নয়, বরং কর্নাটক-ভিত্তিক এক সমীক্ষক সংস্থার পরামর্শ মোদীর ঘনিষ্ঠ বৃত্তে পৌঁছেছে বলেই নয়াদিল্লি সূত্রের দাবি। ওই সমীক্ষক সংস্থাটি স্বাধীন ভাবেই দেশের নানা অংশে কাজ করে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ওই সংস্থার রিপোর্ট মোদীর ঘনিষ্ঠ বৃত্তে পৌঁছয়। পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনের এক বছর আগে এ রাজ্যে সাংগঠনিক দায়দায়িত্বের বিন্যাস সম্পর্কে পরামর্শও সেই বৃত্তে পৌঁছেছে বলে নয়াদিল্লি সূত্রের বক্তব্য।

পরামর্শের মধ্যে অন্যতম হল দলের গঠনতন্ত্র বা গৃহীত নীতি না ভেঙেই ক্ষমতার ‘অভিন্ন ভরকেন্দ্র’ তৈরি করা। আপাতত বঙ্গ বিজেপিতে তেমন ভরকেন্দ্র একাধিক। রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারকে ঘিরে একটি অংশ আবর্তিত হয়। বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে ঘিরে অন্য একটি আবর্ত সক্রিয়। প্রাক্তন সভাপতি দিলীপ ঘোষেরও নিজস্ব বৃত্ত রয়েছে। সংগঠন সামলান যে দুই নেতা, তাঁদের ঘিরেও অনেকের সমাবেশ। এতগুলি ভরকেন্দ্র থাকলে বঙ্গ বিজেপির পক্ষে ‘ছন্নছাড়া’ ভাবমূর্তি কাটিয়ে ওঠা কঠিন। তাই গঠনতন্ত্র এবং নীতি অক্ষুণ্ণ রেখে এমন এক বন্দোবস্ত তৈরির পরামর্শ কর্নাটক-ভিত্তিক সমীক্ষক সংস্থা দিয়েছে, যাতে ‘সাপও মরে, লাঠিও না ভাঙে’।

এ রাজ্যে বিজেপি পরিষদীয় দলের একাধিক সদস্য একান্ত আলোচনায় বলে থাকেন, শুভেন্দুকে সভাপতি করা হলে সমান্তরাল লবির অবকাশ থাকবে না। কিন্তু সে পথে অন্তরায় বিজেপির ‘এক ব্যক্তি-এক পদ’ নীতি। বিরোধী দলনেতা এবং রাজ্য সভাপতি, দুই পদ একই ব্যক্তিকে দিলে যে নীতি ক্ষুণ্ণ হয়। তাই সমীক্ষক সংস্থার পরামর্শ, সভাপতি পদে এমন কোনও নাম বাছা হোক, যেটি আগামী এক বছরে ক্ষমতার সমান্তরাল ভরকেন্দ্র হয়ে উঠবে না। জনজাতি সমাজ বা প্রান্তিক শ্রেণি থেকে আসা এক সাংসদকে রাজ্য বিজেপির সভাপতি করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে বলে নয়াদিল্লি সূত্রের দাবি। বিধানসভা নির্বাচনের এক বছর আগেই ‘প্রচার কমিটি’ (ক্যাম্পেন কমিটি) তৈরি করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর ‘মুখ’ হিসেবে কোনও নাম ঘোষণা না করলেও প্রচার কমিটির মাথায় সবচেয়ে প্রভাবশালী মুখকে (অনেকের মতে, শুভেন্দু) বসানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। সেটি বিজেপির মূল গঠনতন্ত্রে উল্লিখিত কোনও পদ না হওয়ায় যে কোনও নামই বেছে নেওয়া যেতে পারে। তাতে ‘এক ব্যক্তি-এক পদ’ নীতি ক্ষুণ্ণ হবে না। রাজ্য বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি দিলীপের গুরুত্ব বাড়ানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। রাঢ়বঙ্গ তথা জঙ্গলমহলে সংগঠনকে ২০১৯-এর অবস্থায় ফেরানোর দায়িত্ব তাঁকেই দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে সংস্থাটি।

নয়াদিল্লির বিজেপি সূত্রের দাবি, ওই পরামর্শ মোদীর ঘনিষ্ঠ বৃত্তে পৌঁছেছে। কিন্তু মোদী কি আদৌ সাংগঠনিক সিদ্ধান্তের বিষয়ে এতটা নাক গলাবেন? কারণ, এ সব বিষয় সাধারণত শাহ দেখেন। তবে বিজেপি সূত্রের দাবি, বছরভর শাহ, নড্ডা বা বিএল সন্তোষই সাধারণত এ সব সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু নির্বাচন কাছে চলে এলে মোদী নিজেও পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝে ‘সুনির্দিষ্ট বার্তা’ দেন। পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে মোদী সেই ‘সুনির্দিষ্ট’ সক্রিয়তার প্রয়োজন বোধ করছেন কি না, সে বিষয়ে কেউ নিশ্চিত নন। তাই কর্নাটক-ভিত্তিক সমীক্ষকের পরামর্শ মানা হবে কি না, তা-ও স্পষ্ট নয়। তবে সমীক্ষকের পরামর্শ থেকে স্পষ্ট, সর্বোচ্চ নেতৃত্ব বঙ্গ বিজেপির একত্রীকরণকেই আপাতত সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement