Locket chatterjee

জয়েই বিপত্তি ছিল! দলের অন্দরে লাগাতার ‘গুগলি’ সয়ে এ বার হুগলি থেকে কি সরতে চাইছেন লকেট!

বিধানসভা বা লোকসভা, কোনও নির্বাচনই আর হুগলি থেকে লকেট লড়তে চান না বলে বিজেপি সূত্রের খবর। তবে তৃণমূলের কারণে নয়, বিজেপিরই একাংশ এর জন‍্য দায়ী বলে বিজেপি সূত্রের দাবি।

Advertisement

ঈশানদেব চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০৮:৫৭
Share:
Googly in Hooghly! BJP leader Locket Chatterjee wants to step aside from the constituency she won in 2019? Dgtl

হুগলির প্রাক্তন বিজেপি সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়। —ফাইল ছবি।

প্রতিপক্ষের দুর্ভেদ্য ঘেরাটোপ তাঁকে এক সময় আটকাতে পারেনি। ভোটের দিনে ধনেখালিতে পা রেখে ঘেরাও হয়ে গিয়েছিলেন এলাকার দোর্দণ্ডপ্রতাপ তৃণমূল বিধায়ক অসীমা পাত্রের দলবলের হাতে। কিন্তু সে ব্যূহ তাঁর হুগলি-বিজয় আটকাতে পারেনি। পরবর্তী পাঁচ বছরে কখনও প্রশাসনিক বাধা, কখনও কল‍্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘দাপট’ তাঁর কাজের ক্ষেত্রে অন্তরায় হয়েছে বলে বার বার অভিযোগ করেছেন তিনি। তবু হাল ছাড়েননি, হুগলি ছাড়েননি। কিন্তু রাজ‍্য বিজেপির অন‍্যতম সাধারণ সম্পাদক তথা প্রাক্তন সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায় এ বার সম্ভবত হুগলি থেকে দূরে সরতে চাইছেন। বিধানসভা বা লোকসভা, কোনও নির্বাচনই আর হুগলি থেকে তিনি লড়তে চান না বলে বিজেপি সূত্রের খবর। তবে তৃণমূলের কারণে নয়, বিজেপিরই একাংশ এর জন‍্য ‘দায়ী’ বলে বিজেপি সূত্রের দাবি।

Advertisement

দিন কয়েক আগেই পূর্ব বর্ধমানের তালিতে আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবত সমাবেশ করেছেন। রাজ‍্য বিজেপির সংগঠন যাঁরা সামলান, তাঁদের সিংহভাগই সেখানে হাজিরা দিয়ে এসেছেন। সমাবেশে শুধু মধ্যবঙ্গের স্বয়ংসেবকদেরই ডাকা হয়েছিল। তাই বিজেপি নেতাদের মধ্যে যাঁরা মধ‍্যবঙ্গের স্বয়ংসেবক বা যাঁরা ওই এলাকায় রাজনীতি করেন, তাঁরা তো হাজির ছিলেনই। উত্তরবঙ্গ এবং দক্ষিণবঙ্গের বিজেপি নেতাদেরও কেউ কেউ ভাগবতের সমাবেশে হাজির হয়েছিলেন। মধ‍্যবঙ্গের নেতা-নেত্রীদের মধ্যে ‘উল্লেখযোগ্য’ অনুপস্থিতি শুধু লকেটের।

রাজ‍্য বিজেপিতে এই মুহূর্তে যে পাঁচ জন সাধারণ সম্পাদক রয়েছেন, তাঁদের মধ্যে তিন জনেরই রাজনৈতিক পৃষ্ঠভূমি মধ‍্যবঙ্গ। তাঁরা হলেন জ্যোতির্ময় মাহাতো, লকেট চট্টোপাধ্যায় এবং অগ্নিমিত্রা পাল (জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায় দক্ষিণবঙ্গের স্বয়ংসেবক, দীপক বর্মণ উত্তরবঙ্গের স্বয়ংসেবক)। জ্যোতির্ময় শুধু বিজেপি নেতা নন, তিনি স্বয়ংসেবকও। তাই তালিতের সাই ময়দানে যে বিজেপি গ‍্যালারি তৈরি হয়েছিল, তার সামনের সারিতেই জ্যোতির্ময় ছিলেন। অগ্নিমিত্রা স্বয়ংসেবক না হয়েও উপস্থিত ছিলেন। প্রত‍্যাশিত হওয়া সত্ত্বেও ছিলেন না শুধু লকেট। চর্চা শুরু হয়েছে সেই অনুপস্থিতি নিয়েই।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইনকে লকেট বলেছেন, “আমি অসুস্থ ছিলাম। ভাইরাল জ্বরে দিন তিনেক বিছানা ছেড়ে উঠতে পারিনি। আমি জানিয়ে দিয়েছিলাম জ্বরের কারণে যেতে পারছি না।” কিন্তু লকেটের অনুপস্থিতির কারণ কি শুধু সেটুকুই? না কি হুগলি তথা মধ‍্যবঙ্গই তাঁর একমাত্র রাজনৈতিক পৃষ্ঠভূমি, এমন কোনও পরিচয় তিনি আর বহন করতে চাইছেন না?

২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে হুগলি লোকসভা আসনে লকেট পদ্মফুলের প্রার্থী হন। অনেককেই চমকে দিয়ে রত্না দে নাগের মতো পোড়খাওয়া তৃণমূল নেত্রীকে হারিয়ে দিয়েছিলেন লকেট। সে বারই ভোটের দিন ধনেখালিতে ঢুকে অসীমার দলবলের হাতে ঘেরাও হয়ে গিয়েছিলেন। তবু ভোটের ফলাফলে শেষ হাসি তিনিই হেসেছিলেন। তবে নির্বাচনী রাজনীতিতে এখনও পর্যন্ত সেটিই লকেটের শেষ হাসি হয়ে রয়ে গিয়েছে। কারণ ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনে নিজের লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত চুঁচুড়া বিধানসভা আসনে লড়ে তিনি হেরে যান। ২০২৪ সালে লোকসভা নির্বাচনেও হুগলি থেকে হারেন।

বিজেপি সূত্রের দাবি, ২০১৯ সালে হুগলির অনেক নেতাই ভাবতে পারেননি যে, ওই আসন জেতা সম্ভব। তাই লকেট প্রার্থী হওয়ায় তাঁরা চিন্তিত ছিলেন না। বাইরের জেলা থেকে কেউ এসে তাঁদের ‘নেত্রী’ হয়ে যাবেন, এমন আশঙ্কা তাঁদের ছিল না। কিন্তু লকেটের জয়ের পরে তাঁদের মনে সেই আশঙ্কা তৈরি হয়। তাই দলের অন্দরে অসহযোগিতা ও প্রতিরোধের রাজনীতি শুরু হয়ে যায়। কোন্দলের কারণে লকেটের হুগলি-ত্যাগের তত্ত্ব নিয়ে হুগলির একাধিক বিজেপি নেতার প্রতিক্রিয়াও ‘তাৎপর্যপূর্ণ’। বিষয়টি নিয়ে তাঁরা মন্তব্যই করতে চাইছেন না। ‘কোনও কোন্দল নেই’ অথবা ‘লকেট হুগলিতেই থাকছেন, কোথাও যাচ্ছেন না’, এটুকু মন্তব্যও হুগলির প্রভাবশালী বিজেপি নেতাদের মুখে শোনা যাচ্ছে না।

লকেট নিজে অবশ্য এ প্রসঙ্গে মুখ খুলতে দ্বিধাহীন। তাঁর বক্তব্য, ‘‘আমায় শুধু হুগলিতেই রাজনীতি করতে হবে বা শুধু হুগলি জেলা থেকেই ভোটে লড়তে হবে, এমন ভাবা হচ্ছে কেন? আমি তো রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক। আমি তো সারা রাজ্যেই দলের জন্য কাজ করতে পারি। ভোটে লড়তে হলে হুগলিতেই লড়তে হবে, এমন কোনও বাধ্যবাধকতা তো নেই।’’ তা হলে কি জল্পনা সত্যি? হুগলির অভিজ্ঞতা কি এতই তিক্ত যে, কিছুতেই আর হুগলিমুখো হতে চান না এলাকার প্রাক্তন সাংসদ? তেমন কোনও মন্তব্য লকেট করছেন না। তবে বলছেন, ‘‘আমি হুগলির সাংসদ ছিলাম ঠিকই। কিন্তু বাইরে থেকেই তো সেখানে লড়তে গিয়েছিলাম। সেখানকার মানুষ ভোট দিয়ে জিতিয়েছিলেন। তাই পাঁচ বছর তাঁদের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেছি। কিন্তু দল আমাকে যে অন্য জেলা থেকে হুগলিতে পাঠিয়েছিল, তা-ও তো ঠিক।’’

অনেকে বলছেন, এই মন্তব্যেই স্পষ্ট আভাস রয়েছে যে, লকেট আর হুগলি আঁকড়ে থাকতে চাইছেন না। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগেও লকেটের হুগলি-ত্যাগের সম্ভাবনা নিয়ে জল্পনা জোরদার হয়েছিল। বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছিল, বাঁকুড়া বা বর্ধমান-দুর্গাপুরের মতো আসন লকেটের পছন্দের। শেষ পর্যন্ত অবশ্য জল সে দিকে গড়ায়নি। হুগলিতেই লকেটকে লড়তে হয়। সেই লড়াইয়ের অভিজ্ঞতা এত ‘মধুর’ যে, লকেট এখন নির্দ্বিধায় বলে দিচ্ছেন, তিনি হুগলির কেউ নন। বাইরে থেকেই গিয়েছিলেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement