শবর গ্রাম। ফাইল চিত্র।
ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট না থাকায় একশো দিনের কাজ পাচ্ছেন না— শবর গ্রামে গিয়ে এমনই অভিযোগ শুনলেন রাজ্য অনগ্রসর শ্রেণিকল্যাণ দফতরের প্রতিনিধিরা। বৃহস্পতিবার বাঁকুড়ার রানিবাঁধ ব্লকের বিভিন্ন এলাকায় গিয়েছিল ওই দলটি। সেখানে কথা বলার সময়ে তাঁদের কানে ওঠে এমন কিছু অভিযোগ। নবান্ন সূত্রের খবর, আজ, শুক্রবার দফতরের সচিবের কাছে দলটির রিপোর্ট দেওয়ার কথা।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যাচ্ছে, কলকাতার কাঁকুড়গাছির কালচারাল রিসার্চ ইনস্টিটিউটের চার জন ওই প্রতিনিধি দলে রয়েছেন। বুধবার তাঁরা বাঁকুড়ায় পৌঁছন। ওই দিনই রাইপুরের সরসবেদিয়া আর সাগরভাঙা এলাকার শবর পাড়ায় গিয়েছিলেন।
বৃহস্পতিবার রাজ্যের প্রতিনিধিরা যান রানিবাঁধ ব্লকে। প্রথমে পরিদর্শন করেন শবর গার্লস হস্টেল। তার পরে হাজির হন ঘোড়াডোবা গ্রামের শবরপাড়ায়।
প্রশাসন সূত্রের খবর, ওই পাড়ার বাসিন্দারা অভিযোগ করেন, তাঁরা একশো দিনের কাজ পাচ্ছেন না। প্রতিনিধিরা জানতে চান, তাঁদের কি ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট রয়েছে? অনেকেই জানান, নেই। জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক সমস্যাটি মেনে নিয়ে বলেন, “ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট না থাকলে একশো দিনের কাজের টাকা দেওয়া যায় না। এই জন্য কিছু শবর পরিবারকে একশো দিনের কাজ দেওয়া যাচ্ছে না।”
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, শুধু ঘোড়াডোবা নয়, রানিবাঁধ ব্লকের আরও কয়েকটি গ্রামের কিছু শবর পরিবারও ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট না থাকায় একশো দিনের কাজ পাচ্ছেন না। ঘোড়াডোবা থেকে প্রতিনিধি দলটি গিয়েছিল রানিবাঁধের কতরো গ্রামে। সেখানে শবর পরিবারগুলি এলাকায় পুকুর খোঁড়া আর গ্রামে পাকা রাস্তা গড়ে দেওয়ার দাবি জানান।
রানিবাঁধের শবর গার্লস হস্টেলটি অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দফতর পরিচালিত। ওই হস্টেলে ১০০ জন ছাত্রী রয়েছে। তাদের মধ্যে ১৭ জন শবর পরিবারের। হস্টেলের পরিকাঠামো নিয়ে বেশ কিছু অভিযোগ এ দিন প্রতিনিধিদের কাছে তুলে ধরা হয় বলে খবর।
হস্টেলের এক কর্মী বলেন, “সাবমার্সিবল পাম্পের জলে প্রচুর আয়রন থাকে। দফতরে জানানোর পরে একটা পিউরিফায়ার দেওয়া হয়েছিল। তবে গত কয়েক মাস ধরে সেটাও খারাপ হয়ে পড়ে রয়েছে।’’ এখন মাঝেমধ্যেই ছাত্রীরা পেটের সমস্যায় ভোগে বলে দাবি তাঁর। হস্টেলের শৌচাগারেও জলের সমস্যা রয়েছে বলে এ দিন প্রতিনিধিদের জানানো হয়েছে। অভিযোগ করা হয়েছে, এর জন্য ছাত্রীদের বিভিন্ন রকমের সমস্যা হয় রোজ। এ দিন প্রতিনিধিরা হস্টেলের আবাসিকদের সঙ্গেও কথা বলেছেন বলে জানা গিয়েছে।
জেলার অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দফতরের আধিকারিক কালীপদ সিংহ বলেন, “রাজ্যের প্রতিনিধিরা শবর পাড়াগুলি ঘুরে দেখছেন। আমরা প্রয়োজনীয় সাহায্য করছি।” মুখ খুলছেন না প্রতিনিধিরাও। তাঁদের মধ্যে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জন বলেন, ‘‘আমরা কথা বলে যে সমস্যার কথা জানতে পারব, সে সব সরাসরি রাজ্যে জানাব।’’
অবশ্য এই ব্যাপারে তোপ দাগতে ছাড়ছেন না বিরোধীরা। বিজেপির রাজ্য নেতা সুভাষ সরকার বলেন, “এই অভিযোগ ফের প্রমাণ করল রাজ্য সরকার প্রত্যন্ত এলাকার মানুষের খবর ঠিক ভাবে রাখছে না। প্রশাসনেরই উচিত দায়িত্ব নিয়ে শবর পরিবারগুলির ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলে তাঁদের একশো দিনের কাজ দেওয়া।”
তবে এ দিন সমস্যা মেটানোর আশ্বাস দিয়েছেন বাঁকুড়া জেলা পরিষদের সভাধিপতি মৃত্যুঞ্জয় মুর্মু। তিনি বলেন, “জেলার কোন কোন এলাকার শবর পরিবারের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নেই তা খোঁজ নিয়ে দেখছি। আমরা সবার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলিয়ে একশো দিনের কাজ দেওয়ার ব্যবস্থা করব।”