সুরিন্দর সিংহ বাগ্গা এবং অরিজিৎ সিংহ। — ফাইল চিত্র।
ছেলেবেলার শীতের স্মৃতি অনেক আছে। তবে বয়সের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে শীতের কাতরতা। তবে এই বয়সে এসে কৈশোর, তরুণ বয়সর শীতের অনুভূতি, সুখস্মৃতির কথা বারবার ভেসে আসে মনে। খুব মনে পড়ে শৈশবের সেই দিনগুলিও। সেই সময় শীতকে যথার্থই উপভোগ করেছি। এখন আমার বয়স ষাট পেরিয়েছে। গত কয়েক দিন ধরে শীতে জবুথবু অবস্থা। এখন তীব্র শীত পড়লে মনে হয়, কবে আবার স্বাভাবিক তাপমাত্রা ফিরবে।
ছোটবেলায় শীতের তোয়াক্কা করিনি কোনওদিন। এমনও দিন গিয়েছে, প্রবল শীতেও আদুর গায়ে খেলাধুলো করেছি। এ নিয়ে মা-বাবার কাছে বহুবার বকুনিও খেয়েছি। সেই সব দিনগুলি এখনও স্মৃতির মনিকোঠায় উজ্জ্বল। স্মৃতি থেকে সেই শৈশবের দিনগুলি মুছে যায়নি। আমার মতো সোমুও (অরিজিৎ সিংহ) কোনদিনও শীতকাতুরে ছিল না। জিয়াগঞ্জে গঙ্গার পাশেই বাড়ি হওয়ার সুবাদে শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা আমরা বাবা ও ছেলে দু’জনে প্রতিদিন গঙ্গায় স্নান করতাম। সোমু একটু বড় হলে নিজেই গঙ্গায় স্নান করতে চলে যেত। ঘণ্টার পর ঘণ্টা গঙ্গায় বন্ধুদের সঙ্গে সাঁতার কাটত ও। এ নিয়ে ওর মা কম রাগারাগি করেননি সেই সময়। মাঝেমধ্যে ঠান্ডাও লাগিয়ে ফেলত। সর্দি-কাশিতে ভুগত। তবু প্রতিদিন ওর গঙ্গায় স্নান করতে যাওয়া বন্ধ হয়নি। তবে গঙ্গায় অতক্ষণ ধরে ছেলে সাঁতার কাটায় বহুবার বিচলিত হয়ে পড়তে দেখেছি আমার স্ত্রীকে। বহু ডাকাডাকির পর মায়ের বাধ্য ছেলের মতো গঙ্গা থেকে উঠে আসত সোমু। শীতের সময় পিঠেপুলির স্বাদও মুখে লেগে আছে। আমি নিজে পঞ্জাবি। তবে আমার স্ত্রী বাঙালি হওয়ায় বাড়িতে ও পিঠে তৈরি করত। সেই পিঠে যে কী সুস্বাদু, তা বলে বোঝাতে পারব না। বাড়ির সকলে জমিয়ে পিঠে খেতাম। দিনের বেশিরভাগ সময়টায় ছেলে পড়াশোনা আর গানবাজনা নিয়ে থাকত। আমি কাতর হয়ে পড়লেও সোমু শীতকালটা রীতিমিতো উপভোগ করে। শীত পড়লেই পরিবার নিয়ে প্রতি বছর বেড়াতে বেড়িয়ে পড়তাম। দিঘা, পুরীর উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়তাম। শীত চলে গেলে যেতাম দার্জিলিং কিংবা সিকিমের পথে। সোমুর পাহাড়, সমুদ্র দু’টোই প্রিয়। শীতকালে রকমারি আনাজ বাজারে মেলে। এটাও শীতের অন্যতম পাওনা।
লেখক: ব্যবসায়ী তথা গায়ক অরিজিৎ সিংহের বাবা।