বাঁ দিক থেকে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। — ফাইল চিত্র।
বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের আবেদন ফেরত পাঠাল সুপ্রিম কোর্ট। অভিষেকের আবেদনটি শুনানির তালিকায় আসবে না বলে জানিয়েছেন শীর্ষ আদালতের অ্যাসিস্ট্যান্ট রেজিস্ট্রার। সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার পর্যবেক্ষণে জানিয়েছেন, অভিষেকের আবেদনের কোনও যুক্তিসঙ্গত কারণ নেই। অভিষেকের আইনজীবী সঞ্জয় বসু বলেন, ‘‘নতুন করে আমার মক্কেলকে আবেদন করার কথা জানিয়েছে শীর্ষ আদালত। আমরা সেই অনুযায়ী নতুন করে আবেদন করার পদক্ষেপ করছি।’’
শীর্ষ আদালতের নির্দেশে জানানো হয়েছে, ২০২৩ সালের ২৮ এপ্রিল সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে অভিষেকের মামলাগুলি কলকাতা হাই কোর্টের অন্য বিচারপতিকে দেওয়া হয়েছে। সে কারণেই অভিষেক এখন যে আর্জি জানিয়েছেন, তা আর ‘গ্রহণযোগ্য নয়’। একই সঙ্গে আদালত জানিয়েছে, ওই আবেদন ‘ভুল ধারণাবশত’ এবং ‘ভুল জায়গায়’ দাখিল করা হয়েছে। এর কোনও ‘যুক্তি নেই’।
এ প্রসঙ্গে অভিষেকের আইনজীবীর বক্তব্য, ১৮ জানুয়ারি, বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার এক নির্দেশে জানিয়েছেন, অভিষেকের আবেদন ফেরত পাঠানো হয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘অভিষেকের অভিযোগ খতিয়ে দেখার সময় শীর্ষ আদালতের পর্যবেক্ষণ, ২০২৩ সালের ওই স্পেশাল লিভ পিটিশন (এসএলপি)-এর শুনানি ইতিমধ্যে চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে। শীর্ষ আদালতের আরও পর্যবেক্ষণ, ২০২৩ সালের ২৮ এপ্রিল যে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, তা ইতিমধ্যে কার্যকর করা হয়েছে। বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাস থেকে মামলা সরানো হয়েছে। রেজিস্ট্রার নতুন করে পদক্ষেপ করার কথা জানিয়েছেন। স্বাধীন ভাবে আইনি প্রক্রিয়ায় মাধ্যমে অভিযোগ জানানোর কথাও বলেছেন।’’ এর পরেই আইনজীবী বলেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্টের সামনে নতুন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অভিযোগ জানানোর পদক্ষেপ করছি।’’
গত ১০ জানুয়ারি বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন তৃণমূল সাংসদ অভিষেক। বিচারপতির গঙ্গোপাধ্যায়ের সাম্প্রতিক কিছু মন্তব্য নিয়ে শোরগোল তৈরি হয়। সম্প্রতি বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের অপসারণ চেয়ে একটি চিঠিও জমা পড়ে শীর্ষ আদালতে। এর মধ্যেই হাই কোর্ট থেকে বেরনোর সময় সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে অভিষেকের সম্পত্তির হিসাব ও তার উৎস জানতে চান বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। তা নিয়ে বিতর্কও হয়। এক জন বিচারপতির প্রকাশ্যে এমন মন্তব্যের নিন্দা করেন শাসক দলের একাংশ। এই আবহে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন অভিষেক।
তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক সুপ্রিম কোর্টে পাঁচটি আর্জি জানান। প্রথমত, অভিষেকের অভিযোগ, বিচারপতি আদালতের ভিতরে বা বাইরে বাদী-বিবাদী পক্ষকে নিয়ে নানা মন্তব্য করে থাকেন। সেই সব মন্তব্য যাতে কোনও ভাবেই তদন্তকে প্রভাবিত না করে, তা নিশ্চিত করতে নির্দেশ দেওয়া হোক। দ্বিতীয়ত, অভিষেক অভিযোগ করেছেন, রাজনৈতিক ভাবে প্রভাবিত হয়ে বিচারাধীন বিষয় নিয়ে সাক্ষাৎকার দিচ্ছেন বিচারপতি। যা বিচারব্যবস্থার নীতি-আদর্শের বিরুদ্ধাচরণের শামিল। সাংসদের আর্জি, ওই বিচারপতির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করতে কলকাতা হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতিকে নির্দেশ দেওয়া হোক। তৃতীয়ত, অভিষেকের আর্জি, কলকাতা হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতিকে একটি বিশেষ বেঞ্চ তৈরি করতে নির্দেশ দেওয়া হোক। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের বেঞ্চে যে সব মামলা রয়েছে, তাঁর বেঞ্চ থেকে যে মামলাগুলি সরে অন্য বেঞ্চে (বিচারপতি অমৃতা সিংহের বেঞ্চ) গিয়েছে, সেই সব মামলার শুনানি ওই বিশেষ বেঞ্চেই হোক। চতুর্থত, অভিষেক চাইছেন, বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় যাতে কোনও বিচারাধীন বিষয় নিয়ে প্রকাশ্যে মন্তব্য না করেন, তা নিশ্চিত করতে হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতিকে নির্দেশ দেওয়া হোক। পঞ্চমত, সমস্ত তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে এই পরিস্থিতিতে সুপ্রিম কোর্ট যা উচিত মনে করবে, তেমনই নির্দেশ দেওয়া হোক বলেও আর্জিতে জানিয়েছিলেন অভিষেক।