মাধবীলতা মিত্র—নিজস্ব চিত্র।
এক জন কলেজপড়ুয়া, মুম্বইয়ের ২৪ বছরের তরুণী তনভি বুচ। এক জন ব্রিটেনের ৭৪ বছরের জ্যানিস মিক। ঝুলিতে রয়েছে দু’বার উত্তর মেরু অভিযান ও চারটি বিশ্ব রেকর্ড। আর এক জন ব্রিটেনের বাসিন্দা, স্তন ক্যানসারজয়ী ষাট বছরের ক্যারোলাইন জেরার্টস। রয়েছেন আয়ারল্যান্ডের এলিন ক্রিন, যাঁর ঠাকুরদা টম ক্রিন মেরু অভিযানে গিয়েও মাঝপথ থেকে ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছিলেন। ঠাকুরদার স্বপ্ন সফল করাই তাঁর লক্ষ্য। আর আছেন বঙ্গললনা মাধবীলতা মিত্র— পেশায় সুপার মডেল, নেশায় পর্বতারোহী। এই পাঁচ কন্যার দলই ডিসেম্বরে পাড়ি জমাবে আন্টার্কটিকায়, দক্ষিণ মেরু ছোঁয়ার লক্ষ্যে। বুধবার সাংবাদিক বৈঠকে তাঁরাই বার্তা দিলেন, তাঁদের কাছে অসাধ্য নয় কিছুই।
ছেলের সঙ্গে নৌকায় ১৯৯৭ সালে আটলান্টিক মহাসাগরে ‘রোয়িং রেসে’ অংশ নিয়েছিলেন ব্রিটেনের জ্যানিস মিক। তার পরে দু’বার উত্তর মেরু অভিযান। ৭৪ বছরের বিশ্ব রেকর্ডধারী সেই জ্যানিসই এ বার এই অভিযানের নেতৃত্বে। আন্টার্কটিকায় ‘লাস্ট ডিগ্রি স্কি’ (৮৯ ডিগ্রি দক্ষিণ অক্ষাংশ থেকে দক্ষিণ মেরু) করবে মহিলাদের এই দলটি, যার পোশাকি নাম ‘পোলার মেডেন্স’। এ দিন তিনি বলেন, ‘‘ছেলে বলেছিল, বার্বাডোজে ক্রিসমাস কাটাবে? সানন্দে রাজি হয়েছিলাম। সেটাই আমার জীবন বদলে দেয়। ১০১ দিনে আটলান্টিকের বুকে ৩০০০ মাইল পাড়ি দিয়ে রেকর্ড গড়ি আমরা। তাই বয়সটা কোনও ব্যাপারই নয়। আমরা চাইলে আমাদের অসাধ্য কিছুই নয়।’’ অভিযানে সফল হলে বিশ্বের বয়স্কতম মহিলা হিসেবে দক্ষিণ মেরুতে পৌঁছে আরও একটি রেকর্ড গ়ড়বেন তিনি।
জ্যানেটের সঙ্গেই আন্টার্কটিকার বুকে পা রাখতে চলেছেন দুই ভারতীয় কন্যা— মুম্বইয়ের তনভি বুচ ও খাস কলকাতার সুপার মডেল মাধবীলতা মিত্র। এ দিনের অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন তাঁরাও। ব্রিটিশ কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী তনভি এই সুযোগ পেয়ে উচ্ছ্বসিত। সাফল্য পেলে তিনিই হবেন দক্ষিণ মেরুতে পা রাখা নবীনতম ভারতীয় মহিলা। এ দিন ওই তরুণী বলছেন, ‘‘জীবনে এ রকম সুযোগ এক বারই আসে।’’
সাংবাদিক বৈঠকে (বাঁ দিক থেকে) মাধবীলতা, জ্যানিস ও তনভি।
মাধবীলতার গল্প আবার অন্য রকম। ছোট থেকেই পর্বতারোহণের নেশা থাকলেও পেশার কারণে দীর্ঘ দিন দূরেই ছিলেন। বিয়ের পরে স্বামীর উৎসাহে ফের পাহাড়-প্রেম শুরু। দার্জিলিংয়ের এইচএমআই থেকে কোর্স আগেই করা ছিল, উদ্ধারকাজ সংক্রান্ত কোর্সটিও করেছেন। এভারেস্ট-অন্নপূর্ণা বেসক্যাম্পের পরে এ বার দক্ষিণ মেরুর হাতছানি। বলছেন, ‘‘৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের শহর থেকে মাইনাস ৪০ ডিগ্রির দেশে যাচ্ছি। হেরে ফিরব না কিছুতেই।’’ আর বিপদ? দুর্ঘটনার কবলে পড়া অভিযাত্রী পেমবা শেরপার প্রসঙ্গ তুলে মাধবীলতার উত্তর, ‘‘ক্রিভাসের মতো অনেক বিপদই থাকতে পারে। ভয় পেলে চলবে নাকি!’’
দক্ষিণ আমেরিকার পুন্টা এরিনা শহর থেকে অভিযান শুরু হবে এই ‘অপরাজিতাদের’। প্রথমে বিমানে আন্টার্কটিকার ইউনিয়ন হিমবাহ, তার পরে বিমানে ৮৯ ডিগ্রি দক্ষিণ অক্ষাংশে পৌঁছে স্লেজ টেনে হেঁটে যাওয়া শেষ ১১১ কিলোমিটার ‘পথ’। প্রস্তুতিতে অবশ্য কোনও খামতি থাকছে না। দলনেত্রী বলছেন, ‘‘স্লেজ টানতে পেট-কোমর শক্ত হওয়া প্রয়োজন। নিয়মিত শারীরচর্চাই আসল। করতে পারলে শুধু আমরা ক’জন কেন, যে কেউই মেরু-অভিযানে যেতে পারেন।’’
জীবনের লড়াইয়েও যাতে কোনও কন্যা হার-না-মানা মানসিকতা দেখাতে পারেন, সেই বার্তাই দিচ্ছেন এই ‘অপরাজিতারা’।