গত ৩০ মে ‘কালীঘাটের কাকু’ ওরফে সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রকে গ্রেফতার করে ইডি। ফাইল চিত্র
তাঁর সঙ্গে জড়িত তিনটি সংস্থার কথা আগেই জানিয়েছিল ইডি। এ বার নিয়োগ মামলায় গ্রেফতার ‘কালীঘাটের কাকু’র সঙ্গে যুক্ত ৪০টি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টেরও সন্ধান পাওয়া গিয়েছে বলে জানা গেল ইডি সূত্রে। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সূত্রে খবর, এই সব ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের তথ্য ঘেঁটে নিয়োগ মামলার আরও গুরুত্বপূর্ণ দিক খুলে যাওয়া আশা করছেন তাঁরা। এমনকি, এই সমস্ত তথ্য ঘেঁটে ইতিমধ্যেই সুজয়ের সম্পর্কে বেশ কিছু তথ্য ইডির হাতে এসেছে বলে ওই সূত্রে জানা গিয়েছে।
নিয়োগ মামলায় গত ৩০ মে ‘কালীঘাটের কাকু’কে গ্রেফতার করেছিল ইডি। এককালে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটি দফতরে কর্মরত সুজয়কে নিয়োগ মামলার গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র বলেও ব্যাখ্যা করেছিল ইডি। তার পর থেকেই সুজয়ের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে শুরু করে আর্থিক লেনদেন সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্যে নজর দিয়েছিল নিয়োগ মামলার তদন্তকারী এই কেন্দ্রীয় সংস্থা। কারণ ইডির কথায়, সুজয়ের সঙ্গে এক দিকে যেমন প্রাক্তন মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং বিধায়ক মানিক ভট্টাচার্যের যোগ ছিল, তেমনই তৃণমূলের দুই বহিষ্কৃত নেতা শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায় এবং কুন্তল ঘোষেরও আর্থিক লেনদেনের সম্পর্ক ছিল। ইডিকে সুজয় নিজেই জানিয়েছিলেন, শান্তনু ব্যবসা শুরু করার সময় তাঁর টাকার দরকার ছিল বলে তাঁর স্ত্রীর সংস্থা থেকে মোটা টাকা দিয়ে সম্পত্তি কিনেছিলেন তিনি। যদিও পরে সেই টাকা বা সম্পত্তি কোনওটিই হাতে পাননি। আবার কুন্তলও ইডির কাছে স্বীকার করেছিলেন, ‘কালীঘাটের কাকু’র থেকে বড় অঙ্কের অর্থ সাহায্য নেওয়ার কথা। তবে কুন্তল একই সঙ্গে জানিয়েছিলেন, ওই টাকা তিনি ধার হিসাবে নিয়েছিলেন এবং পরে তা ফেরত দিয়ে দেন। এই সমস্ত তথ্য জানার পরই সুজয়ের আর্থিক লেনদেনে কড়া নজর দেয় ইডি। ইডি সূত্রে খবর, ‘কালীঘাটের কাকু’র প্যানকার্ড এবং অন্যান্য তথ্যের সাহায্য নিয়ে বিভিন্ন ব্যাঙ্কের কাছ থেকে তথ্য চেয়ে পাঠিয়েছে তারা। তাদের আশা, ওই ৪০টি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ছাড়াও ‘কালীঘাটের কাকু’র সঙ্গে যুক্ত আরও অ্যাকাউন্টের সন্ধান পাওয়া যাবে।
ইতিমধ্যে বিভিন্ন ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের তথ্য ঘেঁটে ‘কালীঘাটের কাকু’র সঙ্গে নানা ভাবে যুক্ত ৭-৮টি সম্পত্তির সন্ধান পাওয়া গিয়েছে বলে ইডি সূত্রে খবর। পাওয়া গিয়েছে আরও কিছু সংস্থায় তাঁর যুক্ত থাকার প্রমাণও। ইডি এখন খুঁজে দেখছে, এই সমস্ত সংস্থাকে ব্যবহার করে আরও সম্পত্তি কেনা হয়েছে কি না। বা ওই সমস্ত সংস্থাগুলির আর কী কাজ ছিল। এই সংস্থার সাহায্য নিয়ে কি কালো টাকাকে সাদা করার কাজও করা হত?
আপাতত ‘কালীঘাটের কাকু’র সঙ্গে যুক্ত সম্পত্তির বেশ কয়েকটি কলকাতাতেই রয়েছে বলে ইডি সূত্রে খবর। তবে এই সমস্ত সম্পত্তি কোনওটাই সরাসরি সুজয়ের নামে নেই। ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টগুলিও কিছু নিজের নামে, কিছু অন্য লোকের নামে, কিছু তাঁর সঙ্গে জড়িত সংস্থার নামে বলে জানা গিয়েছে ইডি সূত্রে। ইডি এখন জানতে চাইছে, আগে যে তিনটি সংস্থার নাম পাওয়া গিয়েছিল, সেগুলি বাদ দিয়ে যে সংস্থার নাম পাওয়া গিয়েছে, সেই সম্পত্তির আয়ের উৎস কী? ‘কালীঘাটের কাকু’ ছাড়া আর কারা এই সংস্থা নিয়ন্ত্রণ করতেন?