পিএফ মামলায় কুণালকে ছাড় দিচ্ছেন সুদীপ্তই

শ্রীঘরে ঢোকার পর থেকে সাংসদ কুণাল ঘোষের বিরুদ্ধে বারবার আঙুল তুলেছেন তিনি। আদালতে এই প্রথম সেই কুণালের পাশে দাঁড়ালেন সারদা গোষ্ঠীর কর্ণধার সুদীপ্ত সেন। শুক্রবার ব্যাঙ্কশাল আদালতে সারদার একটি সংবাদ চ্যানেলের কর্মীদের বেতন ও প্রভিডেন্ট ফান্ড না-দেওয়ার অভিযোগ সংক্রান্ত মামলার শুনানির শেষে সারদা-প্রধান সুদীপ্ত হঠাৎই বিচারককে বলেন, ‘‘এই মামলায় কুণালের কোনও ভূমিকা নেই।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ মে ২০১৫ ০৩:২৮
Share:

শ্রীঘরে ঢোকার পর থেকে সাংসদ কুণাল ঘোষের বিরুদ্ধে বারবার আঙুল তুলেছেন তিনি। আদালতে এই প্রথম সেই কুণালের পাশে দাঁড়ালেন সারদা গোষ্ঠীর কর্ণধার সুদীপ্ত সেন।

Advertisement

শুক্রবার ব্যাঙ্কশাল আদালতে সারদার একটি সংবাদ চ্যানেলের কর্মীদের বেতন ও প্রভিডেন্ট ফান্ড না-দেওয়ার অভিযোগ সংক্রান্ত মামলার শুনানির শেষে সারদা-প্রধান সুদীপ্ত হঠাৎই বিচারককে বলেন, ‘‘এই মামলায় কুণালের কোনও ভূমিকা নেই। সংস্থার কর্মীদের বেতন এবং আর্থিক লেনদেন সংক্রান্ত বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার এক্তিয়ার ছিল না কুণালের।’’ বিচারক শান্তনু গঙ্গোপাধ্যায় অবশ্য সুদীপ্তকে আর কিছু বলার অনুমতি দেননি। পরে তিনি কুণালকে ২৭ তারিখ পর্যন্ত জেল-হাজতে রাখার নির্দেশ দেন। তবে সুদীপ্তের ওই বক্তব্যের পরে বেশ খোশমেজাজে ছিলেন কুণাল।

সারদা কেলেঙ্কারি প্রকাশ্যে আসার পরে এ-পর্যন্ত কোনও দিনই কুণালের পাশে দাঁড়াননি সারদা-প্রধান। ২০১৩ সালের এপ্রিলে কলকাতা ছেড়ে চম্পট দেওয়ার সময় তিনি সিবিআই-কে যে-চিঠি লিখেছিলেন, তাতে সংস্থার ভরাডুবির জন্য অন্যদের সঙ্গে কুণালকেও দায়ী করেন সুদীপ্ত। গত বছর দুর্গাপুজোর ঠিক আগে আদালতে দাঁড়িয়ে সুদীপ্ত জানান, এত দিন তিনি কিছুই বলেনি। এ বার কিছু বলতে চান।
পরে অবশ্য আর সে-ভাবে মুখ খোলেননি সুদীপ্ত।

Advertisement

সুদীপ্ত তাঁর বিরুদ্ধে মুখ না-খুললেও কুণাল অবশ্য বারে বারেই মুখ খুলেছেন সারদা-প্রধানের বিরুদ্ধে। সম্প্রতি কুণাল আদালতের বাইরে অভিযোগ করেন, ‘‘রাজ্যে তৃণমূলের ভিত গড়ার কান্ডারি ছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সুদীপ্ত সেন। আর তৃণমূলের ক্ষমতায় গৃহপ্রবেশের পূজারি ছিলেন সুদীপ্ত।’’ তার পরেও সুদীপ্ত কিছু বলেননি।

তাই এত দিন পরে হঠাৎ সুদীপ্তের এই ভোলবদলে অবাক হয়েছেন আইনজীবীরাও। কেন আগ বাড়িয়ে তিনি এই মামলায় কুণালকে ‘ক্লিনচিট’ দিয়ে বসলেন, তা ধন্দে ফেলে দিয়েছে তাঁদেরও।

সিলিকনে তল্লাশি সারদা গোষ্ঠীর টাকা যে-সব সংস্থা ও ব্যক্তির কাছে গিয়েছে, তাদের মধ্যে লগ্নি সংস্থা সিলিকন-ও আছে বলে তদন্তকারীদের দাবি। সিলিকনের অন্যতম ডিরেক্টর শিবনারায়ণ দাস গ্রেফতার হয়েছেন মাস তিনেক আগে। এ দিন তাঁর গোষ্ঠীর ২৬টি শাখার দফতরে এবং কিছু কর্তার বাড়িতে তল্লাশি চালায় সিবিআই।

তদন্তকারীদের দাবি, বাজার থেকে প্রায় ১৫০ কোটি টাকা তুলেছে সিলিকন। পশ্চিমবঙ্গ ছাড়াও ওড়িশা, ঝাড়খণ্ড, বিহার ও হরিয়ানায় ওই সংস্থার দফতরে এ দিন তল্লাশি চালানো হয়। সিবিআই-কর্তারা জানান, ওই সব অফিসে বেশ কিছু তথ্য মিলেছে। সারদা গোষ্ঠীর টাকা ঘুরপথে সিলিকনের বিভিন্ন সংস্থায় গিয়েছে বলে স্বীকার করেছেন শিবনারায়ণ। তদন্তকারীরা জানান, সুপ্রিম কোর্ট সারদা ছাড়াও অন্য যে-সব সংস্থায় তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিল, সিলিকন তাদের অন্যতম।

সিবিআইয়ের এক শীর্ষ কর্তার কথায়, শুধু সারদা ও রোজ ভ্যালি নয়, ২০০৯ সালের পর থেকে এ রাজ্য প্রায় ২৪৫টি লগ্নি সংস্থা ঝাঁপ খুলে বসেছিল। এবং ওই সব ছোট লগ্নি সংস্থাগুলির সঙ্গেও অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তির যোগাযোগ ছিল। তদন্তকারীদের দাবি, সংস্থাগুলিকে চিহ্নিত করে তদন্ত শুরু হয়েছে। আপাতত সিলিকন-সহ ৪৪টি লগ্নি সংস্থার বিরুদ্ধে তদন্ত চালানো হচ্ছে।

তবে যে-সব প্রভাবশালী ব্যক্তি লগ্নি সংস্থার টাকা নিয়েছেন, তাঁদের ধরার কাজে সিবিআই কতটা এগোতে পারবে, তাতে সংশয় প্রকাশ করেছেন সুপ্রিম কোর্টে সারদা মামলার আবেদনকারী কংগ্রেস নেতা আব্দুল মান্নান। এ দিন তিনি বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ি থেকে ঢিল-ছোড়া দূরত্বে আলিপুর আদালতেই মামলা চালাতে ভরসা পাচ্ছে না সিবিআই। তা হলে প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে তদন্ত হবে কী ভাবে, সেটাই প্রশ্ন!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement