বেঁকিয়া গ্রামের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলছেন মুখ্যমন্ত্রী। নিজস্ব চিত্র
সভার পথে গাড়ি থামিয়ে গেলেন গ্রামে। বসলেন গৃহস্থের উঠোনে রাখা দড়ির খাটিয়ায়। আবার সার্কিট হাউস থেকে বেরিয়ে জগদ্ধাত্রী পুজোর মণ্ডপে গিয়ে বাজালেন কাঁসর। দিলেন চাঁদা। সোমবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাঁকুড়া সফর ছিল এমন টুকরো ঘটনায় ভরা।
মুখ্যমন্ত্রীর তিন দিনের কর্মসূচি শুরু হয়েছে সোমবার থেকে। এ দিন দুপুর সাড়ে ১২টা নাগাদ তিনি কংসাবতী সেচ ভবন থেকে রওনা হন খাতড়ার সিধু কানহু স্টেডিয়ামের উদ্দেশে। আট কিলোমিটারের পথ। আড়াই কিলোমিটার দূরে, তেঁতুলচিটা গ্রামের কাছে কিছু মহিলা রাস্তার ধারে দাঁড়িয়েছিলেন। হাতের কাগজে লেখা— ‘দিদি আপনার সাথে দেখা করতে চাই’।
মুখ্যমন্ত্রী গাড়ি থামান। ওই মহিলাদের মধ্যে শ্রাবণী হাঁসদা জানান, তাঁরা সাক্ষরতা মিশনের বয়স্ক শিক্ষাকেন্দ্রে পড়াতেন। ২০১৮ সালের জুলাইয়ে কাজ হারিয়েছেন। শ্রাবণী বলেন, ‘‘কাজ চেয়েছি। মুখ্যমন্ত্রী দেখবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন।’’ জেলা প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, ‘‘সাক্ষরতা কেন্দ্রগুলিতে যাঁরা পড়াতেন, তাঁদের ভাতা দীর্ঘ দিন ধরে বন্ধ। কাজও নেই।’’
আরও পড়ুন: বিজেপি-বিরোধী সুরেই বাম ধর্মঘট, কেন্দ্রের বিরুদ্ধে পথে তৃণমূলও
মুখ্যমন্ত্রীকে দেখবেন বলে তেঁতুলচিটা থেকে আধ কিলোমিটার দূরে রাস্তার ধারে দাঁড়িয়েছিলেন বেঁকিয়া গ্রামের পুষ্প ভুঁইয়া, লক্ষ্মী সর্দার, উত্তরা ভুঁইয়ারা। তাঁদের দেখে ফের গাড়ি থামে। গ্রামে গিয়ে প্রায় মিনিট দশেক বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী। খোঁজ নেন রেশনের চালের মান, স্বাস্থ্যসাথী কার্ড, পানীয় জলের ব্যবস্থা, কাস্ট সার্টিফিকেট, এলাকায় করোনা-সংক্রমণের পরিস্থিতি— নানা কিছুর।
বীরু ভুঁইয়ার উঠোনে রাখা খাটিয়ায় বসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। ওই গৃহস্থের কথায়, ‘‘এখনও স্বপ্ন মনে হচ্ছে। আমার কাঁচা বাড়ির হাল দেখে গিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। আশা করি, একটা হিল্লে হবে। মুখ্যমন্ত্রী বলেওছেন, ‘ঘর আস্তে আস্তে করে দেব’।’’ পুষ্প ভুঁইয়া বলেন, ‘‘দু’বছর আগে পঞ্চায়েতে পাকা বাড়ির আবেদন করেছিলাম। এখনও পাইনি।’’ পরে খাতড়ার সভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘জেলাশাসক আর পঞ্চায়েতগুলিকে বলব, যাঁদের খড়ের বাড়ি, টালির বাড়ি, তাঁদের অগ্রাধিকার দিন। মাটির ঘরে আমি জন্ম নিয়েছিলাম। মাটির ঘরের আলাদা সৌন্দর্য রয়েছে।’’
বেঁকিয়ার দেবু ভুঁইয়া ও শ্রীবাস ভুঁইয়া জানান, গ্রামের অধিকাংশ বাসিন্দা দিনমজুর। তাঁদের দাবি, একশো দিনের কাজে টাকা পেতে দেরি হয় বলে অনেকে গ্রাম ছেড়ে বর্ধমানে মজুরি করতে যান। দেবু বলেন, ‘‘এত দ্রুত সব ঘটে গেল, মুখ্যমন্ত্রীকে এ কথাটা বলাই হল না। তবে উনি যখন এসেছেন, গ্রামের দিকে প্রশাসনের নিশ্চয় নজর থাকবে।’’
দুপুর আড়াইটা নাগাদ হেলিকপ্টারে বাঁকুড়ার সার্কিট হাউসে পৌঁছন মুখ্যমন্ত্রী। বিকেল ৪টে নাগাদ আবার গাড়ি নিয়ে বেরোন। শহরের রাস্তায় তাঁকে দেখে হইচই পড়ে। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।
প্রথমে তিনি যান বাঁকুড়া খ্রিস্টান কলেজ লাগোয়া মাঝি রোডের একটি পারিবারিক জগদ্ধাত্রীপুজোয়। ওই বাড়ির বধূ উষা মাঝি বলেন, ‘‘তখন ছেলেরা কেউ ছিল না। আমি হকচকিয়ে গিয়ে বলি, ‘দিদি একটু দাঁড়ান, সবাই আসছে’।’’ মুখ্যমন্ত্রী একটি গামছা ও শাড়ি নিয়ে গিয়েছিলেন। সেগুলি এবং দক্ষিণা দেন পুরোহিতের হাতে। আরতি চলাকালীন কাঁসরও বাজান।
আরও পড়ুন: টিকা দিতে তৈরি রাজ্য, সরব মমতা, আজ মোদীর করোনা-বৈঠক
সেখান থেকে প্রতাপবাগান এলাকার একটি বারোয়ারি পুজোর মণ্ডপে যান মুখ্যমন্ত্রী। পুজো কমিটির সদস্য শুভরঞ্জন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘আমরা অবাক! ঠাকুর প্রণাম করে চাঁদা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। বড় করে পুজো করতে বলেছেন। প্রায় দশ মিনিট ছিলেন।’’