Nabanna

শূন্য নবান্ন ঘিরতে বৃহস্পতিবার ৪ মিছিল নিয়ে এগোবে বিজেপি

বৃহস্পতিবার অর্থাৎ ৮ অক্টোবর বিজেপির নবান্ন অভিযান।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ অক্টোবর ২০২০ ২৩:২২
Share:

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

চার-চারটি মিছিল নিয়ে এগনো হবে নবান্নের দিকে, একগুচ্ছ দাবি নিয়ে ঘেরাও করা হবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সচিবালয়। এই ছিল বিজেপির পরিকল্পনা। কিন্তু সে কর্মসূচির আগের সন্ধ্যায় রাজ্য সরকারের একটা ঘোষণা বদলে দিল পুরো আবহ। জীবাণুমুক্তকরণের জন্য নবান্ন বন্ধ থাকবে দু’দিন, জানাল সরকার। ‘ভয় পেয়ে সরকার নবান্ন বন্ধ করে দিচ্ছে’ বলে কটাক্ষ ছুড়ে কর্মসূচি বহাল রাখল বিজেপি।

Advertisement

বৃহস্পতিবার অর্থাৎ ৮ অক্টোবর বিজেপির নবান্ন অভিযান। ‘এসএসসি ও টেট কেলেঙ্কারি, দুর্নীতি, সন্ত্রাসবাদকে প্রশ্রয় দেওয়া, রাজনৈতিক হিংসা’-সহ একগুচ্ছ অভিযোগ তুলে এই নবান্ন অভিযানের ডাক দেওয়া হয়েছে। যুব মোর্চার ব্যানারে কর্মসূচি। তাই মিছিলের নেতৃত্ব দিতে কলকাতায় পৌঁছে গিয়েছেন যুব মোর্চার সর্বভারতীয় সভাপতি তথা বেঙ্গালুরু দক্ষিণের সাংসদ তেজস্বী সূর্যও। রাজ্য বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব এবং কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষকরাও ঝাঁপাতে তৈরি। ঠিক সেই সময়েই ঘোষণাটা হল। কোভিড সংক্রমণের প্রেক্ষিতে জীবাণুমুক্তকরণের জন্য ৮ ও ৯ অক্টোবর পুরোপুরি বন্ধ থাকবে নবান্ন, জানানো হল নবান্ন থেকেই। ওই দু’দিন নবান্নের সব কর্মীকেও অফিসে আসতে বারণ করে দেওয়া হল।

রাজ্য সরকারের এই ঘোষণা কিছুটা অস্বস্তিতেই ফেলে দিয়েছে বিজেপি নেতৃত্বকে। যাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে নবান্নের দিকে এগনোর কথা ছিল চার মিছিল নিয়ে, সেই মুখ্যমন্ত্রী তো দূরের কথা, কোনও কর্মীই বৃহস্পতিবার থাকবেন না নবান্নে। বন্ধ সচিবালয় ঘেরাও করা হাস্যকর হয়ে দাঁড়াবে না তো? বুধবার রাত থেকেই এই প্রশ্ন শোনা যাচ্ছে বিজেপির প্রতিপক্ষ শিবিরে। কিছুটা কটাক্ষের সুর মিশে রয়েছে সে প্রশ্নে। যেন শেষ রাতে ‘ওস্তাদের মার’ দেওয়া হয়েছে বিজেপি-কে। কিন্তু এত দিন ধরে এত সভা, প্রস্তুতি, প্রচার চালানোর পরে কর্মসূচির আগের রাতে পৌঁছে পিছু হঠার কথা বিজেপি নেতৃত্বের পক্ষেও ভাবা সম্ভব নয়। অতএব কর্মসূচি বহাল রেখে পাল্টা কটাক্ষে যাওয়ার পথ বেছে নিয়েছে বিজেপি।

Advertisement

আরও পড়ুন: রাজ্যে সুস্থতার হার বাড়লেও চিন্তা বাড়াচ্ছে দৈনিক সংক্রমণ

যুব মোর্চার রাজ্য সভাপতি সৌমিত্র খাঁ বুধবার রাতে আনন্দবাজার ডিজিটালকে বলেন, ‘‘বৃহস্পতিবার আমরা যে নবান্ন অভিযান করছি, সেই নবান্নের ৭০ শতাংশ কর্মী এখন বিজেপির দিকে। সেই কারণেই মুখ্যমন্ত্রী ভয় পেয়েছেন। আমাদের মিছিলকে নবান্নে পৌঁছতে দেওয়া হোক বা না হোক, সেখানকার কর্মীরাই হয়তো নবান্নে বিজেপির পতাকা উড়িয়ে দেবেন। এইটাই মুখ্যমন্ত্রীর ভয়। তাই তড়িঘড়ি গোটা নবান্ন বন্ধ করে দিয়ে কর্মীদের কাজে আসতেই বারণ করে দিয়েছেন।’’ শুধু কটাক্ষেই থামেননি সৌমিত্র। সম্ভাব্য চক্রান্তের আশঙ্কাও প্রকাশ করেছেন। বিষ্ণুপুরের সাংসদের কথায়, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে তো একটু বিশ্বাস করা যায় না। এমনও হতে পারে যে, তিনি যুব মোর্চার কর্মীদের উপরে গুলি চালানোর কথা ভাবছেন। নবান্ন ফাঁকা জেনেও বিজেপি মিছিল নিয়ে আসছিল কেন? এই প্রশ্ন তুলে হয়তো গুলি চালিয়ে দেওয়া হল।’’

বৃহস্পতিবার বেলা ১২টায় নবান্ন অভিযান শুরু করবে বিজেপি। চার দিক থেকে চারটি মিছিল ১২টাতেই শুরু হওয়ার কথা। রাজ্য বিজেপির সদর দফতরের সামনে থেকে যে মিছিলটি শুরু হবে, তার নেতৃত্বে থাকবেন রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষ। ওই মিছিল সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ থেকে মহাত্মা গাঁধী রোড হয়ে হাওড়া ব্রিজ ধরে নবান্নের দিকে এগোবে বলে স্থির হয়েছে। দ্বিতীয় মিছিলটি শুরু হবে বিজেপির হেস্টিংস কার্যালয়ের সামনে থেকে। কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয়, সহকারী পর্যবেক্ষক অরবিন্দ মেনন, সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি মুকুল রায়, রাজ্য সাধারণ সম্পাদক তথা হুগলির সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়, রাজ্য কমিটির সদস্য শঙ্কুদেব পন্ডারা থাকবেন ওই মিছিলের নেতৃত্বে। সেই মিছিলকে দ্বিতীয় হুগলি সেতু দিয়ে নবান্নের দিকে নিয়ে যাওয়ার কথা।

আরও পড়ুন: মণীশ-হত্যা: ১ মাস অকুস্থলের কাছেই লুকিয়ে ছিল আততায়ীরা

বাকি দু’টি মিছিল শুরু হবে গঙ্গার পশ্চিম কূলেই। একটি হাওড়া ময়দান থেকে। সেটির নেতৃত্বেই থাকবেন তেজস্বী। সঙ্গে সৌমিত্র। আর একটি শুরু হবে সাঁতরাগাছি থেকে। তার নেতৃত্বে থাকবেন রাজ্য সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসু। সঙ্গে সহ-সভাপতি রাজু বন্দ্যোপাধ্যায়।

বিজেপি বা যুব মোর্চার পরিকল্পনা যেমন, পুলিশের পরিকল্পনাও কিন্তু তার চেয়ে কম কিছু নয়। কোনও মিছিলকেই নবান্নের ধারেকাছে পৌঁছতে না দেওয়ার লক্ষ্যে সব রকম প্রস্তুতি সেরে ফেলেছে কলকাতা ও হাওড়া পুলিশ। কলকাতায় প্রায় ২ হাজার পুলিশ মোতায়েন করা হচ্ছে। দ্বিতীয় হুগলি সেতুতে কোনও মিছিল উঠতে না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুলিশে। মিছিলে যোগ দেওয়ার জন্য যে সব গাড়িতে করে বিজেপি কর্মী-সমর্থকরা যাবেন, সেগুলিকেও ওই সেতুতে উঠতে দেওয়া হবে না। পুলিশ সূত্রের খবর, হেস্টিংস থেকে মিছিল বেরলেই বিদ্যাসাগর সেতুর সমস্ত অ্যাপ্রোচওয়েতে মিছিল আটকে দেওয়া হবে। সেখানে জলকামান থেকে শুরু করে রোবোকপ এবং অ্যালুমিনিয়াম ব্যারিকেড থাকবে। মিছিলের অবস্থান এবং গতিপ্রকৃতির উপর নজর রাখার জন্য ড্রোন ব্যবহার করা হবে। মহাত্মা গাঁধী রোড ধরে যে মিছিল হাওড়া ব্রিজের দিকে যাবে, তাকেও হাওড়া ব্রিজের অনেক আগেই রোখার পরিকল্পনা পুলিশের। সেই প্রতিরোধ ভেঙে মিছিল এগোলে আটকে দেওয়া হবে স্টেশনের কাছে, এমনটাই জানা গিয়েছে পুলিশ সূত্রে।

সাঁতরাগাছি থেকে শুরু হওয়া মিছিল কোনা এক্সপ্রেসওয়ে ধরে নবান্নের দিকে যাওয়ার কথা। আর হাওড়া ময়দান থেকে শুরু হওয়া মিছিল ফোরশোর রোড বা জিটি রোড ধরে যাবে। তাই গোটা এলাকাকে পাঁচটি সেক্টরে ভাগ করেছে হাওড়া পুলিশ। সব ক’টি সেক্টরের দায়িত্বে থাকবেন এক জন করে ডিআইজি পদমর্যাদার আধিকারিক। প্রতিটি সেক্টরে থাকবে ত্রিস্তরীয় রিং। প্রথমে সাধারণ ব্যারিকেড। দ্বিতীয় স্তরে ব্যারিকেড এবং পুলিশ। তৃতীয় স্তরে অ্যালুমিনিয়াম ব্যারিকেড, রোবোকপ এবং জলকামান। বিভিন্ন পদমর্যাদার ২০০ আধিকারিক-সহ হাজার দেড়েকের বাহিনী হাওড়া কমিশনারেট মাঠে নামাচ্ছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে। একটি মিছিলকে সাঁতরাগাছি সেতুতে ওঠার আগেই আটকে দেওয়া হবে বলে পুলিশ স্থির করেছো। আর অন্য মিছিলটিকে থামিয়ে দেওয়া হবে মল্লিক ফটকের কাছে।

বিজেপি অবশ্য বলছে, পুলিশ বাধা দিলেই মিছিল থেমে যাবে, এমনটা ভাবার কোনও কারণ নেই। সায়ন্তন বসু থেকে রাজু বন্দ্যোপাধ্যায়, সৌমিত্র খাঁ থেকে শঙ্কুদেব পন্ডা, প্রত্যেকের মুখেই প্রায় একই কথা— ‘‘আমরা শান্তিপূর্ণ, গণতান্ত্রিক উপায়ে পথে নামছি। যদি আমাদের সেই অধিকারে বাধা দেওয়া হয়, তা হলে পরিস্থিতির কোন দিকে যাবে বলতে পারব না।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement