Paray Shikshalaya

paray sikshalaya: কাছের শিক্ষালয় নয়, টান দূরের আপন স্কুলেই

যত দূরেই হোক, নিজের স্কুল আয়োজিত ‘পাড়ায় শিক্ষালয়’-এ ফিরতে উন্মুখ পড়ুয়ার সংখ্যা প্রচুর।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০৫:৩২
Share:

নিজস্ব চিত্র।

“আমার বাড়ি নিউ টাউনের কাছে। সেই পাড়ায় স্কুল আছে। কিন্তু সেখানে তো কোনও শিক্ষককে চিনি না। বন্ধুও নেই। ছোট থেকে কেষ্টপুরের এই স্কুলে পড়ি। তাই এখানেই এসেছি,” কেষ্টপুরে নিজের স্কুলে ‘পাড়ায় শিক্ষালয়’-এ যোগ দিয়ে বলল সপ্তম শ্রেণির পড়ুয়া স্বস্তিকা রায়।

Advertisement

কেন বাড়ির কাছের অচেনা স্কুল ছেড়ে দূরবর্তী চিরচেনা আপন স্কুলে যাওয়ার এই প্রবণতা, খুব প্রাঞ্জল ভাবে সেটা বুঝিয়ে দিল স্বস্তিকা। এবং স্বস্তিকা মোটেই একা নয়। সে আসলে সেই সব ছাত্রছাত্রীর প্রতিনিধি, যারা বাড়ির কাছের ‘পাড়ায় শিক্ষালয়’ ছেড়ে দূরে, নিজের স্কুলে যেতেই আগ্রহী। এবং যত দূরেই হোক, নিজের স্কুল আয়োজিত ‘পাড়ায় শিক্ষালয়’-এ ফিরতে উন্মুখ পড়ুয়ার সংখ্যা প্রচুর।

করোনা আবহে পড়ুয়াদের যাতে বাড়ি থেকে বেশি দূরে যেতে না-হয়, সেই জন্য বাসস্থানের নিকটবর্তী স্কুলের উদ্যোগে পাড়ায় পড়াশোনার পরিকল্পনা করেছে শিক্ষা দফতর। কিন্তু দু’দিন পাড়ায় শিক্ষালয় চলার পরে দেখা যাচ্ছে ভিন্ন চিত্র। পাড়ার স্কুল এড়িয়ে নিজের স্কুলের টানে ছুটছে বহু পড়ুয়া। অধিকাংশ অভিভাবকও জানান, পাড়ার অচেনা স্কুলের থেকে ছাত্রছাত্রীরা নিজের পরিচিত স্কুলে যেতেই বেশি স্বস্তি বোধ করছে এবং তাঁরাও মনে করছেন, ছেলেমেয়েকে সেখানে পাঠানোই বেশি নিরাপদ।

Advertisement

লর্ড সিনহা রোডে সাখাওয়াত মেমোরিয়াল গভর্নমেন্ট গার্লস হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষিকা পাপিয়া নাগ সিংহ মহাপাত্র জানান, তাঁর স্কুলে পাড়ায় শিক্ষালয় নিয়ে আগ্রহ ব্যাপক। বহু পড়ুয়াই হাওড়া ও বেহালা থেকে আসে। তারা স্থানীয় পাড়ায় শিক্ষালয়ে যায়নি। তাদের কেউ বাসে, কেউ গাড়িতে করে নিজের স্কুলেই এসেছে। পাপিয়াদেবী বলেন, “পড়ুয়ারা নিজের স্কুলের চেনা পরিবেশই পছন্দ করে। কারণ, তারা জানে, নিজের স্কুলে কোথায় শৌচালয় আছে, কোথায় রয়েছে পানীয় জলের ব্যবস্থা। শিক্ষকেরাও তাদের চেনা।” ডোমজুড়ের একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক দীপঙ্কর দাস জানান, এলাকার যে-সব ছেলেমেয়ে অন্য স্কুলে পড়ে, তাদের কেউই তাঁর স্কুলে আসেনি। এসেছে তাঁর স্কুলের শিক্ষার্থীরাই।

বিকাশ ভবন মঙ্গলবার জানিয়েছে, প্রথম দিনের থেকে দ্বিতীয় দিন অনেক বেশি পড়ুয়া পাড়ায় শিক্ষালয়ে যোগ দিয়েছে। এ দিন পাড়ায় পড়ুয়ার সংখ্যা ৩৬ লক্ষ ছাড়িয়েছে। এক লক্ষ ছাড়িয়েছে পাড়ায় শিক্ষালয়ের সংখ্যা।

মাঠে, ময়দানে না-পড়িয়ে ক্লাসঘরে স্বাভাবিক পড়াশোনার ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনলে পড়ুয়ার সংখ্যা আরও বাড়বে বলে মনে করেন অ্যাডভান্সড সোসাইটি ফর হেডমাস্টার্স অ্যান্ড হেডমিস্ট্রেসেসের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক চন্দন মাইতি। তিনি বলেন, “ছেলেমেয়েরা নিজের স্কুলেই যাচ্ছে। কারণ, সেখানেই তারা বেশি স্বচ্ছন্দ। আস্তে আস্তে তাদের নিজেদের ক্লাসে ফেরানো হোক। তা হলে ওরা আরও স্বস্তি পাবে। আরও পড়ুয়া বাড়বে।”

প্রশ্ন উঠছে পরিচ্ছন্নতা নিয়েও। মাঠে-ছাদে-মণ্ডপে যে-সব শতরঞ্চিতে পড়ুয়ারা বসছে, সেটা ময়লা হচ্ছে। পরের দিন তাতেই বসতে হচ্ছে। করোনাকালে যে-পরিচ্ছন্নতার কথা বলা হচ্ছে, এতে সেটা কতটা বজায় থাকবে— প্রশ্ন তুলছেন কলেজিয়াম অব অ্যাসিস্ট্যান্ট হেডমাস্টার্স অ্যান্ড অ্যাসিস্ট্যান্ট হেডমিস্ট্রেসেসের সম্পাদক সৌদীপ্ত দাস। পশ্চিমবঙ্গ সরকারি বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সৌগত বসু বলেন, “পড়ুয়াদের ক্লাসে ফেরানোটাই এখন জরুরি।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement