প্রতীকী ছবি।
ট্যাব-স্মার্টফোনের সুবিধার আওতায় এ বার রাজ্যের ভোকেশনাল বা বৃত্তিমূলক শাখার পড়ুয়ারাও। পর্যবেক্ষকদের মতে, বৃত্তিমূলক শাখার ছাত্রছাত্রীদের বেশিরভাগই আর্থিক ভাবে পিছিয়ে থাকা পরিবারের। তাঁদের এই সুবিধার আওতায় এনে ভোটের আগে আরও একটি চমক
দিল রাজ্য।
রাজ্যে উচ্চমাধ্যমিক এবং মাদ্রাসার দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদের ট্যাব অথবা স্মার্টফোন কেনার টাকা দিচ্ছে রাজ্য সরকার। সম্প্রতি বৃত্তিমূলক শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণ অধিকর্তা নির্দেশিকা দিয়েছেন, এ বছরে বৃত্তিমূলক শাখার দ্বাদশ শ্রেণির যে ছাত্রছাত্রীরা পরীক্ষায় বসবেন, তাঁদেরও ট্যাব বা স্মার্টফোন দেওয়ার কাজ ভোট ঘোষণার আগে শেষ করে ফেলতে হবে। তার জন্য সংশ্লিষ্ট প্রত্যেকের ব্যাঙ্কের তথ্য দ্রুত যাচাই করতে বলা হয়েছে। সরকারি সূত্রের দাবি, গোটা রাজ্যে এমন উপভোক্তার সংখ্যা ৭০ হাজার থেকে এক লক্ষের মধ্যে থাকতে পারে।
প্রসঙ্গত, ট্যাব বা স্মার্টফোন কিনে ছাত্রছাত্রীদের দেওয়া সম্ভব নয় বলে প্রত্যেক উপভোক্তার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ১০ হাজার করে টাকা পাঠাচ্ছে রাজ্য সরকার। কারিগরি শিক্ষা দফতরের সূত্র জানাচ্ছে, গোটা রাজ্যে মোট ২৬০০ বৃত্তিমূলক শিক্ষার স্কুল রয়েছে। এর মধ্যে ৭০০ মতো স্কুল রয়েছে ‘ন্যাশনাল স্কিল ফ্রেমওয়ার্ক’-এর আওতায়। সাধারণত, মেধা তুলনায় কম অথচ হাতের কাজ ভাল, গরিব পরিবারের এমন ছাত্রছাত্রীরা যাতে প্রশিক্ষণ বা শিক্ষার আওতার বাইরে না বেরিয়ে যান, তা নিশ্চিত করতেই এমন স্কুলগুলি রাজ্যে চলছে। বৃত্তিমূলক শাখার আওতায় উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করলে আইটিআই অথবা পলিটেকনিকে ভর্তি হতে পারেন কোনও ছাত্রছাত্রী। সেই স্তরে ভাল ফল করলে সাধারণ ইঞ্জিনিয়ারিং শাখায় পড়ার সুযোগও তৈরি হয়। এই অবস্থায় দ্বাদশ শ্রেণির যে ‘রেগুলার’ ছাত্রছাত্রীরা এ বছর পরীক্ষা দেবেন, তাঁদের ক্ষেত্রে ট্যাব বা স্মার্টফোন আরও বেশি সহায়ক হতে পারে বলে আধিকারিক মহলের ধারণা। মন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসুর বক্তব্য, “স্কুলগুলোতে বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ আরও সংগঠিত জায়গায় আনার লক্ষ্যে কাজ চলছে। এই অবস্থায় ট্যাব বা স্মার্টফোনগুলির মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীরা উপকৃত হবে।”
তৃণমূল প্রভাবিত রাজ্য সরকারি কর্মচারী ফেডারেশানের প্রবীণ নেতা মনোজ চক্রবর্তী সরকারের এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানালেও বৃত্তিমূলক শাখার স্কুলগুলিতে কর্মরত শিক্ষক এবং প্রশিক্ষকদের আর্থিক পরিস্থিতি নিয়ে সরব হন। তাঁর বক্তব্য, “অত সংখ্যায় ছাত্রছাত্রীকে ট্যাব বা স্মার্টফোনের টাকা দিতে সরকারের প্রচুর খরচ হবে। পাশাপাশি, শিক্ষক এবং প্রশিক্ষকদের আর্থিক দিকটি মজবুত করলে সামগ্রিক বৃত্তিমূলক কর্মসূচিও সবল হয়ে উঠবে। কিন্তু তাঁরা দীর্ঘদিন ধরেই খুব কম বেতনে কাজ করে চলেছেন। সমস্যাটি গুরুত্ব দিয়ে দ্রুত নিষ্পত্তি করা উচিত সরকারের।” যদিও দফতরের দাবি, একটি পৃথক কর্মসূচির আওতায় শিক্ষক-প্রশিক্ষকেরা কর্মরত রয়েছেন। ফলে সংশ্লিষ্টদের উপর সরকারের সরাসরি নিয়ন্ত্রণের সুযোগ কম। স্কুলগুলিই বরং তাঁদের প্রকৃত নিয়ন্ত্রক। তবুও সরকার পার্টটাইম শিক্ষক-প্রশিক্ষকদের সুবিধার্থে দু’টি স্কুলে পড়ানোর সুযোগ দিয়েছে। এতে সংশ্লিষ্টদের আয়ও আগের থেকে বেড়েছে। উপরন্তু, তাঁদের আনা হয়েছে স্বাস্থ্যসাথীর সুবিধার আওতাতেও।