সতর্ক: দূরত্ব-বিধি মেনে উত্তরপত্র জমা দিচ্ছেন পরীক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার বাসন্তীতে। ছবি: সামসুল হুদা
গড়বড় করতে পারে ইন্টারনেট, এটা অনুমান করেই গোসাবার পাঠানখালি হাজি দেশারথ কলেজ-সহ সুন্দরবনের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষ নিজেদের মতো করে উত্তরপত্র জমা নেওয়ার ব্যবস্থা করেছিলেন। নদীর ঘাটে নৌকা নিয়ে অপেক্ষা করছিলেন কলেজ-কর্মীরা। বৃহস্পতিবার চূড়ান্ত বর্ষের পরীক্ষার পরে উত্তরপত্র ই-মেল করতে না-পেরে পরীক্ষার্থীরা সেখানে গিয়ে কলেজের কর্মীদের হাতেই খাতা তুলে দেন। ইন্টারনেটের সমস্যার জন্য জীবনতলা বেগম রোকেয়া কলেজে গিয়েই পরীক্ষা দেন ১১ জন।
বিকেল ৪টের পরেও খাতা মেল করতে পারেননি টাকি কলেজের ছাত্র, সন্দেশখালির আতাপুর গ্রামের বাসিন্দা কৃষ্ণেন্দু মাহাতো। সন্দেশখালির কালীনগর কলেজের শতাধিক পড়ুয়া উত্তরপত্র জমা দেন কলেজেই। সমস্যা সেই ইন্টারনেট। বেলা ৩টে পর্যন্ত উত্তরপত্র জমা দিয়েছেন উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার ৯০ শতাংশ পরীক্ষার্থী।
বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ামক দেবাশিস শর্মা জানান, নির্দিষ্ট পোর্টাল ও ‘ছাত্রবন্ধু’ মোবাইল অ্যাপ থেকে প্রশ্ন ডাউনলোড করে বাড়িতেই পরীক্ষা দেন সাড়ে পাঁচ হাজার পড়ুয়া। অনেকে ই-মেলে, কেউ কেউ কলেজের ড্রপবক্সে খাতা জমা দেন। স্নাতকোত্তর বাংলা বিভাগের ছাত্র, শালবনির শ্যামল মাহাতো বলেন, ‘‘ইন্টারনেট দুর্বল। পিডিএফ ফাইল করে উত্তরপত্র পাঠাতে দেরি হয়েছে।’’
আরও পড়ুন: জেলায় জেলায় মাস্কে অনীহা, উদ্বেগে ডাক্তাররা
দূরত্ব-বিধি উড়িয়ে ইসলামপুর কলেজের মাঠে একসঙ্গে বসে পরীক্ষা দেন বহু পরীক্ষার্থী। কোচবিহার শহরের বাসিন্দা তন্ময় সরকার বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের পোর্টালে নির্ধারিত সময়ে প্রশ্নপত্র আপলোড করা হয়নি। ইন্টারনেটের সমস্যায় উত্তরপত্রও আপলোড করা যাচ্ছিল না। তাই বাড়ি থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার দূরে বাণেশ্বর কলেজে গিয়ে উত্তরপত্র জমা দিয়েছি।” ইন্টারনেটের দুর্দশায় কোচবিহার, উত্তর দিনাজপুর, জলপাইগুড়ি, মালদহ, শিলিগুড়ি, আলিপুরদুয়ারে পড়ুয়াদের একাংশকে খাতা নিয়ে কলেজে ছুটতে দেখা যায়। জলপাইগুড়ির পিডি, এসই, কমার্স কলেজে খাতা জমা দিতে ভিড় উপচে পড়ে। বহু পরীক্ষার্থীরই মাস্ক ছিল না।
আরও পড়ুন: জঙ্গি, গরু পাচারে সরব সিদ্দিকুল্লা
বীরভূমের বোলপুর কলেজ ও পূর্ণীদেবী মহিলা কলেজে ক্লাসে বসিয়ে পরীক্ষা নেওয়া হয়। কলেজ-কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, প্রত্যন্ত এলাকার পরীক্ষার্থীদের বাড়িতে নেটওয়ার্ক কাজ করে না। অনেকের স্মার্টফোনও নেই। তাঁদের জন্যই এই সিদ্ধান্ত।
পূর্ব বর্ধমানের বিভিন্ন এলাকায় কাউকে গাছতলায়, কাউকে কলেজ-গেটের অদূরে বসে পরীক্ষা দিতে দেখা যায়। পানাগড় থেকে মানকর কলেজে খাতা জমা দিতে যাওয়ার পথে মোটরবাইক দুর্ঘটনায় জখম হন এক ছাত্রী। তিনি সময়ের মধ্যে খাতা জমা দিতে পারেননি। আসানসোলের কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ১৭টি কলেজে পরীক্ষা হয়েছে। ফাল্গুনী মুখোপাধ্যায়, অমিতাভ বসুর মতো কয়েক জন অধ্যক্ষ জানান, কোথাও কোনও সমস্যা হয়নি। ভাল ভাবেই পরীক্ষা হয়েছে। অভিযোগ আসেনি। পুরুলিয়ার সিধো-কানহো-বীরসা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ামক সুবলচন্দ্র দে বলেন, ‘‘৮৮৫০ জন পড়ুয়া নির্বিঘ্নে পরীক্ষা দিয়েছেন।’’
আরও পড়ুন: পরীক্ষা কলেজে, দল বেঁধে মাঠে বা গাছতলাতেও
বাঁকুড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন বিভিন্ন কলেজ-কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয়ের পোর্টালের শ্লথ গতির দরুন অনেকে অনলাইনে উত্তরপত্র জমা দিতে অসুবিধায় পড়েন। ‘‘একই সময়ে অনেকে খাতা জমা দিতে যাওয়ায় সমস্যা হয়েছিল। সঙ্গে সঙ্গেই তা মিটিয়ে ফেলা হয়,’’ বলেন উপাচার্য দেবনারায়ণ বন্দ্যোপাধ্যায়।
হাওড়া গ্রামীণ এলাকায় অনেক ছাত্রছাত্রী কলেজে গিয়ে উত্তরপত্র জমা দেন। ফোনের সমস্যা থাকায় বাগনান কলেজে বসে পরীক্ষা দেন জনা কুড়ি ছাত্রছাত্রী। পঞ্চানন রায় কলেজের অধ্যক্ষ সৌমিত্র সরকার বলেন, ‘‘এই প্রত্যন্ত এলাকায় নেটের সমস্যা আছে। তাই বেশির ভাগ ছাত্রছাত্রী কলেজে এসেই উত্তরপত্র জমা দিয়েছে।’’ উলুবেড়িয়া কলেজে ১৬৮৩ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ১৪০০ জন খাতা জমা দেন অনলাইনেই।