Online Classes

Education: বই-ভিডিয়ো দেখে লেখার ফলেই কি পড়ুয়ারা পিছিয়ে

শিক্ষকেরা জানাচ্ছেন, তাঁরা বিষয়টি নিয়ে ভাবছেন। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা দফতর থেকে ‘পঠন সেতু’ নামে একটি বই দেওয়া হয়ে‌ছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০৭:২৯
Share:

আগের দিনের বৃষ্টিতে ভিজে রয়েছে মাঠ। ‘পাড়ায় শিক্ষালয়’-এর ক্লাস তাই বারান্দায়। শুক্রবার বীরভূমে নানুর প্রাথমিক স্কুলে। ছবি: কল্যাণ আচার্য

গৃহবন্দিদশায় পড়াশোনা আর স্কুলে শ্রেণিকক্ষের পঠনপাঠনের মধ্যে তফাত কোথায়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার কয়েক দিনের মধ্যেই সেটা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। করোনার মধ্যে বাড়িতে বসে ‘অ্যাক্টিভিটি টাস্ক’ বা গৃহপাঠের উত্তর দেওয়ার সময় পড়ুয়াদের অনেকে যতটা দক্ষতা দেখিয়েছিল, এখন স্কুলের ক্লাসে সেই প্রশ্নেরই উত্তর দিতে হোঁচট খাচ্ছে তারা। খাতায় দ্রুত উত্তর লেখার ক্ষমতাও হারিয়ে ফেলেছে অনেকে। বাড়িতে সহায়িকা বই, বিশেষত ইউটিউব ভিডিয়ো দেখে প্রশ্নের উত্তর লিখে দেওয়ার ফলে অনেক পড়ুয়া এমন ঘাটতির মুখে পড়েছে বলে শিক্ষা শিবিরের একাংশের পর্যবেক্ষণ।

Advertisement

শিক্ষকেরা জানাচ্ছেন, তাঁরা বিষয়টি নিয়ে ভাবছেন। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা দফতর থেকে ‘পঠন সেতু’ নামে একটি বই দেওয়া হয়ে‌ছে। নবম ও দশম শ্রেণির জন্য দেওয়া হয়েছে ‘শিক্ষণ সেতু’। আগের শ্রেণির যে-সব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় না-জানলে পরের শ্রেণিতে অসুবিধা হওয়ার কথা, সেগুলি ভাল করে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে ওই দু’টি বইয়ে। নতুন ক্লাসে নতুন বিষয় পড়ানোর আগে ওই দু’টি বই পড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে।

সম্প্রতি একটি বেসরকারি সংস্থার শিক্ষা সমীক্ষার রিপোর্টে প্রাথমিকে স্তরের ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষামানের অবনমন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। শিক্ষক-শিক্ষিকারা জানাচ্ছেন, শুধু প্রাথমিকে নয়, স্কুল খোলার পরে দেখা যাচ্ছে, অষ্টম থেকে দ্বাদশের পড়ুয়াদেরও পড়াশোনার মানও বেশ খানিকটা নেমে গিয়েছে। বাড়িতে বসে যারা খাতায় গৃহপাঠের নির্ভুল উত্তর লিখেছিল, তাদের একটি বড় অংশ এখন স্কুলে বসে তা লিখতে পারছে না। প্রশ্ন উঠছে, এমনটা হল কেন? ছাত্রছাত্রীদের এই খামতি দূর করতে শিক্ষকেদের পরিকল্পনা কী? সেতুপাঠে সমস্যার সুরাহা হবে কি?

Advertisement

বাংলার শিক্ষিকা সুমনা সেনগুপ্তের বক্তব্য, দশম শ্রেণির পড়ুয়াদের অনেকে বাড়িতে বসে গৃহপাঠের সমাধান করেছে ইউটিউবের ভিডিয়ো দেখে। এমনও দেখা গিয়েছে, একটি ভুল উত্তর সকলে মিলেই ভুল লিখেছে। সুমনাদেবী বলেন, ‘‘করোনাকালের প্রথম দিকে অনেক ছাত্রছাত্রী সহায়িকা বই দেখে লিখত। সহায়িকা দেখে লিখতে গেলে কিছুটা বিষয়বস্তু পড়ে নিতে হয়। কিন্তু ইউটিউব দেখে লেখার সময় তারও দরকার পড়ে না। এর ফলে যে মারাত্মক ক্ষতি হয়ে গিয়েছে, সেটা মালুম হচ্ছে স্কুল খোলার পরেই।’’ কসবার একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায় জানান, বাড়িতে বসে ছাত্রছাত্রীরা যত সাবলীল ভাবে উত্তর লিখে পাঠিয়েছিল, স্কুলের ক্লাসে দেখা যাচ্ছে, সেই বিষয় সম্পর্কে তাদের অনেকেরই কোনও স্পষ্ট ধারণা নেই। শিক্ষক শিবিরের একাংশের মতে, ইউটিউব ভিডিয়ো দেখে লিখতে গিয়ে অনেক পড়ুয়া দ্রুত লেখার দক্ষতাও হারিয়ে ফেলেছে। এক শিক্ষক বলেন, ‘‘বাড়িতে প্রয়োজন অনুযায়ী ভিডিয়ো থামিয়ে থামিয়ে লিখতে গিয়ে দ্রুত লেখার প্রয়োজনও হয়নি।’’

অভিভাবকদের একাংশের বক্তব্য, পড়াশোনার মান খারাপ হওয়ার জন্য পড়ুয়াদের একতরফা দোষ দেওয়া ঠিক নয়। এক অভিভাবক বলেন, ‘‘বাড়িতে থাকাকালীন ওরা পড়া বুঝে নেবেই বা কার কাছ থেকে? কে বা কারা ওদের অ্যাক্টিভিটি টাস্কের উত্তর বুঝিয়ে দেবেন? বেশির ভাগ স্কুলেই অনলাইন ক্লাস নিয়মিত হয়নি। করোনাকালে বেশির ভাগ গৃহশিক্ষকও পড়াননি। পড়ুয়ারাও তো অসহায়। সব মিলিয়ে পড়াশোনার মান খারাপ হয়েছে।’’ এই ক্ষতি সারাতে শিক্ষক-শিক্ষিকারা কী পরিকল্পনা করেছেন, অনেক অভিভাবক সেই প্রশ্ন তুলছেন। তাঁরা জানাচ্ছেন, নতুন শিক্ষাবর্ষে ক্লাসের পড়াশোনাও শুরু হয়ে গিয়েছে। তাই ঘাটতি মেটানোর পথ খোঁজা দরকার।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement