একটি কেন্দ্রে স্যানিটাইজ় করা হচ্ছে পরীক্ষার্থীদের। ছবি: সুমন বল্লভ
অতিমারি পরিস্থিতিতে জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষা। তাই বাড়তি সতর্কতা ছিলই। কিন্তু শনিবার বহু পরীক্ষা কেন্দ্রের বাইরেই পরীক্ষার্থীদের অভিভাবকদের জটলা নজরে এসেছে। কোথাও কোথাও দূরত্ববিধি উড়িয়ে আড্ডার ছবিও ধরা পড়েছে। নির্ঝঞ্ঝাটে পরীক্ষা মিটলেও আমজনতার মধ্যে কোভিড-সতর্কতা নিয়ে এ দিন প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। একই সঙ্গে রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছতে ভিড়ে ঠাসা যানবাহনেও উঠতে
হয়েছে পরীক্ষার্থীদের।
রাজ্য জুড়ে ২৭৪টি কেন্দ্রে এ দিন জয়েন্টের পরীক্ষা হয়েছে। রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু জানান, এ বারের জয়েন্ট এন্ট্রান্সে মোট পরীক্ষার্থী ৯২,৬৯৫ জন। এর মধ্যে রাজ্যের পরীক্ষার্থী ৬০,১০৫ জন। বস্তুত, বিভিন্ন পরীক্ষা কেন্দ্রে বিহার, উত্তরপ্রদেশ, ঝাড়খণ্ড, এমনকি অন্ধ্রপ্রদেশের বহু পরীক্ষার্থীকেও দেখা গিয়েছে। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন অভিভাবকেরাও।
তবে ক্লাসঘরে বসে কাগজে-কলমে পরীক্ষা দিতে পেরে খুশি পরীক্ষার্থীরা। অতিমারির ঠেলায় ঘরবন্দি, অনলাইন ক্লাসের মধ্যে এ যেন খোলা হাওয়া বলেই তাঁদের অনেকে জানিয়েছেন। পরীক্ষার পাঠ-প্রস্তুতির পাশাপাশি অনেকে যে আনুষাঙ্গিক ডোজ়ও নিয়েছেন তা-ও জানিয়েছেন। বিহারের মধুবনি থেকে আসা পরীক্ষার্থী দীপক কুমার বলেন “আমার বয়স ১৯। তাই পরিকল্পনা করে পরীক্ষার আগেই দুটো কোভিড ডোজ় নিয়েছি।’’ দেবস্মিতা দাস নামে আর এক পরীক্ষার্থী বলেন, “বাড়িতেও টানা কয়েক ঘণ্টা মাস্ক পরে লেখা অনুশীলন করেছি। তাই আজ মাস্ক পরে পরীক্ষা দিতে অসুবিধা হয়নি।’’ তাঁর অবশ্য প্রশ্ন, ‘‘এ ভাবে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা কি নেওয়া যেত না?” এ সবের মধ্যেই শ্যামবাজারে মণীন্দ্রচন্দ্র কলেজের সামনে চোখে পড়েছে অভিভাবকদের থিকথিকে ভিড়, জটলা।
উত্তর কলকাতায় জয়েন্ট পরীক্ষা কেন্দ্রের বাইরে অভিভাবকদের ভিড়। ছবি: সুমন বল্লভ
উত্তরবঙ্গের জেলাগুলিতে পরীক্ষার্থীদের সমস্যায় ফেলেছে বৃষ্টি। জল জমে যায় কোচবিহারের একাধিক পরীক্ষাকেন্দ্রে। শিলিগুড়িতে দ্বিতীয়ার্ধে পরীক্ষা শুরুর আগে, পরীক্ষার্থীদের টিফিন দেওয়া নিয়ে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় পরীক্ষাকেন্দ্রে। মেদিনীপুরের তিন জেলায় কিছু কেন্দ্রে পরীক্ষা শুরুর আগে এবং পরে গেটের সামনে অভিভাবকদের ভিড়ে দূরত্ব-বিধি শিকেয় উঠেছিল বলে অভিযোগ। ঝাড়গ্রাম রাজ কলেজে পরীক্ষা দিয়েছেন করোনা সংক্রমিত এক ছাত্রী। তাঁকে আলাদা শৌচাগার যুক্ত ঘরে পরীক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা হয়েছিল। পুরুলিয়া, পূর্ব বর্ধমানে অধিকাংশ পরীক্ষার্থী এবং তাঁদের অভিভাবকেরা জানান, হয় মোটরবাইক কিংবা গাড়ি ভাড়া করে পৌঁছেছেন।
নদিয়ায় বহু পরীক্ষার্থী অটো ভাড়া করেছেন। তবে দূর থেকে যাঁরা এসেছেন, তাঁদের অনেককে ভিড়ে ঠাসা ট্রেনে আসতে হয়েছে। নদিয়ার পলাশি থেকে মুর্শিদাবাদের বহরমপুরে আসা এক পরীক্ষার্থী জানালেন, রেলের স্টাফ স্পেশাল ট্রেনের সময়সূচি জানা না-থাকায় দীর্ঘ ক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়েছে। পরে, কয়েকশো পরীক্ষার্থী হাজারদুয়ারি এক্সপ্রেসে বহরমপুরে পৌঁছন। বহরমপুরের চারটি কেন্দ্রে অভিভাবক, পরীক্ষার্থীদের ভিড়ে করোনা-বিধি শিকেয় উঠেছিল বলে অভিযোগ।
বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরের কে জি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের পরীক্ষাকেন্দ্রে ঢোকার পরে, ঘর এবং ‘সিট’ খুঁজতে পরীক্ষার্থীদেদের মধ্যে হুড়োহুড়ি পড়ে যায়। যদিও কলেজ কর্তৃপক্ষের দাবি, বিভিন্ন জায়গায় সিটের তালিকা টাঙানো ছিল। পুলিশকে মাইকে বার বার ঘোষণা করে সতর্ক করতে হয়। হুগলিতে রাস্তায় পর্যাপ্ত বাস ছিল। দক্ষিণ ২৪ পরগনার বারুইপুর-গড়িয়া সহ বেশ কয়েকটি রুটে পরীক্ষার্থীদের জন্য বিনা মূল্যে বাস পরিষেবা দেয় একটি সংগঠন। হাওড়ায় পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছনো নিয়ে অব্যবস্থার খবর মেলেনি। ঝাড়খণ্ডের যশিডি থেকে পশ্চিম বর্ধমানের দুর্গাপুরে পরীক্ষা দিতে আসা অভিষেক কুমার অবশ্য বলেন, ‘‘ট্রেনে সমস্যা হয়নি। সব জায়গাতেই দূরত্ব-বিধি মানা হয়েছে।’’