ঘটনাস্থল: এখানেই গুলিবিদ্ধ হন মিজানুর। ছবি: সামসুল হুদা
মাঝে মধ্যেই বোমা পড়ে। আতঙ্কে হুড়োহুড়ি পড়ে যায় গ্রামে। কেউ কেউ অশান্তি এড়াতে কিছু দিনের জন্য আত্মীয়-স্বজনের বা়ড়ি চলে যান। আবার ফিরে আসেন ভিটের টানে।
এমন ভাবে দিন কাটছিল মিজানুর রহমান সর্দারের পরিবারেরও। কিন্তু তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর লড়াইয়ের মাঝে পড়ে প্রাণ গিয়েছে মাদ্রাসার ছাত্র, বছর আঠারোর এই তরুণের। তৃণমূলের কর্মী বলে পরিচিত পরিবারটি। তাঁর মৃত্যুতে যুব তৃণমূলকে দায়ী করছেন পরিবারের লোকজন।
এ দিন ক্যানিংয়ের ইটখোলা পঞ্চায়েতের গোলাবাড়ি এলাকায় গিয়ে দেখা দেখা গেল, সুনসান পথঘাট। পুলিশের বুটের ভারী শব্দ উঠছে থেকে থেকে। দূরে একটি বাড়ি থেকে ভেসে আসছে একটানা কান্নার রোল। ওই বাড়িটিই মিজানুরের।
মা রেহেনা সর্দার মাটিতে শুয়ে ছিলেন। মাঝে মাঝে জ্ঞান হারাচ্ছেন। তাঁকে ঘিরে রেখেছেন আত্মীয়-প়ড়শিরা। জ্ঞান ফিরলেই বলছেন, ‘‘আমার ছেলেটা কী দোষ করেছে? ওকে এ ভাবে চলে যেতে হল কেন!’’ সদ্য সন্তানহারা মায়ের চোখের জল দেখে আশেপাশের মহিলারাও ডুকরে উঠছেন।
রেহেনা বলেন, ‘‘মাসখানেক ধরেই এলাকায় গন্ডগোল হচ্ছে। প্রায়ই বোমা-গুলির আওয়াজ পেতাম। মাঝে আমরা ভয়ে বাড়ি থেকে চলে যাই। দিন কয়েক আগে ফিরেছিলাম। রবিবার ফের গোলমাল বেধেছিল। ছেলে তার বন্ধুদের সঙ্গে বেরোলো কী হচ্ছে দেখতে।’’ খানিকক্ষণের মধ্যেই খবর আসে, গুলিবিদ্ধ হয়েছেন মিজানুর। ছেলেকে যারা খুন করল, তাদের কড়া শাস্তি চান মা। তাঁর আফসোস, আগেই যদি শক্ত হাতে গোলমাল থামাত পুলিশ, তা হলে এমন ঘটনা ঘটতই না।
মিজানুর বাসন্তীর মুফতি আবুল কালাম মাদ্রাসার ছাত্র ছিলেন। দুই ভাই, এক বোন। মিজানুর মেজো। এক চিলতে মাটির বাড়িতে অভাবের সংসার।
এ দিন এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, যে জায়গায় মিজানুরের গুলি লেগেছিল, সেখানে এখনও রক্তের দাগ। অনেকে ভয়ে গ্রাম ছেড়ে আত্মীয়-স্বজনের বাড়ি চলে যাচ্ছেন। আবার কখন গন্ডগোল বাধে, সেই আশঙ্কা আছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক গ্রামবাসী বললেন, ‘‘বেশ কিছু দিন ধরে এলাকায় গন্ডগোল হচ্ছে। বুধাখালি, চ্যাটার্জি হাট, গোলাবাড়ি-সহ আশেপাশের এলাকায় বোমাবাজি চলছে। তৃণমূল ও যুব তৃণমূলের মধ্যে বোমা-গুলির লড়াই বাধছে।’’
স্থানীয় বাসিন্দা সুরাবদ্দিন সর্দার বলেন, ‘‘আমরা শৈবাল লাহিড়ির নেতৃত্বে তৃণমূল দল করি। বেশ কিছু দিন ধরে এলাকা দখল করতে যুব নেতা পরেশরাম দাসের লোকজন গন্ডগোল করছে। আমরা আতঙ্কে আছি। প্রশাসন কড়া পদক্ষেপ করে এলাকায় শান্তি ফেরাক।’’