দাবি: বিক্ষোভে সুরেন্দ্রনাথ আইন কলেজের পড়ুয়ারা। বুধবার, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ স্ট্রিট ক্যাম্পাসের সামনে। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী
অভিযোগ, ছাত্রনেতাদের আশ্বাস ছিল, সভায় গেলে পরীক্ষায় বসতে দেওয়া হবে। মঙ্গলবার তাই গাড়ি ভরে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের (টিএমসিপি) প্রতিষ্ঠা দিবসের সভায় গিয়েছিলেন সুরেন্দ্রনাথ আইন কলেজের পড়ুয়ারা! বুধবারই অবশ্য আশাহত হয়েছেন তাঁরা। বিনা শর্তে পরীক্ষায় বসতে দেওয়া তো দূর, উপস্থিতি কম থাকায় ওই পড়ুয়াদের দু’হাজার টাকা করে জরিমানা করেছেন কলেজ কর্তৃপক্ষ।
প্রতিবাদে এ দিনই কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ স্ট্রিট ক্যাম্পাসের গেট অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান ওই পড়ুয়ারা। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পড়ুয়াদের লিখিত ভাবে বিষয়টি জানাতে বলেছেন। সুরেন্দ্রনাথ আইন কলেজের তরফে অবশ্য জানানো হয়েছে, উপস্থিতির হার কম থাকা পড়ুয়াদের কোনও ভাবেই পরীক্ষায় বসতে দেওয়া হবে না। কলেজের সহ-অধ্যক্ষ মহম্মদি তরুন্নম বলেন, ‘‘গত এপ্রিলেই ওই পড়ুয়াদের সতর্ক করা হয়েছিল। তবু তাঁরা কলেজে আসতেন না। পরিচালন সমিতির বৈঠকে ২০০০ টাকা জরিমানা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ওই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার প্রশ্নই নেই।’’
যদিও একটি কলেজ কর্তৃপক্ষের তরফে পড়ুয়াদের কাছ থেকে এত টাকা জরিমানা নেওয়ার নজির সাম্প্রতিককালে নেই। পড়ুয়াদের একাংশ বলছেন, ৭৫-৬০ শতাংশের কম উপস্থিতির হার থাকলে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী ১০০ টাকা জরিমানা নেওয়া হয়। সেখানে সুরেন্দ্রনাথ আইন কলেজ কী করে ২০০০ টাকা জরিমানা দাবি করছে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা। এক পড়ুয়ার মন্তব্য, ‘‘এ তো পড়ার খরচের থেকে জরিমানার খরচ বেশি! দ্রুত কলেজকে এই জরিমানার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করতে হবে।’’ জরিমানার অঙ্ক এত বেশি কেন, সেই প্রশ্নের উত্তর অবশ্য সহ-অধ্যক্ষ দেননি।
সুরেন্দ্রনাথ আইন কলেজ সূত্রের খবর, পাঁচ বছরের কোর্সের প্রতি বছর দু’টি করে সেমেস্টারে পরীক্ষা হয়। চলতি বছরে প্রয়োজনীয় উপস্থিতির হার না থাকায় ৪৪১ জনকে ‘নন-কলেজিয়েট’ এবং ‘ডিসকলেজিয়েট’ ঘোষণা করা হয়েছে। সম্প্রতি ওই পড়ুয়াদের অভিভাবকদের ডেকে কথাও বলেন কলেজ কর্তৃপক্ষ। তবে তাতে সমাধানসূত্র বেরোয়নি। গত ২৭ অগস্ট পরিচালন সমিতির বৈঠকে ২০০০ টাকা জরিমানার বিনিময়ে ওই পড়ুয়াদের পরীক্ষায় বসতে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। তবে তা পড়ুয়াদের জানানো হয়নি বলে অভিযোগ পড়ুয়াদের একাংশের। এক পড়ুয়া বলেন, ‘‘২০০০ টাকা জরিমানার কথা বুধবার ফর্ম ভরার শেষ দিনে জানানো হয়েছে। এক দিনে এত টাকার ব্যবস্থা করার মতো আর্থিক পরিস্থিতি নেই অনেকেরই। আরও সময় দেওয়া হোক।’’
অন্য এক পড়ুয়ার দাবি, ‘‘কোনও কলেজ জরিমানা বাবদ এত টাকা নিতে পারে না। ছাত্রনেতারা তো বলেছিলেন মিছিলে গেলে পরীক্ষায় বসতে দেওয়া হবে। তা তো হল না। ওই ২০০০ টাকার ভাগ নেবে ছাত্র সংগঠনও।’’ ছাত্র সংগঠনের তরফে টিএমসিপি-র অমিতাভ আইচ বলেন, ‘‘পরীক্ষায় বসতে দেওয়ার আশ্বাসে কাউকে মিছিলে নিয়ে যাওয়া হয়নি। আমরা বলেছিলাম, বিষয়টি দেখব। পরে কলেজ কর্তৃপক্ষ যা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, সেটাই শেষ কথা।’’
সুরেন্দ্রনাথ আইন কলেজের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এ ব্যাপারে উপাচার্য সোনালি চক্রবর্তী বন্দ্যোপাধ্যায় মন্তব্য করতে না চাইলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘১৮ সেপ্টেম্বর থেকে ওই কলেজে পরীক্ষা। ফর্ম ভরার জন্য পড়ুয়াদের আরও সময় দেওয়া যায় কি না, তা দেখতে বলা হয়েছে।’’ আপাতত বিষয়টি কলেজের উপরেই ছেড়ে দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।