প্রতীকী ছবি।
মেয়ে উচ্চ মাধ্যমিক দিচ্ছে। পরীক্ষা চলাকালীন কেন্দ্রের বাইরে অপেক্ষা করতেন বাবা-মা। পরীক্ষা শেষে সকলে একসঙ্গে ফিরতেন।
তাল কাটল মঙ্গলবার। মেয়ে সময় মতো পরীক্ষা দিতে ঢুকলেও পরীক্ষা কেন্দ্রে আর পৌঁছনোই হল না মায়ের। পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হল তাঁর। পরীক্ষা দিয়ে বেরিয়ে শিক্ষকদের কাছে মেয়ে শুনল, মায়ের মৃত্যুসংবাদ।
উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী যূথী পাত্র কাঁথির সাতমাইলের পশ্চিম মানিকপুরের বাসিন্দা। তিনি সাতমাইল হাইস্কুলের ছাত্রী। তার উচ্চ মাধ্যমিকের পরীক্ষা কেন্দ্র কাঁথি হিন্দু বালিকা বিদ্যালয়। পরীক্ষার দিনগুলো সাতমাইল হাইস্কুলের সামনে থেকে ভাড়ার গাড়িতে পরীক্ষাকেন্দ্রে আসতেন যূথী এবং তাঁর কয়েক জন বান্ধবী। যূথীর বাবা বিদ্যুৎ পাত্র এবং মা ঝর্না পাত্র (৪৩) সেই গাড়ির পিছনে স্কুটি নিয়ে পৌঁছতেন পরীক্ষা কেন্দ্রে।
এ দিন ছিল অঙ্ক পরীক্ষা। যূথীদের গাড়ি ঠিক সময়ে রওনা হয়। পিছনে স্কুটিতে কাঁথি রওনা দেন বিদ্যুৎ ও ঝর্না। পুলিশ সূত্রে খবর, এগরা-কাঁথি সড়কে কাঁথি রেল ক্রসিংয়ের কাছে স্কুটি থেকে পড়ে যান ঝর্না। সাতমাইল হাইস্কুলের আরেক পরীক্ষার্থীর অভিভাবক তখন বাইকে কাঁথির দিকে আসছিলেন। তিনি ও স্থানীয়রা ঝর্নাকে উদ্ধার করে কাঁথি মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানেই মৃত্যু হয় তাঁর।
যূথী তখনও কিছুই জানেন না। তিনি তখন অঙ্ক পরীক্ষা দিচ্ছেন। পরীক্ষা শেষের আগেই সেখানে পৌঁছন যূথীর স্কুলে প্রধান শিক্ষক স্থিতধী দাস। সঙ্গে সহ-শিক্ষকেরা। পরীক্ষা দিয়ে বেরিয়ে বাবা-মা’কে দেখতে না পেয়ে চিন্তায় পড়েন যূথী। পরে শিক্ষকদের কাছে দুর্ঘটনায় মায়ের মৃত্যুর খবর পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।
বিদ্যুৎ বলেন, “রাস্তায় একটা গর্ত ছিল। সেই গর্তে পড়ে যায় স্কুটিটা। ঝর্না পড়ে যায়। ওকে যে এ ভাবে হারাতে হবে, ভাবিনি।’’ যূথীর পরের পরীক্ষা শনিবার। মায়ের মৃত্যুর ধাক্কা সামলে মেয়ে পারবে তো পরীক্ষা দিতে, সেই চিন্তায় এখন তোলপাড় পাত্র পরিবার।