বৈশাখী ঝড় আর বৃষ্টিতে বন্ধ ট্রেন, বিপর্যস্ত উড়ান

দিন ছয়েক আগে বৈশাখী ঝড়ের ঝাপটায় ডাল ভেঙে তার ছিঁড়ে সারা রাত বন্ধ ট্রেনে বন্দি ছিলেন যাত্রীরা। আর মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এক ঘণ্টার কালবৈশাখীর দাপটে কলকাতা, হাওড়া এবং শহরতলিতে বিপর্যস্ত হয়ে গেলেন ঘরমুখী হাজার হাজার মানুষ। হাওড়া ও শিয়ালদহে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় স্টেশনে স্টেশনে ভিড় করেন দিশাহারা যাত্রীরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:৪৪
Share:

দিন ছয়েক আগে বৈশাখী ঝড়ের ঝাপটায় ডাল ভেঙে তার ছিঁড়ে সারা রাত বন্ধ ট্রেনে বন্দি ছিলেন যাত্রীরা। আর মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এক ঘণ্টার কালবৈশাখীর দাপটে কলকাতা, হাওড়া এবং শহরতলিতে বিপর্যস্ত হয়ে গেলেন ঘরমুখী হাজার হাজার মানুষ। হাওড়া ও শিয়ালদহে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় স্টেশনে স্টেশনে ভিড় করেন দিশাহারা যাত্রীরা। কলকাতায় ২০ মিনিট বিমান ওঠানামা বন্ধ রাখতে হয়। ফলে বিমানবন্দরেও ছিল উদ্বিগ্ন মুখের ভিড়। বিভিন্ন জায়গায় গাছ পড়ে, জল জমে সড়কপথেও আটকে যায় যানবাহন। চলাচল ঠিক রেখে কিছুটা বাঁচিয়েছে মেট্রো রেল।

Advertisement

ট্রেন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় শিয়ালদহ, হাওড়া এবং শহরতলির বিভিন্ন স্টেশনে হাজার হাজার যাত্রী আটকে পড়েন। অনেকে সড়কপথে বাড়ি ফেরার চেষ্টা করেন। বাস, মিনিবাস, অটো, এমনকী লরি থামিয়েও ঝাঁপিয়ে পড়তে দেখা যায় মরিয়া যাত্রীদের। কিন্তু জল জমে এবং গাছ পড়ে কার্যত স্তব্ধ হয়ে যায় বিভিন্ন সড়ক। থমকে যায় যানবাহন। ফলে রেলের বিকল্প পথে ফেরার আশা জলাঞ্জলি দিয়ে রাত পর্যন্ত মাঝরাস্তায় আটকে থাকতে বাধ্য হন অনেকে। আগের বিপর্যয়ের দিন রাতভর আটকে থাকতে হয়েছিল অচল ট্রেনে। আর এ দিন ঝড়বৃষ্টিতে বেহাল সড়কে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় ঘণ্টার পর ঘণ্টা।

আলিপুর আবহাওয়া দফতরের হিসেব অনুযায়ী এ দিন কালবৈশাখী ঝড়ের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৫২ কিলোমিটারের কাছাকাছি। হাওয়া অফিস জানিয়েছে, আজ, বুধবারেও কলকাতা-সহ গোটা দক্ষিণবঙ্গের সব জেলায় কালবৈশাখীর সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষ করে উত্তরবঙ্গে তরাই ও ডুয়ার্সে ভারী বৃষ্টি হতে পারে।

Advertisement

মঙ্গলবার বিমানবন্দরে বিপত্তি শুরু হয়েছিল ঝড়বৃষ্টি নামার আগেই। বিমানবন্দর সূত্রের খবর, বিকেল সাড়ে ৫টা নাগাদ প্রথমে দিল্লিগামী একটি বিমান যান্ত্রিক ত্রুটির জেরে আটকে পড়ে। যাত্রীদের ভোগান্তির সূচনা হয় তখনই। তার পরে শুরু হয় দুর্যোগ। প্রবল ঝড়বৃষ্টিতে প্রায় ২০ মিনিটের জন্য বন্ধ রাখা হয় বিমান পরিষেবা। বিমান ওড়া তো বটেই, বন্ধ হয়ে যায় বিমানের অবতরণও। বেশ কিছু ক্ষণ চক্কর কেটেও নামতে না-পেরে অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য হয় কয়েকটি উড়ান। এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল (এটিসি) জানায়, আবু ধাবি থেকে আসা একটি বিমান কলকাতায় নামতে না-পেরে বাংলাদেশ চলে যায়। একই কারণে গুয়াহাটি চলে যায় আগরতলা থেকে কলকাতা আসা স্পাইসজেটের একটি উড়ান। ঝড়ের সময় বেশ কিছু বিমানকে আকাশে চক্কর কাটার নির্দেশ দেওয়া হয়।

কলকাতা পুরসভার হিসেব অনুযায়ী এ দিন শহরে এক ঘণ্টায় বৃষ্টি হয়েছে ৮০ মিলিমিটার। পুরসভার আধিকারিকেরা জানান, উত্তর কলকাতায় বৃষ্টি হয়েছে দক্ষিণের তুলনায় অনেকটাই বেশি। জল জমে যায় চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ের একাংশ, বিধান সরণি, ঠনঠনিয়া কালীবাড়ি এলাকায়। গাছ ভেঙে পড়ে গিরিশ অ্যাভিনিউ, আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রোড, সুকিয়া স্ট্রিট, বিধান সরণিতে। ফলে সর্বত্রই যানজটে আটকে পড়েন মানুষ। লেনিন সরণিতে তিনটি গাড়ির উপরে গাছ ভেঙে পড়ে। কোনও গাড়িতেই অবশ্য যাত্রী ছিল না। মহানগরে বাড়ি ভেঙেছে দু’টি। জল জমার সমস্যা থেকে রেহাই পায়নি দক্ষিণ কলকাতাও। বিভিন্ন এলাকায় হাঁটুসমান জল জমে যায়।

২২ এপ্রিলের ঝড়ে মেন লাইনে গাছের ডাল ভেঙে ওভারহেড তার ছিঁড়ে যাওয়ায় শিয়ালদহে প্রায় সারা রাত ট্রেন বন্ধ ছিল। এ দিন ঝড়বৃষ্টির দাপটে শুধু শিয়ালদহ নয়, হাওড়াতেও ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায় সন্ধ্যা থেকেই। পূর্ব রেল সূত্রের খবর, হাওড়া কারশেডের কাছে গাছ পড়ে ওভারহেড তার ছিঁড়ে যাওয়ায় হাওড়া মেন লাইন ও কর্ড শাখায় ট্রেন চলাচল থমকে যায়। বন্ধ হয়ে যায় দক্ষিণ-পূর্ব রেলের হাওড়া-খড়্গপুর শাখার ট্রেনও। প্রায় আধ ঘণ্টা পরে হাওড়া-খড়্গপুর শাখার ট্রেন চালু হলেও মেন লাইন রাত পর্যন্ত বন্ধই ছিল। ফের বিপর্যস্ত হয়ে যায় শিয়ালদহের ট্রেন চলাচলও।

বৃষ্টি ও ঝড়ের দাপটে বিধাননগর ও কাঁকুড়গাছির মধ্যে ওভারহেড তারে বেশ কিছু কাপড় ও গাছের ডাল এসে পড়ায় বিদ্যুৎ ‘ট্রিপ’ (লো-ভোল্টেজ) করতে শুরু করে। এর ফলে শিয়ালদহ মেন লাইনেও ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সব শাখাতেই বেশ কিছু ট্রেন বাতিল করা হয়। বেশি রাত পর্যন্ত ট্রেন চলাচল শুরু করা যায়নি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement