মরসুমের প্রথম বৃষ্টির দেখা মিলল সোমবার। এ দিন সন্ধ্যায় দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলাতেই ঝড়-বৃষ্টি হয়। সঙ্গে ছিল বজ্রপাত। বর্ধমানের কাঁকসা ও রানিগঞ্জে পৃথক তিনটি ঘটনায় বজ্রাঘাতে চার জনের মৃত্যু হয়েছে। বীরভূমে মারা গিয়েছেন এক জন। অন্য জেলাগুলিতে কেউ হতাহত হননি। রাত পর্যন্ত বিশেষ ক্ষয়ক্ষতিরও খবর পাওয়া যায়নি।
এ দিন বজ্রাঘাতে মৃত্যুর ঘটনাগুলি ঘটে বর্ধমানের কাঁকসা ও রানিগঞ্জে। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন সন্ধ্যায় কাঁকসার অযোধ্যার বাসিন্দা পারুল বাউড়ি (৪০) নামে এক মহিলার বাড়িতে বাজ পড়লে ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়। তাঁর বাড়িতে আগুন লেগে যায়। একই ভাবে কাঁকসার তেলিপাড়া গ্রামের বাজ পড়ে মারা যান বীরু বাগদি (৪৫)। তাঁর বাড়িতে বাজ পড়ে। অন্য দিকে, এ দিন বিকেলে রানিগঞ্জের সিয়ারসোল সংলগ্ন এলাকার ইটভাটা থেকে কাজ করে ফেরার সময় স্থানীয় গ্যারেজ মোড়ের সামনে বাজ পড়ে দু’জন মারা গিয়েছেন। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতদের নাম সুরেশ কোরা (৩০) ও যোগা কোরা (৩২)। এই দুর্ঘটনায় একজন আহত হয়েছেন। মৃতদের বাড়ি রানিগঞ্জ পুরসভার ৫ ওয়ার্ডে। তাঁদের রানিগঞ্জের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা মৃত বলে ঘোষণা করেন। এ দিন রানিগঞ্জ-জামুড়িয়ার বিভিন্ন জায়গায় বিকেল থেকেই ঝড় বৃষ্টি শুরু হয়। জামুড়িয়া ইকড়া গ্রামের বাসন্তী মেলা বৃষ্টিতে ভেস্তে গিয়েছে।
বীরভূমের বিভিন্ন জায়গায় পৌনে চারটে থেকে শুরু হয় বৃষ্টি। দফায় দফায় বজ্র-বিদ্যুৎ সহ বৃষ্টি হয় জেলার বিভিন্ন প্রান্তে। ময়ূরেশ্বরে বজ্রাঘাতে মৃত্যু হয় অনিল বাউরি (৪০) নামে এক ব্যক্তির। জেলার কোনও কোনও শহর এলাকায় জলও জমে যায়। সন্ধ্যা পেরিয়ে এ দিন রাতেও বৃষ্টি হয়েছে। জেলা কৃষি দফতর সূত্রে খবর, এখন মাঠে যেহেতু ফসল নেই, মাঠে জল না জমলে ক্ষতির আশঙ্কা কম।
ঝড়বৃষ্টিতে বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুর পুরসভার ১০ নম্বর ওয়ার্ডের মুচিগলি এলাকায় মাটির দেওয়াল ও টালির চালার একটি বাড়ি ভেঙে পড়ে। ঘটনায় কেউ হতাহত হননি। এ দিন সন্ধ্যায় ঝমঝমে বৃষ্টির সঙ্গে ঝোড়ো হাওয়া বইতে থাকে বিষ্ণুপুরে। আর তাতেই ভেঙে পড়ে বাড়িটি। খবর পেয়ে পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে আসেন রাজ্যের মন্ত্রী শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় ও ওই ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী রবিলোচন দে। ভেঙে যাওয়া বাড়ির মালিক পেশায় বিড়ি শ্রমিক চঞ্চলা রুইদাস বলেন, “বাড়ির ভিতরে মেয়ের সঙ্গে বসে ছিলাম। হুড়মুড় করে ধসে পড়ল ঘর। প্রাণ হাতে দৌড়ে বেরিয়ে এলাম কোনও মতে।” ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে প্রাথমিক স্কুলে রাখা হয়েছে। তাঁদের আর্থিক সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন মন্ত্রী।
এ দিন সকাল থেকে দুই মেদিনীপুরের আকাশেই ছিল মেঘের ঘনঘটা। বৃষ্টি নামতে বিকেল গড়িয়ে যায়। মেদিনীপুর শহরে বৃষ্টি নামে সাড়ে পাঁচটা নাগাদ। এক ঘণ্টা টানা বৃষ্টি হয়। পূর্ব মেদিনীপুরে অবশ্য বৃষ্টি নেমেছে কিছুটা পরে। হলদিয়ায় সাড়ে সাতটা থেকে বৃষ্টি নামে। তবে তার তীব্রতা ছিল না। মহিষাদলের দিকে ভালই বৃষ্টি হয়। আবহাওয়া দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, আজ, মঙ্গলবারও দিঘা উপকূল সংলগ্ন এলাকায় বজ্র-বিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা আছে।
এ দিন বিক্ষিপ্ত ঝড়-বৃষ্টি হয়েছে নদিয়া ও মুর্শিদাবাদেও। নবদ্বীপে ঝড় না হলেও ঘণ্টা দেড়েক মুষলধারে বৃষ্টি হয়। কৃষ্ণনগরে আবার আজ, মঙ্গলবার থেকে শুরু হচ্ছে বারোদোলের মেলা। এ দিন সন্ধে থেকে মেঘ ঘনিয়ে আসায় তাই শহরবাসী চিন্তায় ছিলেন। তবে এখানে বৃষ্টি বিশেষ হয়নি। বহরমপুরে ব্যারাক স্কোয়ার ময়দানে এ দিন বিএসএফের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে মেলা ও প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। কিন্তু বিকেল থেকে মুষলধারে বৃষ্টি নামায় ভেস্তে যায় এ দিনের অনুষ্ঠান।
হুগলিতেও ঝড়বৃষ্টি হয় এ দিন। সন্ধ্যা ছ’টা নাগাদ চুঁচুড়া, পোলবা, ধনেখালি, মগরা, সিঙ্গুর, হরিপাল, চন্দননগর, শ্রীরামপুের ভাল ঝড় হয়। কয়েক ঘণ্টা বৃষ্টি হয়। আবহাওয়া ঠান্ডা হওয়ায় স্বস্তির শ্বাস ফেলেন সকলেই।