টাকা নিচ্ছেন তৃণমূল নেতারা, টিভির পর্দায় চোখ মেদিনীপুরেও।
সোমবার দুপুর। খড়্গপুর আইআইটির মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের পরীক্ষাগারে ব্যস্ত ছিলেন গবেষক ছাত্র অভিমন্যু কর। কাজের মাঝেই স্মার্ট ফোনে ‘নোটিফিকেশন টোন’। হোয়্যাটস অ্যাপে এক বন্ধু ওয়েবপেজের লিঙ্ক পাঠিয়েছেন। আঙুলের ছোঁয়ায় খুলে গেল ইউটিইউব। তারপরই চক্ষু ছানাবড়া করে দেওয়া সেই দৃশ্য!
নারদ নিউজের স্টিং অপারেশনের সেই ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে— মুকুল রায়, সুব্রত মুখোপাধ্যায়, শুভেন্দু অধিকারীর মতো একের পর এক তৃণমূল নেতার হাতে লক্ষ-লক্ষ টাকার বান্ডিল বাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। সাদরে টাকা নিয়ে নিচ্ছেন তৃণমূলের শীর্ষ সব নেতা-নেত্রীরা। সে সব দেখে অভিমন্যুর প্রতিক্রিয়া, “এ ভাবে টাকা নেওয়াটা রাজনৈতিক নেতাদের দস্তুর। এখন প্রযুক্তি এগিয়ে গেছে বলে সহজে এ সব প্রকাশ্যে আসছে। আমার মনে হয় এতে গণতন্ত্র চাঙ্গা হচ্ছে।”
বিধানসভা নির্বাচনের মুখে তৃণমূল নেতাদের টাকা নেওয়ার এই ভিডিওতে গোটা রাজ্য তোলপাড়। ব্যতিক্রম নয় খড়্গপুরও। সোমবার বেলা বাড়তেই শহর জুড়ে ভিডিও ঘিরে চর্চা শুরু হয়। টেলিভিশন, সোশ্যাল মিডিয়ার হাত ধরে ভিডিও পৌঁছে যায় মানুষের ঘরে ঘরে। বিশেষ করে আলোড়িত অল্পবয়সীরা। প্রযুক্তির পীঠস্থান আইআইটি চত্বরের অনেক পড়ুয়া তো তা দেখে রীতিমতো অবাক হন। এ সব প্রযুক্তির কারসাজি কিনা, তা নিয়ে বিতর্কের মধ্যেই অনেকের মত, ভোটে এর প্রভাব পড়বে। এক যুবক পুরনো প্রবাদ, ‘চোরের সাতদিন গৃহস্থের একদিন’।
ক’দিন আগে খড়্গপুরে চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে টাকা নেওয়ার অভিযোগে তৃণমূলের লেবার সেলের রাজ্য চেয়ারম্যান বলে পরিচিত তারক ভট্টাচার্যকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। তৃণমূলেরই এক কর্মী সেই অভিযোগ দায়ের করেছিলেন খড়্গপুর টাউন থানায়। এতে অস্বস্তিতে পড়েন শাসক দলের নেতারা। ভোটের মুখে এ দিন এমন ভিডিও প্রকাশ্যে চলে আসায় শহরের ফের প্রশ্নের মুখে তৃণমূলের ভাবমূর্তি। খড়্গপুর কলেজের বাণিজ্য বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র আবীর ভট্টাচার্য বলেন, “কিছুদিন আগে খুড়তুতো ভাইকে আইটিআই-তে ভর্তি করানোর সময় জেলার এক তৃণমূল নেতা টাকা চেয়েছিল। এখন দেখছি ওই দলে সবাই এ রকম। পাঁচবছর আগে ভেবেছিলাম অনেক পরিবর্তন হবে। এখন সব মিথ্যে মনে হয়।” খড়্গপুর কলেজেরই দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী শাহনাজ খাতুনের আক্ষেপ, “আমরা অনেকেই নেতাদের ভরসা করি। কিন্তু ওঁদের আসল রূপ এটাই।”
অবশ্য বিধানসভা নির্বাচনের মুখে এই ভিডিওকে হাতিয়ার করতে উদ্যোগী হয়েছে বিরোধী দলের যুব নেতারা। খড়্গপুরের ডিওয়াইএফের জোনাল সম্পাদক সুরজিৎ সমাদ্দার বলেন, “আমি ভিডিওটি দেখেছি। এটা কী ভাবে আরও ছড়িয়ে দেওয়া যায় তার ব্যবস্থা করব। নির্বাচনে তৃণমূলের মুখ পুড়বে।” একই সুরে ছাত্র পরিষদের শহর সভাপতি অরিত্র দে-র বক্তব্য, “তৃণমূলের চরিত্র কী তা আরও একবার প্রমাণ সমেত প্রকাশ্যে এল। কলেজে ভর্তি হতে গেলে টাকা, প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরিতে লক্ষ লক্ষ টাকা নিচ্ছে তৃণমূল নেতারা।” যদিও শহরের তৃণমূলের ছাত্র নেতা রাজা সরকারের দাবি, “আমিও ভিডিও দেখেছি। তবে বিশ্বাস হয়নি। আগেও বহু দুর্নীতির ভিডিও মিথ্যে বলে প্রমাণ হয়েছে।”