বিকাশ ভবনের সামনে বিক্ষোভ দেখাতে গিয়ে শিশু শিক্ষা কেন্দ্র বা এসএসকে-র শিক্ষিকাদের বিষ পান ফাইল চিত্র
কখনও এক শ্রেণির শিক্ষক-শিক্ষিকা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতে গিয়ে দাবিদাওয়া জানানোর তাগিদে টালির নালায় নেমে পড়ছেন। কখনও বা বিধাননগরে বিকাশ ভবনের সামনে বিক্ষোভ দেখাতে গিয়ে শিশু শিক্ষা কেন্দ্র বা এসএসকে-র শিক্ষিকাদের কেউ কেউ বিষ পান করছেন। একের পর এক এই ধরনের বিক্ষোভ আন্দোলনের আগাম কোনও খবর পুলিশের কাছে থাকছে না কেন, সেই প্রশ্ন জোরদার হচ্ছে। প্রশ্ন উঠছে গোয়েন্দাদের ‘ব্যর্থতা’ নিয়েও।
বিশেষ করে সম্প্রতি সল্টলেকে আন্দোলনরত শিক্ষিকাদের কীটনাশক খাওয়ার ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া শুরু হয়েছে রাজ্য ও কলকাতা পুলিশের অন্দরমহলে। কর্তারা বেজায় ক্ষুব্ধ। কারণ, ঘটনার দিন আন্দোলনরত শিক্ষিকারা যখন শিশি থেকে বিষ পান করছিলেন, তখন কর্তব্যরত কয়েক জন পুলিশ অফিসারকে মোবাইলে ছবি তুলতেও দেখা গিয়েছে। বিশেষত এই ঘটনাটি চরম প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে রাজ্য পুলিশের অন্দরমহলে।
রাজ্য গোয়েন্দা দফতরের তরফে সব কমিশনারেট ও পুলিশ-জেলায় আন্দোলন ও বিক্ষোভের বিষয়ে সতর্ক থাকার জন্য একটি নির্দেশ জারি করা হয়েছে। রাজ্য গোয়েন্দা দফতরের অফিসারদেরও এই নিয়ে সতর্ক করে দিয়েছেন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ। “বিশেষত আন্দোলনরত শিক্ষক-শিক্ষিকারা আমাদের মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠেছেন। তাঁরা কখন কোথায় আচমকা বিক্ষোভ দেখাবেন, বোঝা যাচ্ছে না। পাওয়া যাচ্ছে না আগাম খবর,” বলেন এক অফিসার।
রাজ্য গোয়েন্দা পুলিশের কর্তারা জানান, সম্প্রতি কয়েক জন মন্ত্রীর বাড়ির সামনেও বিক্ষোভ-আন্দোলন হয়েছে। ঘটনাস্থলে পুলিশ পৌঁছেছে আন্দোলনকারীরা নির্দিষ্ট জায়গায় জড়ো হয়ে যাওয়ার পরে। তার পরে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় থানার কাছে আগাম কোনও খবরই ছিল না বলে অভিযোগ।
বিধানসভা নির্বাচনের আগে আদিগঙ্গায় সাঁতার কেটে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিলেন কয়েক জন আন্দোলনরত শিক্ষক-শিক্ষিকা। পরিস্থিতি সামাল দিতে ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন কলকাতার পুলিশ কমিশনার সৌমেন মিত্র।
রাজ্য গোয়েন্দা পুলিশেরৃ কর্তাদের আশঙ্কা, যদি পরপর এই ধরনের ঘটনা ঘটতে থাকে, তা হলে যে-কোনও সময়েই বড় ধরনের কোনও বিপর্যয়ের মুখে পড়তে হতে পারে। সল্টলেকে শিক্ষিকাদের কীটনাশক খাওয়ার ঘটনায় রাজ্য প্রশাসনের সর্বোচ্চ স্তরে তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়েছে বলে জানাচ্ছেন গোয়েন্দাকর্তারা। ওই ঘটনার জের উচ্চ আদালতেও পৌঁছে গিয়েছে, যা প্রশাসনের কাছে অস্বস্তিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে বলে জানাচ্ছেন পুলিশকর্তারা। সেই জন্যই আন্দোলনকারী সংগঠনগুলির উপরে নজর রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে নিচু তলার পুলিশকে। আন্দোলনকারীদের গতিবিধির আগাম খবর রাখার ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সব কমিশনারেট ও জেলা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানান রাজ্য পুলিশের গোয়েন্দাকর্তারা।