প্রতীকী ছবি।
কয়েক দিন ধরেই জ্বর। সঙ্গে হাঁচি হচ্ছে, কাশিও রয়েছে। কিন্তু করোনা পরীক্ষায় রিপোর্ট এল নেগেটিভ। শেষে দেখা গেল, ওই রোগী ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত। করোনার তৃতীয় ঢেউ আসার আগে রাজ্যে ইনফ্লুয়েঞ্জা সংক্রমণ বেড়েছে বলেই স্বাস্থ্য শিবিরের পর্যবেক্ষণ। সেই সঙ্গে তারা জানাচ্ছে, ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত অনেকের নিউমোনিয়াও হচ্ছে। তাতে রোগী সঙ্কটজনক হয়ে পড়ছেন।
করোনার মধ্যে এই নয়া সমস্যার মোকাবিলায় জোর দিচ্ছে স্বাস্থ্য দফতর। রাজ্যের যুগ্ম স্বাস্থ্য অধিকর্তা (জনস্বাস্থ্য) ও চিকিৎসক দীপঙ্কর মাজি শুক্রবার সব জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক, মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালগুলিতে নির্দেশিকা পাঠিয়ে জানিয়েছেন, প্রত্যেকের জন্য অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ ‘ওসেল্টামিভির’ বরাদ্দ করা হয়েছে। প্রত্যেকে যেন দ্রুত কেন্দ্রীয় মেডিক্যাল স্টোর থেকে সেই ওষুধ তুলে মজুত করে রাখেন। যাতে হাসপাতালে নন-কোভিড কিন্তু নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত কোনও রোগী এলে তৎক্ষণাৎ তাঁকে ওই ওষুধ দেওয়া যায়। দেখা যাচ্ছে, এই ধরনের নন-কোভিড রোগীরা মূলত ‘ইনফ্লুয়েঞ্জা-এ’ টাইপ (এইচ৩এন২) এবং কিছু রোগী সোয়াইন ফ্লু (এইচ১এন১)-তে আক্রান্ত।
চিকিৎসকদের একাংশের মতে, গত বছর কোভিডের কারণে অনেকেই ফ্লু-এর প্রতিষেধক নিতে পারেননি। সেই জন্যই এ বছর বর্ষার মরসুমে বেশি সংখ্যক মানুষ ফ্লু-তে আক্রান্ত হচ্ছেন। সংক্রমণ বিশেষজ্ঞ যোগীরাজ রায় জানাচ্ছেন, বয়স্ক, সিওপিডি, অ্যাজ়মা বা অন্য কোমর্বিডিটিতে ভোগা লোকজন এবং কম প্রতিরোধ শক্তির মানুষের ক্ষেত্রে ইনফ্লুয়েঞ্জাও বিপজ্জনক। তাঁদের নিউমোনিয়া হলে অনেক ক্ষেত্রে তা জটিল আকার নিচ্ছে। কখনও কখনও তা প্রাণঘাতীও হয়ে উঠতে পারে। নন-কোভিড, কিন্তু নিউমোনিয়ায় আক্রান্তদের ক্ষেত্রে ওই ওষুধ ভাল কাজ করে।
চিকিৎসক মহল জানাচ্ছে, ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত রোগীকে যদি প্রথম দিকেই ‘ওসেল্টামিভির’ দেওয়া যায়, তা হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। তাই স্বাস্থ্য দফতরের নির্দেশিকায় জানানো হয়েছে, জেলা ও কলকাতার হাসপাতালগুলি নিয়মিত ‘ওসেল্টামিভির’ কিনলেও পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে ওসেল্টামিভিরের ৩০ এবং ৭৫ মিলিগ্রামের ক্যাপসুল অতিরিক্ত পরিমাণে দেওয়া হচ্ছে। কলকাতার মেডিক্যাল কলেজের মতো হাসপাতালগুলিকে দেওয়া হচ্ছে বাড়তি ৫৬০ বাক্স এবং জেলার সদর হাসপাতালগুলিতে যাচ্ছে অতিরিক্ত ৩৪০০ বাক্স ওষুধ। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অনির্বাণ দোলুই বলেন, ‘‘কোভিড পরীক্ষার রিপোর্ট নেগেটিভ এলেও জ্বরের রোগী কমেনি। বরং বাড়ছে। তাঁদের মধ্যে বেশির ভাগেরই ইনফ্লুয়েঞ্জা হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তাই বার বার বলা হচ্ছে, সাধারণ জ্বর হলেও অবহেলা করা যাবে না।’’