ফাইল চিত্র।
প্রাক্তন মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়কে ঘিরে নতুন জটিলতার মোকাবিলায় আইনি পথের ভাবনাচিন্তা শুরু হয়েছে প্রশাসনের অন্দরে। এই বিষয়ে রাজ্যের শাসক দলের পক্ষে রাজনৈতিক মতামত তৈরি হলেও তাকে তেমন গুরুত্ব দিতে চাইছে না সরকার। বরং গোটা বিষয়ে প্রশাসনিক ভাবে আলাপনের পাশে থাকার বার্তাই দিচ্ছে নবান্ন।
প্রশাসনের অন্দরের বক্তব্য, আলাপনকে ঘিরে গোটা ঘটনা পরম্পরা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল রয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বয়ং। এমনকি, অবসরের পরে তাঁকে মুখ্য উপদেষ্টা পদে নিয়োগ করা হয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর ইচ্ছাতেই। তাই কোনও বিষয়ই মুখ্যমন্ত্রীর অজানা নয়। এক শীর্ষ কর্তার কথায়, “এই ব্যাপারে আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশেই রয়েছে নবান্ন।”
মঙ্গলবারই তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায় কেন্দ্রের বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক আচরণের অভিযোগ তুলে বলেন, “রাজ্যকে বিপর্যস্ত করার চেষ্টা হচ্ছে। ডিওপিটি প্রধানমন্ত্রীর অধীনে একটি দফতর। সুতরাং ধরে নিতে হবে, যা হচ্ছে তা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশেই হচ্ছে।” পদ্ধতিগত প্রশ্ন তুলে তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায়ের মন্তব্য, “একজন অবসরপ্রাপ্ত আমলার বিরুদ্ধে এই ভাবে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া যায় না। যদি না তাঁর বিরুদ্ধে কোনও আর্থিক তছরুপের অভিযোগ থাকে। অবিলম্বে কেন্দ্রের নোংরামি বন্ধের দাবি জানাচ্ছি।’’
সংশ্লিষ্ট আদেশনামায় কেন্দ্রের কর্মিবর্গ মন্ত্রক স্পষ্ট জানিয়েছে, এই বিষয়ে কোনও রাজনৈতিক বা প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করলে, তা আলাপনের বিরুদ্ধে সার্ভিস কনডাক্ট আইনের ১৮ নম্বর ধারা ভঙ্গ বলে ধরা হবে। প্রশাসনিক পর্যবেক্ষকদের অনেকেই জানাচ্ছেন, অতীতে আলাপনের সমর্থনে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি পাঠিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই দিক থেকে কর্মিবর্গ মন্ত্রকের এই উল্লেখ তাৎপর্যপূর্ণ। সেই কারণেই সম্ভবত রাজনৈতিক মতামতকে গুরুত্ব না দিয়ে প্রশাসনিক ভাবে আইনি রাস্তা খুঁজছে নবান্ন।
সংশ্লিষ্ট মহলের ব্যাখ্যা, চার্জশিট-সহ সংশ্লিষ্ট আদেশনামায় ‘অল ইন্ডিয়া সার্ভিসেস’ (ডিসিপ্লিন অ্যান্ড অ্যাপিল) আইনের আওতায় যে ‘মেজর পেনাল্টি’-র প্রস্তাবের কথা জানানো হয়েছে, তা এক জন অফিসারের পক্ষে নিঃসন্দেহে উদ্বেগের। সে কারণে আইনি পথের সন্ধান চালানো হচ্ছে।
এ ক্ষেত্রে প্রশাসনের অন্দরের দাবি, রাজ্যের অফিসারের বিভাগীয় তদন্তের অধিকার রাজ্য সরকারের হাতেই থাকবে কি না, তা নিয়ে নির্দিষ্ট নির্দেশিকা নেই। মাদ্রাজ হাই কোর্ট অতীতে জানিয়েছিল, এই অধিকার রাজ্যের। আবার গুজরাত হাই কোর্টের বক্তব্য ছিল, সর্বভারতীয় স্তরের অফিসারদের ক্ষেত্রে এই অধিকার কেন্দ্রের। ফলে রাজ্যকে ‘এড়িয়ে’ কী ভাবে বিভাগীয় তদন্ত করে চার্জশিট দেওয়া হল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। আমলাদের একাংশের মতে, বিপর্যয় মোকাবিলা আইনের যে ধারায় আলাপনকে অবস্থান ব্যাখ্যা করতে বলেছিল কেন্দ্র, সেই আইনের বলেই তাদের হাতে বিভাগীয় তদন্ত করার অধিকার রয়েছে এবং তারা তা কার্যকর করেছে।