—প্রতীকী ছবি।
পঞ্চায়েত নির্বাচনে এ বার প্রায় ১১ হাজার আসনে জিতেছে তারা। যা বাংলায় এখনও পর্যন্ত তাদের জন্য রেকর্ড। কিন্তু দলের অভ্যন্তরীণ সমীক্ষায় আগামী লোকসভা নির্বাচনে এই রাজ্যে বিজেপির জন্য উদ্বেগের কারণ ধরা পড়ছে। লোকসভা ভোটের আগে হাতে-থাকা কয়েক মাসে পরিস্থিতির দ্রুত পরিবর্তন আনতে কোমর বাঁধছে বিজেপি।
আগামী লোকসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশ জুড়ে সমীক্ষা চালাচ্ছে সর্বভারতীয় বিজেপির বেশ কিছু দল। সূত্রের খবর, সেই সমীক্ষার ফল রাজ্য বিজেপির জন্য কিছুটা স্বস্তির এবং অনেকটা অস্বস্তির। সমীক্ষার ফল অনুযায়ী, এই মুহূর্তে লোকসভা নির্বাচন হলে বিজেপি রাজ্যে ৯টি লোকসভা আসন জিততে পারে। যা গত লোকসভা ভোটে তাদের জেতা আসনের অর্ধেক! তবে গেরুয়া শিবিরের পক্ষে স্বস্তির কথা, গত বছরের শেষ সমীক্ষায় এই রাজ্যে বিজেপির আসন প্রাপ্তির সংখ্যা ছিল তিন। তার চেয়ে পরিস্থিতি এখন ‘উন্নত’ বলে বিজেপি সূত্রের খবর।
গত বছর হায়দরাবাদে বিজেপির জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠক থেকেই লোকসভা নির্বাচনের লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। তার পর থেকেই দলের গোপন সমীক্ষক দল প্রত্যেক রাজ্যে মাসে মাসে রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংগঠনিক চিত্রের কী পরিবর্তন হচ্ছে, সেই রিপোর্ট তুলে দিচ্ছে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে। কোন লোকসভা আসনে দলের কী অবস্থা, কোন কেন্দ্রে কেমন কাজ হয়েছে, এমনকি কোনও কেন্দ্রে প্রার্থী বদল করলে জয়ের সম্ভবনা বাড়বে কি না, সেই সব প্রশ্নের উত্তরের ভিত্তিতে সমীক্ষক দল আসনের হিসেব করে বিজেপির সদর দফতরে পাঠাচ্ছে। সূত্রের খবর, সেই তথ্যের ভিত্তিতে পশ্চিমবঙ্গে এই মুহূর্তে যে ৯টি লোকসভা কেন্দ্রে বিজেপির জয়ের সম্ভবনা আছে, তার মধ্যে গত বারের জেতা ৫টি আসনে ফের জয়ের সম্ভাবনা আছে। নতুন করে তারা জিতে নিতে পারে চারটি আসন। তার মধ্যে রয়েছে বীরভূম ও পূর্ব মেদিনীপুরের দু’টি করে আসন। আর তাদের হাতছাড়া হতে পারে গত বারের জেতা ১৩টি আসন।
বিজেপি সূত্রের বক্তব্য, অমিত শাহ বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি থাকাকালীন অভ্যন্তরীণ সমীক্ষার এই পদ্ধতি চালু করেছিলেন। যা ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপিকে সুবিধা দিয়েছিল। তাই এ বারও লোকসভা ভোটের অনেক আগে থেকেই লাগাতার এই সমীক্ষার কাজ চলছে। গত লোকসভা নির্বাচনে বাংলায় বিজেপি ২৪টি আসনে হারার পরে সেগুলির পর্যবেক্ষকের দায়িত্ব পেয়েছিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা। সারা দেশেরই এমন ১৪৪টি আসনে বছরভর নানা কর্মসূচি ও সাংগঠনিক কার্যকলাপে অংশ নিয়েছিলেন তাঁরা। এই রাজ্যে এই কর্মসূচিতে এসেছিলেন ধর্মেন্দ্র প্রধান, স্মৃতি ইরানি, প্রতিমা ভৌমিক, জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়ারা। সম্প্রতি তাঁদের কাছে রিপোর্ট চেয়েছিলেন দলের সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নড্ডা। সূত্রের খবর, নড্ডাকে যে রিপোর্ট কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষকেরা দিয়েছেন, তা সমীক্ষকদের রিপোর্টের সঙ্গে পুরোপুরি মিলছে না। কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষকদের রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, কৃষ্ণনগর, মালদহ দক্ষিণ, দমদম, কলকাতা উত্তর, আরামবাগ, কাঁথি ও তমলুক আসনে এ বার বিজেপির পক্ষে পরিস্থিতি আগের চেয়ে ‘অনুকূল’। এ ছাড়া, দল বারাসত, বীরভূম, বোলপুর আসনে ভাল লড়াই দিতে পারে।
দিল্লির বৈঠকে রাজ্য বিজেপির পর্যবেক্ষক মঙ্গল পাণ্ডে উপস্থিত ছিলেন। রাজ্যে ফিরে জরুরি ভিত্তিতে বৈঠকে বসেন দলের সাংগঠনিক পদাধিকারী ও পর্যবেক্ষকেরা। সূত্রের খবর, বৈঠকে ঠিক হয়েছে বিধানসভা ভিত্তিক ‘প্রবাস’ কর্মসূচি নেওয়া হবে। শীর্ষ নেতারা প্রতিটি বুথে বাড়ি বাড়ি গিয়ে জনসংযোগ করবেন। যে এলাকায় প্রচার হবে, সেখানকার মানুষকে একটি নম্বরে ‘মিসড্ কল’ দেওয়ার অনুরোধ করবেন নেতারা। কেন্দ্রীয় ভাবে দেখা হবে, কোন কোন জায়গা থেকে ওই নম্বরে ফোন আসছে। তার মাধ্যমেই কেন্দ্রীয় ভাবে নজর রাখা হবে, কোন কোন জায়গায় প্রকৃত পক্ষে প্রচার হচ্ছে।
বিজেপি নেতারা অবশ্য প্রকাশ্যে এই নিয়ে মুখ খুলতে নারাজ। রাজ্য বিজেপির প্রধান মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যের দাবি, ‘‘বাংলা থেকে ২০২৪ সালে বিজেপির লোকসভা আসনের সংখ্যা ২৪-এর পর থেকে গোনা শুরু হবে!’’ তবে দলের এক বর্ষীয়ান নেতার কথায়, ‘‘শাহের নিজস্ব কয়েকটি দল আছে। তারা সকলেই দলের কিংবা সঙ্ঘের লোক। শেষ কয়েক বছর ধরে তারা খুবই দক্ষ ভাবে এবং গোপনীয়তা রক্ষা করে সমীক্ষার কাজ করছে।’’