এই ঘুরে গেলেন বাবুল সুপ্রিয়, তো এই হাজির দেব। নিমু ভৌমিক, পি সি সরকার, চিরঞ্জিত, টেলিতারকা, ময়দান-তারকাদের দেখা যাচ্ছে হামেশাই। এখনও আসা বাকি শতাব্দী রায়-সহ বহু তারকার। আর রাজনীতির মহীরুহরা তো এক রকম শিকড় গেড়েছেন। খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক নড়ছেন না, ঘনঘন আসছেন মুকুল রায়, পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের মতো হেভিওয়েট তৃণমূল নেতারা। প্রদেশ কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরী ঘাঁটি গেড়েছেন। সিপিএম নেতা গৌতম দেবও অসুস্থ শরীরে একাধিক বার সভা করেছেন। বিজেপির রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহের রোড-শো হয়ে গিয়েছে।
দেখেশুনে বসিরহাটের মানুষ থ’। প্রবীন নাগরিক ফারুখ শেখ, ভবাণী পাঠককে বলতে শোনা গেল, “মুখ্যমন্ত্রী আর প্রধানমন্ত্রী ছাড়া যেন সভা করতে কেউ আর বাদ গেলেন না!” লোকসভার ভোটেও এমন সমারোহ হয়নি এখানে। গোটা এলাকায় কোথাও না কোথাও দিনের মধ্যে কোনও না কোনও সময় সভা লেগেই আছে। বেলা ১টায় তৃণমূলের মিটিং যদি হয় ত্রিমোহিণী মোড়ে, বেলা ২টোয় কলেজের সামনে সভা ডেকে বসে আছে বিজেপি। আবার ঠিক তক্ষুনি সিপিএমের সভা চলছে টাকিতে। বেলা ৩টেয় আবার হাসনাবাদে সভা ঘিরে কংগ্রেসের ব্যস্ততা তখন তুঙ্গে।
ফলে ঘাম ছুটেছে ডেকরেটর্স ব্যবসায়ীদের। সমীরণ দাস জানালেন, “লাল-সবুজ চেয়ারের জোগান দিতে দিতেই ঘাম ছুটছে। বিকেল ৪টের সভা ঘণ্টা খানেক বাদে শেষ হতে না হতেই সেই চেয়ার, মাইক নিয়ে ছুটতে হচ্ছে পাশের অন্য কোনও সভায়। ঝক্কি বেড়েছে, তবে রোজগারপাতি ভালই হচ্ছে।” খুশি ব্যবসায়ীরাও। পান-বিড়ি-সিগারেট-ঠান্ডা পানীয়ের বিক্রি ক’দিনে বেশ বেড়েছে বলে জানালেন বসিরহাট শহরের এক দোকানি সুবীর সাহা।
তবে মাইকের তাণ্ডবও চলছে পুরোদমে। হাসপাতালের সামনে সভা করায় দিন কয়েক আগে বিজেপির সভা মাঝপথে বন্ধ করে দেয় পুলিশ। তাতে আবার রাজনৈতিক চক্রান্তের গন্ধ খুঁজে পেয়েছেন দলের নেতারা।
তবে এত প্রতিদ্বন্দ্বিতার মধ্যেও রাজনৈতিক সৌজন্য কিছু দেখা গিয়েছে। ক’দিন আগে বিজেপি সাংসদ সুরিন্দর সিংহ অহলুওয়ালিয়ার গাড়ি মুকুল রায়ের সভার সামনে দিয়ে যাওয়ার সময়ে বক্তৃতা থামিয়ে দিয়েছেন তৃণমূল নেতা। এগিয়ে গিয়ে বিজেপি সাংসদের সঙ্গে হেসে সৌজন্য বিনিময় করেছেন। সেটাও উপভোগ করছেন দর্শকরা।
ভোটের দিন অশান্তির উদ্বেগ নিয়েও, অকালবোধনের মতো এই অকালভোটের উৎসবে মজেছেন বসিরহাটের মানুষ।