ফাইল ছবি
সে এক হইহই রইরই কাণ্ড।
রাজ্যের হেভিওয়েট মন্ত্রী তো বটেই, শাসকদলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় গ্রেফতার। তাই বার্তাটি রটে যেতে এক ঘণ্টাও লাগেনি। পার্থবাবুকে ব্যাঙ্কশাল আদালতে আনা হবে শুনে শনিবার বেলা ১২ টা থেকে আদালত চত্বরে ভিড় জমতে শুরু করে। অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে হেয়ার স্ট্রিট থানার পুলিশ সাড়ে এগারোটার মধ্যেই আদালত চত্বরে পৌঁছে গার্ডরেল বসিয়ে দেয়। পার্থবাবু এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)-এর অফিসারদের সঙ্গে আদালতে পৌঁছন দুপুর পৌনে তিনটে নাগাদ।
বিকেল চারটের পরে মামলা ওঠে বিচারক মিলনশশী কুজুরের এজলাসে। পার্থবাবুর জামিনের জন্য সওয়াল করেন আইনজীবী দেবাশিস রায়। ইডির তরফে জামিনের বিরোধিতা করেন আইনজীবী অভিজিৎ ভদ্র এবং ভাস্করপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায়। এজলাস দোতলায়। পার্থবাবু ছিলেন একতলায় কোর্ট লকআপে। আদালত সূত্রের খবর, অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে পার্থবাবু সিঁড়ি ভেঙে এজলাসে উঠতে চাননি। আদালতে দু’দফায় সওয়াল-জবাব চলার পরে রাতে পার্থবাবুকে এসএসকেএমে ভর্তি হওয়ার অনুমতি দেয় আদালত।
শিল্পমন্ত্রীর জামিনের জন্য সওয়াল শুরু করে দেবাশিসবাবু আদালতকে জানান, হাই কোর্ট সিবিআইকে তদন্তে যে কোনও ধরনের পদক্ষেপ করার অনুমতি দিলেও কাউকে গ্রেফতারের নির্দেশ দেয়নি। তিনি বলেন, ‘‘ইডি আচমকা নেমেই পার্থবাবুকে গ্রেফতার করে ফেলল। অথচ উনি সব সময়ে সিবিআইয়ের ডাকে হাজিরা দিয়েছেন। ইডি তাঁকে সমনও পাঠায়নি। এ সবের পিছনে রাজনীতি রয়েছে। আমার মক্কেলের বাড়ি থেকে কোনও টাকা পাওয়া যায়নি। কয়েকটি সম্পত্তির দলিলের প্রতিলিপি শুধু পাওয়া গিয়েছে।’’
ইডি-র আইনজীবীদের পাল্টা দাবি, পার্থবাবু পরিষ্কার করে জানাতে পারেননি যে তাঁর ‘ঘনিষ্ঠ’-র সম্পত্তির দলিল কী ভাবে তাঁর বাড়িতে এল। তাঁরা বলেন, ‘‘তদন্তে সহযোগিতা করছেন না উনি। মানি লন্ডারিংয়ের টাকার হদিস পার্থবাবুর ঘনিষ্ঠের অ্যাকাউন্টে পাওয়া গিয়েছে। সেই কারণে তাঁকে হেফাজতে নিয়ে জেরার প্রয়োজন রয়েছে।’’ ইডির তরফে দুই আইনজীবী পার্থবাবুকে চোদ্দ দিনের জন্য হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের আবেদন করলেও, বিচারক জানিয়ে দেন দু’দিন হেফাজতে রাখার পরে পার্থবাবুকে সোমবার বিচারভবনে সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতে হাজির করাতে হবে। কিন্তু, সেই হেফাজত জেল না কি ইডির অধীনে হবে, তা সেই সময়ে বিচারক পরিষ্কার করেননি।
এর ঘণ্টা খানেকের মধ্যেই জানা যায় পার্থবাবু অসুস্থ বোধ করছেন। প্রথম দফায় সওয়াল-জবাবের সময়েই আইনজীবীরা আদালতে দাবি করেছিলেন, পার্থবাবুর নানা ধরনের শারীরিক অসুস্থতা রয়েছে। কিন্তু হাসপাতাল থেকে জোর করে তিনি সুস্থ বলে লিখিয়ে নেওয়া হয়েছে। এর পরে বিকেলে পার্থবাবু অসুস্থ বোধ করতেই তাঁর আইনজীবীরা বিচারকের কাছে আবেদন করেন, শিল্পমন্ত্রীকে যেন কোনও সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে ভর্তি করানোর ব্যবস্থা করা হয়। ইডির আইনজীবীরা দাবি জানান, পার্থবাবু প্রভাবশালী। তাঁকে কেন্দ্রীয় সরকারের অধীন কোনও হাসপাতালে যেন রাখা হয়। আইনজীবী অভিজিৎ ভদ্রের দাবি, ‘‘বিচারক পার্থবাবুকে এসএসকেএমে থাকার নির্দেশ দেন। সোমবার তাঁকে হাজিরা দেওয়ার পাশাপাশি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে পার্থবাবুর শারীরিক অবস্থার বিষয়ে আদালতকে জানাতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’’