ছবি: সংগৃহীত।
উচ্চ প্রাথমিক স্তরে শিক্ষক-শিক্ষিকা নিয়োগ তো বটেই, এমনকি সেই সব নিয়োগের জন্য কাউন্সেলিংয়ের প্রক্রিয়াও কলকাতা হাইকোর্টের স্থগিতাদেশের জেরে আটকে আছে। অতিমারির মধ্যেই রাজ্যের বিভিন্ন উচ্চ প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষকপদ পূরণের সেই জট কাটাতে অবশেষে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হল স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি)।
সূত্রের খবর, ২০১৬-র বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী উচ্চ প্রাথমিকে শিক্ষক-শিক্ষিকা নিয়োগের জন্য মেধা-তালিকা প্রকাশ হয়েছিল। কিন্তু তাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে হাইকোর্টে বেশ কয়েকটি মামলা করেন কয়েক হাজার প্রার্থী। তেমনই একটি মামলার শুনানিতে উচ্চ প্রাথমিকে শিক্ষক-শিক্ষিকা নিয়োগের উপরে স্থগিতাদেশ জারি করেন বিচারপতি মৌসুমী ভট্টাচার্য। একই সঙ্গে বিচারপতি ভট্টাচার্যের আদালত চূড়ান্ত মেধা-তালিকা স্কুটিনিও করছে।
জানা গিয়েছে, চলতি সপ্তাহে হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টিবিএন রাধাকৃষ্ণনের কার্যালয়ে একটি আবেদন করেছে কমিশন। তাতে বলা হয়েছে, লকডাউনের জেরে বিচারপতি ভট্টাচার্যের এজলাসে উচ্চ প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে যে-সব মামলার নিয়মিত শুনানি হচ্ছে না, সেগুলির নিয়মিত শোনার ব্যবস্থা করা হোক।
কমিশনের একটি সূত্র জানাচ্ছে, ২০১৬-য় রাজ্যের উচ্চ প্রাথমিক স্কুলগুলিতে শিক্ষক-শিক্ষিকার ১৪ হাজারেরও বেশি পদ শূন্য ছিল। সেই সব পদ পূরণের জন্য নিয়োগ-পরীক্ষা নেওয়া হয়। পরীক্ষার্থী ছিলেন এক লক্ষ ৮০ হাজারের বেশি। মেধা-তালিকা প্রকাশের পরে তাতে সন্তুষ্ট হতে না-পেরে ১৫ হাজারের বেশি পরীক্ষার্থী মামলা দায়ের করেন। বিচারপতি ভট্টাচার্যের এজলাসে ছ’টি মামলার মধ্যে তিনটি অর্ধেক শুনানি হয়ে পড়ে রয়েছে। তার মধ্যে একটি মামলায় শুনানি হয়েছে অন্তত ১৬ বার। এই অবস্থায় মামলাগুলির দ্রুত শুনানি ও নিষ্পত্তি চেয়ে প্রধান বিচারপতির কার্যালয়ে আবেদন করা হয়েছে। আবেদনে বলা হয়েছে, সমস্যার দ্রুত সুরাহার জন্য শুনানির সময় একটু বাড়ানো হোক।
কিন্তু বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তীর বক্তব্য, ‘‘চাকরি-প্রার্থীরা অনেক দিন ধরেই মামলার দ্রুত নিষ্পত্তির আবেদন জানিয়ে আসছেন। সরকার এবং কমিশনের এত দিন পরে বোধোদয় হল! আগের দিনই মামলার শুনানিতে চাকরি-প্রার্থীদের তরফে আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য আদালতে উপস্থিত ছিলেন। অন্য দিকের কেউ ছিলেন না! এই ভাবেই তো মামলার দিন পিছিয়ে যাচ্ছে।’’
জানা গিয়েছে, গত চার বছরে উচ্চ প্রাথমিকে আরও অন্তত ৫০০০ পদ শূন্য হয়েছে। নিয়োগ আটকে থাকায় করোনা পর্বের পরে পঠনপাঠন কী ভাবে চলবে, সেই প্রশ্ন উঠছে। এসএসসি-র সল্টলেকের প্রধান কার্যালয়ে পরপর কয়েক দিন ধরে কাউন্সেলিং চলে। কিন্তু করোনার জন্য এখন এ ভাবে কাউন্সেলিং কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়া যে কার্যত অসম্ভব, কমিশনের কর্তারা তা স্বীকার করে নিয়েছেন। তবে একই সঙ্গে তাঁরা এটাও জানাচ্ছেন যে, হাইকোর্ট স্থগিতাদেশ তুলে অনুমতি দিলে তাঁরা একাধিক বিকল্প উপায়ে কাউন্সেলিং সম্পন্ন করার কথা ভেবে রেখেছেন।
‘‘আমরা শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া চালিয়ে যেতে খুবই আগ্রহী। কিন্তু বিষয়টি এখন বিচারাধীন। তাই মন্তব্য করব না,’’ বলেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়।