TMC

WB Municipal Election 2022: ডামাডোল চরমে, শেষ দিনেও মনোনয়ন দিতে পারলেন না মমতার ‘স্বীকৃত’ বহু প্রার্থী

প্রার্থী তালিকা টানাপড়েনে দলের শীর্ষনেতা অভিষেকের নির্বাচনী কেন্দ্র ডায়মন্ড হারবার গোড়া থেকেই সকলের নজরে ছিল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০৭:৪৭
Share:

প্রতীকী ছবি।

তৃণমূল কংগ্রেসের যে তালিকাকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বীকৃতি দিয়েছেন তাতে নাম থাকা সত্ত্বেও পুরভোটে দলের প্রার্থী হতে পারলেন না অনেকেই। বুধবার মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিনে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্বাচনী কেন্দ্র ডায়মন্ড হারবার সহ অন্য কয়েকটি জেলার একাধিক পুরসভায় এই ছবি স্পষ্ট হয়েছে। শুধু তাই নয়, এই সব ক্ষেত্রেই তৃণমূলের প্রার্থী হিসেবে মনোয়ন জমা দিয়েছেন আইপ্যাকের তত্ত্বাবধানে থাকা দলের অফিশিয়াল ওয়েবসাইট এবং তৃণমূলের সমাজমাধ্যমে প্রকাশিত তালিকায় যাঁদের নাম রয়েছে, তাঁরা।

Advertisement

এই ভাবেই প্রার্থী বাছাই নিয়ে শুরু টানাপড়েন মনোনয়ন জমা দেওয়ার শেষ দিনে চূড়ান্ত পর্বে পৌঁছল। ঝাড়াই- বাছাইয়ের পর প্রথম ও দ্বিতীয় তালিকা নিয়ে গত কয়েকদিন ধরে যে বিভ্রান্তি চলছিল এ দিন তা ভিন্নমাত্রা পেয়েছে ডায়মন্ড হারবারে। তৃণমূলের এমন ৭ প্রার্থী মনোনয়ন জমা দিয়েছেন, যাঁদের নাম দলের ওই ‘অনুমোদিত’ তালিকায় ছিল না। কিন্তু লক্ষণীয় হল, অভিষেকেরই সংসদীয় কেন্দ্রে প্রতীক সার্টিফিকেট না পেয়ে যাঁরা মনোনয়ন দিতে পারলেন না, তাঁদের বেশির ভাগেরই এ নিয়ে কোনও ‘ক্ষোভ’ নেই। দু’জন প্রকাশ্যে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। দক্ষিণ ২৪ পরগনায় দলের প্রতীক বিলির দায়িত্বে ছিলেন প্রাক্তন মন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু। সূত্রের খবর, যিনি দায়িত্বপ্রাপ্ত তাঁর কাজ মূলত প্রতীকের ফর্ম সই করে নেতৃত্বের কাছে দিয়ে দেওয়া। প্রার্থীর নাম সেখানে পরে বসে।

এ দিকে অভিষেকেরই সংসদীয় কেন্দ্রের বজবজ পুরসভায় তৃণমূল এ দিনই বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় ১২ টি আসন পেয়ে কার্যত পুরবোর্ড দখল করার দিকে। কারণ সেখানে মোট আসন ২০। এর আগে ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূলের বিরুদ্ধে বিভিন্ন জেলায় ভয় দেখিয়ে মনোনয়নে বাধার ব্যাপক অভিযোগ উঠেছিল। তার মধ্যে ডায়মন্ড হারবার এলাকা ছিল অন্যতম। এ বার বজবজ পুরসভায় ২০ টির মধ্যে ১২ টি আসনে কেন তৃণমূল ছাড়া অন্য কোনও দল মনোনয়ন দিতে পারল না, সেই প্রশ্ন সামনে এসেছে। সাঁইথিয়া পুরসভায়ও বিরোধী মনোনয়ন না থাকায় ১৬ টির মধ্যে ১৩ টি ওয়ার্ড তৃণমূলের। দিনহাটায় ১৬ টির মধ্যে সাতটি ওয়ার্ডে বিরোধী প্রার্থী নেই। বিজেপি এবং সিপিএম উভয়েই এ নিয়ে গাজোয়ারির অভিযোগ তুলেছে। তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের পোশাকি যুক্তি, ‘‘বিরোধীরা মনোনয়ন দিতে না পারলে আমরা কী করব!’’ তবে সূত্রের খবর, দলের শীর্ষ নেতৃত্ব বিষয়টি ‘অনুসন্ধান’ করছেন।

Advertisement

প্রার্থী তালিকা টানাপড়েনে দলের শীর্ষনেতা অভিষেকের নির্বাচনী কেন্দ্র ডায়মন্ড হারবার গোড়া থেকেই সকলের নজরে ছিল। এখানে ‘অনুমোদিত’ তালিকার কী হয়, গুঞ্জন ছিল তা নিয়েও। এখানকার ১৬টি ওয়ার্ডের যে প্রার্থীরা এ দিন মনোনয়ন জমা দিয়েছেন, দ্বিতীয় তালিকায় তাঁদের ৭ জনের নাম নেই। যাঁরা মনোনয়ন জমা দিয়েছেন তাঁদের নাম প্রথম প্রকাশিত ‘অনুমোদনহীন’ তালিকায় রয়েছে। তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় এ সম্পর্কে বলেন, ‘‘পারস্পরিক আলোচনায় যা ঠিক হয়েছিল মোটামুটি তা-ই আছে। বাকিটা দেখতে হবে।’’

‘অনুমোদিত’ তালিকায় নাম থাকা সত্ত্বেও ডায়মন্ড হারবার পুরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বিদায়ী কাউন্সিলর পূর্ণেন্দু সরকার মনোনয়ন জমা দিতে পারেননি। তাঁর কথায়, ‘‘চূড়ান্ত তালিকায় আমার নাম থাকা সত্ত্বেও মনোনয়ন জমা দিতে দেওয়া হয়নি। আমাকে বসিয়ে রেখে অন্যকে প্রার্থী করা হয়েছে। খুব খারাপ লাগছে। অভ্যন্তরীণ কলহ ঠিক নয়।’’ একই কথা জানিয়েছেন ৭ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী হিসেবে ‘অনুমোদিত’ তালিকায় নাম থাকা দীপক নাইয়া। তিনি বলেন, ‘‘চূড়ান্ত তালিকায় নাম থাকা সত্ত্বেও মনোনয়ন জমা দিইনি। কারণ আমি নোংরামিতে যেতে চাইনি। মনোনয়ন জমা করতে গেলে নিজেদের মধ্যেই ঝামেলা হতে পারে, তাই যাইনি।’’

‘অনুমোদিত’ তালিকায় নাম থাকা সত্ত্বেও ভয়ে মনোনয়ন দিতে যাননি বলে জানিয়েছেন ৩ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী নীলিমা হালদার। তিনি বলেন, ‘‘কাগজপত্র নিয়ে মনোনয়নের জন্য তৈরি ছিলাম। স্থানীয় নেতৃত্বের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তাঁরা জানিয়েছিলেন, দ্বিতীয় তালিকা নেওয়া হবে না। ফলে ভয়ে মনোনয়ন জমা করতে যাইনি।’’ আবার অভিষেক অনুগামী হিসেবে পরিচিত ১০ নম্বর ওয়ার্ডের সৌমেন তরফদার প্রার্থী হতে পারেননি। তিনি জানিয়েছেন, ‘‘মনোনয়ন জমা করার জন্য আমার কাছে নির্দেশ আসেনি। যিনি প্রার্থী হয়েছেন, তাঁকে সম্মান করি। তাঁর হয়ে প্রচার করছি।’’

তৃণমূলের দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার সভাপতি তথা পুরভোটের অন্যতম কোঅর্ডিনেটর শুভাশিস চক্রবর্তী বলেন, ‘‘প্রার্থীরা নিজেরা বসে সর্বসম্মত ভাবে ঠিক করেছেন। বিধায়ক, স্থানীয় নেতৃত্বেরা মিলেই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।’’ তবে রাজ্যের বেশ কয়েকটি পুরসভায় তৃণমূলের গোঁজ প্রার্থীর আশঙ্কা করছেন দলীয় নেতৃত্ব। দলীয় সূত্রে খবর, কোথাও সেই রকম হলে সংশ্লিষ্ট প্রার্থীদের নাম ও দলের সঙ্গে তাঁদের সম্পর্ক বিস্তারিত জানাতে বলা হয়েছে জেলা নেতৃত্বকে। দলের এক নেতার কথায়, ‘‘নির্দল বা গোঁজ প্রার্থী বরদাস্ত করা হবে না। প্রয়োজনে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement