TMC MLA’s Oath Controversy

শুক্রে বিধানসভার বিশেষ অধিবেশন ডাকলেন স্পিকার বিমান, সায়ন্তিকাদের শপথ ঘিরে জল্পনা জিইয়েই রইল

বিধানসভা সূত্রে খবর, শুক্রেই সায়ন্তিকাদের শপথ-জট কাটতে পারে। আইনি পরামর্শ নিয়ে বিধানসভা জেনেছে, ‘বিশেষ অধিবেশন’ ডেকে উপনির্বাচনে জয়ীদের শপথগ্রহণ করানো যায়।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ জুলাই ২০২৪ ১৫:১৫
Share:

বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।

বিধানসভার বিশেষ অধিবেশন ডাকলেন স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। শুক্রবার দুপুর ২টো থেকে শুরু হবে এক দিনের বিশেষ অধিবেশন। বৃহস্পতিবার সাংবাদিক বৈঠকে স্পিকার বলেছেন, ‘‘শুক্রবারের অধিবেশন ভেরি ভেরি স্পেশাল।’’ স্বাভাবিক ভাবেই কৌতূহল তৈরি হয়েছে, তা হলে কি শুক্রবার শপথগ্রহণ করবেন বরাহনগর এবং ভগবানগোলা বিধানসভা উপনির্বাচনে জয়ী সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, রায়াত হোসেন সরকার? এই প্রশ্নে স্পিকার সরাসরি কোনও জবাব দেননি। তিনি বলেছেন, ‘‘শুক্রবার সবটা দেখা যাবে।’’ অধিবেশন শুরুর আগে বেলা ১২টা থেকে বিধানসভার বিজ়নেস অ্যাডভাইজ়ারি কমিটির বৈঠক হবে।

Advertisement

তবে বিধানসভা সূত্রে খবর, শুক্রবারই সায়ন্তিকাদের শপথ-জট কাটতে পারে। আইনি পরামর্শ নিয়ে বিধানসভা জেনেছে, রাজ্যপালের হাতে বিধায়কদের শপথগ্রহণের চাবিকাঠি থাকলেও ‘বিশেষ অধিবেশন’ ডেকে উপনির্বাচনে জয়ীদের শপথগ্রহণ করানো যায়। শুক্রবার শেষ পর্যন্ত রাজ্যপালকে বাদ রেখে বিধায়ক হিসাবে সায়ন্তিকাদের শপথগ্রহণ হলে তা ভারতের সংসদীয় রাজনীতিতে ‘নজিরবিহীন’ ঘটনা হবে বলে দাবি অভিজ্ঞদের অনেকের।

আরও একটি বিষয় রয়েছে। স্পিকার যদি নিজের ক্ষমতাবলে দু’জনকে শপথগ্রহণ করিয়ে বিধানসভা অধিবেশনে যোগদানের অনুমতি দেন, তা হলে সংবিধানের ১৯৩ ধারা অনুযায়ী বিধায়কেরা যে ক’দিন বিধানসভার অধিবেশনে যোগদান করবেন, সেই দিনগুলির জন্য প্রত্যেককে প্রতি দিন ৫০০ টাকা করে জরিমানা দিতে হবে রাজ্য সরকারকে।

Advertisement

নিয়ম অনুযায়ী, আইনসভার সদস্য নির্বাচিত হলে সংশ্লিষ্ট রাজ্যের নির্বাচনী আধিকারিকের দফতর থেকে দু’টি পৃথক চিঠি পাঠানো হয় বিধানসভা এবং রাজ্য সরকারের কাছে। ওই চিঠিতে জয়ীদের সম্পর্কে তথ্য জানানো হয় দু’পক্ষকে। এর পরেই সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকারের পরিষদীয় দফতর রাজভবনকে চিঠি দিয়ে জয়ীদের শপথগ্রহণের বিষয়ে উদ্যোগী হতে অনুরোধ করে। সেই পর্যন্ত ঠিকই ছিল। কিন্তু গোল বাধে তার পরেই। নিয়ম অনুযায়ী, এর পরে রাজ্যপাল স্পিকারকে শপথগ্রহণ করানোর দায়িত্ব দিতে পারেন। রাজ্যপাল যদি চান, তিনি নিজেও বিধায়কদের শপথগ্রহণ করাতে পারেন। নতুবা তাঁর ‘মনোনীত’ কেউ বিধায়কদের শপথগ্রহণ করাতে পারেন। এই দু’জনের ক্ষেত্রে পরিষদীয় দফতর রাজভবনকে চিঠি দেয়নি। তার বদলে স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় রাজভবনকে চিঠি দিয়ে দুই বিধায়কের নির্বাচিত হওয়ার কথা জানিয়ে তাঁদের শপথগ্রহণ করানোর কথা বলেন। এর পর রাজভবনের তরফে আলাদা আলাদা করে সায়ন্তিকা ও রায়াতকে চিঠি দিয়ে জুন মাসের তৃতীয় সপ্তাহে রাজভবনে গিয়ে শপথগ্রহণের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। কিন্তু দু’জনেই পাল্টা রাজভবনকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছিলেন, তাঁরা রাজভবন নয়, বিধানসভায় শপথগ্রহণ করতে চান। চাইলে রাজ্যপাল বিধানসভায় এসে তাঁদের শপথবাক্য পাঠ করাতে পারেন। কিন্তু রাজভবন তাতে সাড়া না দেওয়ায় বিধানসভায় ধর্না অবস্থান শুরু করেন দুই হবু বিধায়ক। ওই দিনই দুপুরের বিমানে রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস দিল্লি চলে যান। সেই থেকে তিনি কলকাতায় ফেরেননি।

আইন অবশ্য বলছে, বিধায়কদের শপথগ্রহণের বিষয়টি পুরোপুরি নির্ভরশীল রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধান রাজ্যপালের সিদ্ধান্তের উপর। যে ক্ষমতাবলে ভবানীপুর বিধানসভার উপনির্বাচনে জয়ী মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে শপথগ্রহণ করিয়েছিলেন তৎকালীন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। তিনি অবশ্য বিধানসভায় পৌঁছে মুখ্যমন্ত্রীকে শপথগ্রহণ করিয়েছিলেন। গত বছর ধূপগুড়ি বিধানসভার উপনির্বাচনের পরেও একই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। উপনির্বাচনে জয়ী তৃণমূল প্রার্থী নির্মলচন্দ্র রায়ের শপথগ্রহণ দীর্ঘ দিন আটকে থাকার পর রাজভবনে তাঁকে শপথবাক্য পাঠ করান রাজ্যপাল বোস। ২০২২ সালের এপ্রিলে বালিগঞ্জ বিধানসভার উপনির্বাচনে জয়ী হন তৃণমূল প্রার্থী বাবুল সুপ্রিয়। সে ক্ষেত্রে তৎকালীন রাজ্যপাল শপথগ্রহণের দায়িত্ব দিয়েছিলেন ডেপুটি স্পিকার আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে। কিন্তু আশিস সেই দায়িত্ব পালনে ‘অক্ষম’ বলে জানালে রাজ্যপাল সিদ্ধান্ত বদল করে বাবুলের শপথের দায়িত্ব দিয়েছিলেন স্পিকারকে। তবে এ বার সরাসরি সংঘাতের পথে গিয়ে শুক্রবার সায়ন্তিকাদের শপথগ্রহণ হয় কি না, তা নিয়ে কৌতূহল জারি থাকছে। তবে শুক্রবারের বিশেষ অধিবেশনে বিরোধী দল বিজেপি থাকবে কি না, সে বিষয়ে বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত স্পষ্ট করে কিছু জানা যায়নি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement