দূরত্ব নিয়ে জল্পনা রয়েই গেল

অভিষেক-বৈঠকে এলেন না শোভন

নৈতিকতা ও আনুগত্যের দ্বন্দ্ব নিয়ে তাঁর বিভ্রান্তি কেটেছে কি না বো‌ঝা গেল না। তবে রবিবার পড়ন্ত রোদে পরিষ্কার দেখা গেল, মঞ্চে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে শোভন চট্টোপাধ্যায় নেই!

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ জুন ২০১৬ ০৪:১০
Share:

কর্মিসভায় রবিবার।- নিজস্ব চিত্র

নৈতিকতা ও আনুগত্যের দ্বন্দ্ব নিয়ে তাঁর বিভ্রান্তি কেটেছে কি না বো‌ঝা গেল না। তবে রবিবার পড়ন্ত রোদে পরিষ্কার দেখা গেল, মঞ্চে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে শোভন চট্টোপাধ্যায় নেই!

Advertisement

২৬ মে রাতে ফেসবুকে শুধু দু’টি লাইন পোস্ট করেছিলেন তৃণমূল যুব সভাপতি, ‘‘বিভ্রান্ত লাগছে! নৈতিকতা বনাম আনুগত্য!!’’ রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠীর কাছে দিদি ওই দিনই সম্ভাব্য ৪২ জন মন্ত্রীর তালিকা তুলে দিয়েছিলেন। দলীয় সূত্রের দাবি, সেই তালিকায় শোভন চট্টোপাধ্যায় এবং ফিরহাদ হাকিমের নাম দেখেই অভিষেক ক্ষুণ্ণ হন। ঘটনাচক্রে সে দিন সন্ধ্যার পর থেকেই এ দিনের আগে পর্যন্ত সর্বসমক্ষে অভিষেকের দেখা মেলেনি। ২৭ মে দ্বিতীয় বার মুখ্যমন্ত্রী পদে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শপথ নেওয়ার অনুষ্ঠানেও ছিলেন না তিনি।

তাৎপর্যপূর্ণ সেই অনুপস্থিতির পর বজবজের চড়িয়ালে এক কর্মিসভায় রবিবার ‘নিঃশব্দ বিপ্লব’ নামে একটি পুস্তিকা প্রকাশ করেন ডায়মন্ড হারবারের তরুণ সাংসদ। সেই সভায় দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক সুব্রত বক্সীকে তাঁর পাশে দেখা গেলেও, অনুপস্থিত ছিলেন দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলা সভাপতি শোভন। যিনি কলকাতার মেয়র পদে থাকার পাশাপাশি সম্প্রতি মন্ত্রিসভায় আবাসন, পরিবেশ ও দমকল দফতরের দায়িত্ব পেয়েছেন।

Advertisement

শোভন নেই কেন? প্রশ্নের জবাবে অভিষেক বলেন, ‘‘আমি তো আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম। আসেননি কেন জানি না।’’ যদিও শোভনের বক্তব্য, ‘‘পরিবেশ দিবস উপলক্ষে অনুষ্ঠানে ব্যস্ত ছিলাম। যেতে পারব না সেটা ওঁকে ফোন করে জানিয়েছিলাম।’’ দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার ভোটের ফলাফল পর্যালোচনার জন্য শনিবার বৈঠক ডেকেছিলেন শোভন। সেই বৈঠকে আবার ছিলেন না অভিষেক।

দিদি-ঘনিষ্ঠ একাধিক সূত্রেরই দাবি, অভিষেক চেয়েছিলেন, নারদ কাণ্ডে অভিযুক্ত দুই নেতা শোভন চট্টোপাধ্যায় ও ফিরহাদ হাকিমকে যেন মন্ত্রী করা না হয়। কিন্তু দিদি তা শোনেননি, উল্টে পদোন্নতির তালিকায় কার্যত পয়লা নম্বরে উঠে আসে শোভনের নাম। একই ভাবে মন্ত্রী করা হয় ফিরহাদকেও। সেই কারণেই শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে রেড রোডে যাননি অভিষেক। এমনকী দিদি নিজে চেয়েছিলেন, অভিষেক তাঁর সঙ্গেই রেড রোডে যান। কিন্তু অভিষেক বাড়িতেই বসে ছিলেন। শুধু গোটা শহর ঢাকা পড়েছিল তাঁর ছবি দেওয়া হোর্ডিংয়ে। যাতে লেখা ছিল, ‘ম্যাচ উইনার।’

তৃণমূলের অনেকের অবশ্য বক্তব্য, অভিষেক আসলে এখনও পরিণত রাজনীতিক হয়ে ওঠেননি। তাঁর বয়স কম। পিসি-ভাইপোর মান অভিমানের ব্যাপারও রয়েছে। নইলে জল এত দূর গড়াত না। কিন্তু অভিষেকের ঘনিষ্ঠদের দাবি, এ সবই দুর্বল যুক্তি। শোভন-ফিরহাদকে মন্ত্রী করাটা তিনি যে মেনে নেননি, তা দৃঢ়তার সঙ্গেই বুঝিয়ে দিয়েছেন অভিষেক। এঁদের মতে, অপরিণত হলে ভোটের আগে অভিষেককে দিয়ে দুশোর বেশি সভাই বা কেন করানো হল আর ভোটের পর নদিয়া জেলার দায়িত্বই বা কেন দেওয়া হল!

এ দিন সাংবাদিকদের সামনে অভিষেক এ সব প্রসঙ্গ স্বাভাবিক ভাবেই তোলেননি। নিজের দীর্ঘ অনুপস্থিতির ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বরং বলেন, ‘‘অসুস্থতার কারণে শপথ অনুষ্ঠানে যেতে পারিনি। শনিবার কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ ছিল তাই নির্বাচনী পর্যালোচনা বৈঠকে যাওয়া হয়নি।’’ আবার এই একই প্রসঙ্গে শোভন ফোনে জানান, ‘‘আমার আর অভিষেকের মাঝে কোনও রাজনৈতিক সমীকরণ তৈরি করা বাঞ্ছনীয় নয়। ব্যক্তিগত ভাবে অভিষেককে খুব ভালবাসি আমি।’’

এদিনের সভায় অভিষেক পৌঁছনোর পর মঞ্চে লাল-সোনালি রঙের সিংহাসনে তাঁকে বসতে দেন কর্মীরা। অভিষেক নিজে না বসে সুব্রতবাবুকে বসতে বলেন। কর্মীদের উদ্দেশে তাঁর বার্তা ছিল, ‘‘এমন উন্নয়ন করতে হবে যাতে পরের ভোটে কোনও বুথে সিপিএম ও বিজেপির চিহ্ন খুঁজে না পাওয়া যায়।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement