দেবশ্রী রায়, শোভন চট্টোপাধ্যায় এবং বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।
শনিবারের বঙ্গ রাজনীতি উত্তপ্ত করে রাখলেন দেবশ্রী-শোভন-বৈশাখী। মালদহ ও নবদ্বীপে বিজেপি সভাপতি জেপি নড্ডার একাধিক কর্মসূচি, কাঁথিতে শুভেন্দু অধিকারীকে তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের আক্রমণ— এ সবের পরেও আলোচনার কেন্দ্রে রয়ে গেল ত্রয়ীর চাপানউতোর। অভিনেত্রী বিধায়ক দেবশ্রী রায়কে ‘ডাইনি’ বলেও কটাক্ষ করলেন কলকাতার প্রাক্তন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়। পাশে দাঁড়িয়ে পারিবারিক কেচ্ছায় তাল মেলালেন শোভন-বান্ধবী বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়।
গত ২১ জানুয়ারি রায়দিঘিতে এক জনসভায় গিয়েছিলেন শোভন-বৈশাখী। সেই জনসভা থেকে স্থানীয় বিধায়ক দেবশ্রীর সমালোচনায় মুখর হন দু’জনেই। অভিযোগ, শোভন সেখানে দেবশ্রীকে ‘অযোগ্য বিধায়ক’ বলে দাবি করেন এবং ২০১৬ সালের ভোটে তাঁকে জেতানোর জন্য এলাকার মানুষের কাছে ক্ষমা চান। সঙ্গে নাম না করে ‘টোটো কেলেঙ্কারি’ নিয়ে দেবশ্রীকে আক্রমণ করেন। একই সুরে দেবশ্রীর সমালোচনা করেন বৈশাখীও। বলেন, ‘‘উনি তো সিনেমাতেও নেই। রাজনীতিতেও নেই!’’ শনিবার সেই দিনের বক্তব্যের জন্য আদালতে শোভন-বৈশাখীর বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করেছেন রায়দিঘির বিধায়ক দেবশ্রী। সেই সঙ্গে আদালত চত্বরে সংবাদমাধ্যমের সামনে একাধিক অভিযোগও তোলেন।
শনিবার মহেশতলায় ছিল বিজেপি-র রোড শো। ট্যাবলোর উপরে ছিলেন শোভন-বৈশাখী। সেখানে দাঁড়িয়েই দু’জনে পালা করে দেবশ্রীকে আক্রমণ করেন। রায়দিঘিতে তাঁকে অপমান করা হয়েছে বলে দেবশ্রী যে অভিযোগ করেছেন তার জবাবে বৈশাখী বলেন, ‘‘ওটা আমার ব্যক্তিগত মত। মানহানির মামলা করে বাক্স্বাধীনতা খর্ব করতে পারবেন না দেবশ্রী। এখন যে ওঁকে আর দেখা যাচ্ছে না, সেটা অস্বীকার করতে পারেন না উনি।’’ দেবশ্রীর এখন সিনেমা না-করা নিয়ে রায়দিঘিতে বৈশাখী যে আক্রমণ করেন তার জবাবে শনিবার দেবশ্রী বলেন, ‘‘সিনেমা না করাটা আমার পছন্দ। উনি বলেছেন, আমি বাতিল নায়িকা।বহু বছর ধরে আমি সারা দেশের মনোরঞ্জন করে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেয়েছি।’’ এর জবাবে বৈশাখীর মন্তব্য, ‘‘ঐতিহাসিক যুগের অনেকের কথাই আমার জানা নেই। ছোটবেলায় ওঁর একটা ছবি ‘অ্যাডাল্ট’ বলে বাবা-মা দেখতে দেয়নি। অভিনেত্রী হিসেবে তিনি কী কী করেছেন তা জানা আছে। কিন্তু বর্তমানে ওঁকে যে দেখা যায় না এটা বাস্তব। এটা মানুষের কথা। সুচিত্রা সেনকেও তো একটা সময়ের পরে আর দেখা যায়নি। সেটা বলে হলে কি তিনি অপমানিত হতেন?’’
বৈশাখী কথা বলার মধ্যেই আক্রমণ শুরু করে দেন শোভন। বলেন, ‘‘ওর সম্পর্কে বলতে আমর লজ্জা করে। অভিযোগ উঠেছে, সাধারণ মানুষের কাছ থেকে টোটো দেওয়ার নাম করে বিপুল অর্থ তুলেছেন।’’ শনিবার দেবশ্রী বলেন, ‘‘শোভন চট্টোপাধ্যায় মতো মানুষেরা সামাজিক অস্বস্তি। পরিবার, সন্তানের কাছে, স্ত্রীর কাছে যে আপন নয়, সে কত বড় নেতা? সে কি জনপ্রিয় নেতা হতে পারে? মানুষের সামনে দাঁড়াতে পারে?’’ এ নিয়ে শোভন জবাব দেওয়ার আগেই মুখ খোলেন বৈশাখী। বলেন, ‘‘উনি তো ‘পলিটিক্যাল এমবারেসমেন্ট’। দিল্লিতে বিজেপি সদর দফতরে আমাকে দেখে ছিটকে গিয়েছিলেন। বিজেপি সদর দফতরে কেউ এনজিও করতে যায় না।’’ বৈশাখী এই কথা বলতে না বলতেই সমর্থন জানিয়ে শোভন বলেন, ‘‘কোন নাটক করতে গিয়েছিলেন?’’ সঙ্গে বৈশাখী জুড়ে দেন, ‘‘যত বালখিল্য কথাবার্তা।’’ ফের শোভন— ‘‘এনজিও-র নাম করে টোটো আর মোটো করুন উনি। নিজেকে খাটো করেছেন।’’
এর পরেই মোক্ষম আক্রমণটি করেন শোভন। তাঁর পরিবার নিয়ে দেবশ্রী যে প্রশ্ন তুলেছেন তার জবাবে বলেন, ‘‘উনি সন্তানের মা নন। আর সংসার? ওঁর যে সংসার ছিল, তার কী পরিণতি হল সেটা যেন মানুষের কাছে খোলসা করেন। আমি তো নির্দিষ্ট অভিযোগ এনে বিবাহবিচ্ছেদের মামলা করেছি। সেই মামলা চলছে... মায়ের থেকে মাসির দরদ বেশি। কথায় বলে, সে কে? ডাইনি।’’