দিলীপ ঘোষের অবস্থান আর শোভন চট্টোপাধ্যায় ও বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের অবস্থানের মধ্যে ফারাক আরও একবার স্পষ্ট হয়ে গেল।—ফাইল চিত্র।
সমস্যা আপাতত মিটলেও দেবশ্রী ইস্যু জিইয়ে রইল। বিজেপিতেই থাকছেন, দল ছাড়ছেন না— দিল্লিতে মুকুল রায়ের সঙ্গে বৈঠকের পরে জানিয়েছিলেন শোভন চট্টোপাধ্যায় ও বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু কলকাতায় নেমেই তাঁরা ফের বিজেপিতে দেবশ্রী রায়ের যোগদান সংক্রান্ত প্রশ্নের মুখে পড়লেন। সে প্রসঙ্গে রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষের অবস্থান আর শোভন চট্টোপাধ্যায়ের অবস্থানের মধ্যে ফারাক আরও একবার স্পষ্ট হয়ে গেল।
দিল্লি থেকে শোভনরা কলকাতায় ফেরার আগেই এ দিন তাঁদের বিষয়ে সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছিল দিলীপ ঘোষকে। তিনি প্রথমে বলেন, ‘‘প্রথম দিকে নতুন জায়গায় সবার সমস্যা হয়। নতুন বউ বাড়িতে এলে মানিয়ে নিতে সমস্যা হয়। পরে সবার মন জয় করে বউ থেকে বউমা হয়ে ওঠে।’’ মুকুল রায়ের সঙ্গে শোভনদের বৈঠকের পরে বরফ গলার যে ইঙ্গিত মিলেছে, সে প্রসঙ্গে দিলীপ বলেন, ‘‘মুকুলদা সিনিয়র। সকলকে বুঝিয়ে-বাজিয়ে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব ওঁর। উনি সেটা করছেন। সব কিছু ঠিক পথেই যাচ্ছে। কোনও সমস্যা থাকবে না।’’
কিন্তু দেবশ্রী রায়কে দলে নেওয়ার বিষয়ে শোভনদের আপত্তির প্রসঙ্গ উঠতেই দিলীপের মেজাজ বদলে যায়। তিনি বলেন, ‘‘আমি সকলের সামনে বলছি, কোনও শর্ত ছিল না। আমি কারও শর্ত মেনে চলিনি, মেনে চলবও না। ওই দিন দেবশ্রীর নামই আসেনি। আর কাকে নেব, কাকে নেব না, সেটা সভাপতি হিসেবে আমিই ঠিক করব। আমি শুধুমাত্র কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কথা শুনি। আর কারও কথা শুনে আমি চলি না।’’
আরও পড়ুন: বৌবাজার বিপর্যয় নিয়ে নবান্নে বৈঠক মমতার, ক্ষতিগ্রস্তদের ৫ লক্ষ টাকা দেওয়ার প্রস্তাব
অন্য দিকে কলকাতা বিমানবন্দরেই এ দিন মিডিয়ার মুখোমুখি হয়েছিলেন শোভন চট্টোপাধ্যায় ও বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়। দিলীপ ঘোষের প্রতিক্রিয়ার প্রসঙ্গ স্বাভাবিক ভাবেই ওঠে তাঁদের সামনে। শোভন বলেন, ‘‘এ কথা ঠিক যে, কোনও পরিবারে নতুন কেউ এলে, তাঁকে নিয়ে কিছু সমস্যা হতে পারে। কিন্তু তিনি কতটা সহ্য করতে পারবেন, সেটাও মাথায় রাখা উচিত।’’
আরও পড়ুন: গমগমে সোনার বাজার যেন শ্মশান, পথে নামলেন বৌবাজারের দোকানিরা
দেবশ্রীর বিষয়ে দিলীপ যা বলেছেন, সে প্রসঙ্গে শোভন বলেন, ‘‘দিলীপবাবু ঠিকই বলেছেন। কোনও শর্ত দিয়ে আমরা দলে ঢুকিনি। কোনও পদ চাই বা কোনও দায়িত্ব চাই, এ রকম কিছু বলিনি। কিন্তু দেবশ্রী রায়ের বিষয়ে আমার মতামত কী, সে কথা প্রথম দিনই নাড্ডাজিকে জানিয়ে দিয়েছিলাম। অরবিন্দ মেনন, কৈলাস বিজয়বর্গীয় বা দিলীপ ঘোষকেও একই কথা বলেছিলাম। কালকে মুকুল রায়কেও সে কথাই বলেছি। মুকুল রায় আমাকে বলেছেন, ওটা নতুন করে বলতে হবে না। কারণ নাড্ডাজির সঙ্গে যখন আমার কথা হয়েছিল, তখন মুকুল রায়ও সেখানে ছিলেন।’’
শোভন আরও বলেন, ‘‘প্রথম দিনেই আমাকে জানানো হয়েছিল, দেবশ্রী রায় হল ক্লোজড চ্যাপ্টার। তার পরেও রোজ একই প্রশ্ন করলে আমার উত্তর বদলাবে না। রোজ রোজ একই প্রশ্ন তোলা হচ্ছে। এ বিষয়ে আমি নতুন করে আর একটা কথাও খরচ করতে চাই না।’’
বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ও প্রায় একই কথা বলেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘কাকে দলে নেবেন, কাকে নেবেন না, সেটা অবশ্যই দিলীপবাবুই স্থির করবেন। তা নিয়ে আমাদের কিছু বলার নেই। তিনি নিজের মতো করেই সিদ্ধান্ত নিন। তার পরে আমরা যা করার করব। আমাদের অবস্থান তো আমরা আগেই জানিয়ে রেখেছি।’’