প্রতীকী ছবি।
দেড়তলা বাড়িটার চিলেকোঠার ছাদে খান ছ’য়েক রেডিয়ো অ্যান্টেনা। একটা ঘর ভর্তি নানা রকমের এইচ এফ (হাই ফ্রিকোয়েন্সি) রেডিয়ো। আর সেগুলোতে দিনভর কান পেতে থাকেন ষাটোর্ধ্ব বাবুল গুপ্ত।
বারাসতের কাজীপাড়ার বাসিন্দা বাবুলবাবুর নেশা পৃথিবীর দুর্গম প্রান্তের রেডিয়ো স্টেশনগুলিকে খোঁজা। রেডিয়োর পরিভাষায় ডিএক্সিং করা। বছর তিরিশ ধরে শখের রেডিয়োর নেশায় পেয়েওছেন অসংখ্য নাম না জানা বা প্রত্যন্ত দ্বীপ থেকে প্রেরিত শব্দতরঙ্গের হদিশ। অ্যান্টার্কটিকার দক্ষিণ মেরুতে গবেষণার জন্য ক্যাম্প করা বিজ্ঞানীদের দল বছরে একটা দিন একটি নির্দিষ্ট সময়ে তাঁদের গবেষণার বিষয় ও তার অগ্রগতি নিয়ে যাবতীয় তথ্য রেডিয়ো তরঙ্গের মাধ্যমে সম্প্রচার করেন। হাওয়ার গতি, প্রাকৃতিক অবস্থা এবং সর্বোপরি পছন্দের দেশ না হলে অন্য দেশের শব্দ তরঙ্গে বিকৃত আওয়াজের বিড়ম্বনা এড়িয়ে এশিয়া মহাদেশের কোনও দেশে সেই শব্দ তরঙ্গ পৌঁছনো কার্যত অসম্ভব। বাবুলবাবু এলআরএ ৩৬ নামে এই রেডিয়ো স্টেশনটি ধরতেই মরিয়া হয়ে গত ২০ বছর ধরে কখনও চাঁদিপুর, কখনও মন্দারমণি আবার কখনও হেনরি আইল্যান্ডে ক্যাম্প করে থেকেছেন। কিন্তু কে জানত, বারাসতের বাড়ির দেড়তলার রেডিয়ো স্টেশন থেকেই ১৫.৪৭৬ কিলোহার্জ ব্যান্ডে মিলে যাবে দক্ষিণ মেরু আর কলকাতা! বাস্তবে তাই হয়েছে। গত আট অগস্ট দক্ষিণ মেরুর এই অস্থায়ী রেডিয়ো স্টেশনটির সম্প্রচারিত তথ্য রেকর্ড করেছেন বাবুলবাবু। তার ভিডিয়ো ক্লিপ ওই রেডিও স্টেশন কর্তৃপক্ষকে পাঠানোয় তাঁরাও হতবাক।
ওয়েস্ট বেঙ্গল রেডিয়ো ক্লাবের সম্পাদক অম্বরীশ নাগ বিশ্বাস বলেন, ‘‘এটা অপ্রত্যাশিত প্রাপ্তি। যেখানে ইন্টারনেট পৌঁছয় না, বাতাসে বয়ে আসা শব্দতরঙ্গ জুড়ে দিল সেই জায়গাকেও।’’