সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। — ফাইল চিত্র।
মাঝে ছ’মাসের ফারাক। গত ২৩ মে ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহা গর্বের সঙ্গে ঘোষণা করেছিলেন, তাঁর রাজ্য প্রাক্তন ক্রিকেটার সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে পর্যটনের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর হিসাবে পাচ্ছে। আর মঙ্গলবার সেই ঘোষণার ছ’মাস পূর্ণ হওয়ার দু’দিন আগে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পশ্চিমবঙ্গের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর পদের দায়িত্ব দিলেন সৌরভকে।
ভারতীয় ক্রিকেট দলের প্রাক্তন অধিনায়ক, সিএবির প্রাক্তন সভাপতি, বিসিসিআইয়ের প্রাক্তন সভাপতি মহারাজের মুকুটে বর্তমানে জোড়া পালক। দুই রাজ্যের সরকারের সঙ্গে তিনি যুক্ত হয়ে গেলেন। ফারাক একটাই। একটি রাজ্য বিজেপি শাসিত আর অন্যটি একেবারে বিপরীত শিবিরের। তৃণমূল শাসিত।
চলতি বছরের মার্চে দ্বিতীয় বার ত্রিপুরার ক্ষমতায় আসে বিজেপি। সরকার গঠনের পরেই মুখ্যমন্ত্রী মানিক পর্যটন শিল্পের প্রসার ঘটাতে ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডরের খোঁজ শুরু করেন। ত্রিপুরাতেও বাংলার ‘দাদা’ খুবই জনপ্রিয়। সেখানকার বাঙালিদের কাছেও অত্যন্ত গ্রহণযোগ্য মুখ হিসাবে সৌরভের নাম উঠে এসেছিল সরকারের আলোচনা। তার পরেই ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রীর প্রস্তাব নিয়ে কলকাতায় এসে সৌরভের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন রাজ্যের পর্যটনমন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী। গত ২৩ মে সুশান্ত ত্রিপুরার পর্যটনসচিব উত্তমকুমার চাকমা এবং ওই দফতরের অধিকর্তা তপনকুমার দাস কলকাতায় আসেন সৌরভের সঙ্গে আলোচনা করতে। পুষ্পস্তবকের পাশাপাশি বিখ্যাত ত্রিপুরা সুন্দরী মন্দিরের একটি মডেল মহারাজকে উপহার দেন তাঁরা। আলোচনা হয় রাজ্যের পর্যটনের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর হওয়া নিয়ে। ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের প্রাক্তন সভাপতি বর্তমানে আইপিএলে দিল্লির দলের সঙ্গে যুক্ত। সেই সঙ্গে ত্রিপুরা সরকারের প্রস্তাবও গ্রহণ করেন বলে জানানো হয়। আলোচনার দিনেই ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সমাজমাধ্যমে সৌরভের ছবি-সহ একটি পোস্ট করেন। সেখানেই তিনি সৌরভকে সঙ্গে নিয়ে রাজ্যের পর্যটন শিল্পের উন্নতির আশা প্রকাশ করেন।
বাংলার মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য সৌরভের সঙ্গে সরকারের আলোচনার বিষয়ে মাঝখানে পর্যটনমন্ত্রী বা দফতরকে রাখেননি। তিনি নিজেই সরাসরি ঘোষণা করে দেন। সেই ঘোষণার মঞ্চে দাঁড়িয়েই সৌরভের হাতে ব্যক্তিগত ভাবে একটি চিঠি তুলে দেন। নবান্ন সূত্রে খবর, সরকারি ভাবে পরে নিয়োগপত্র দেবেন মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী। তবে মমতার ঘোষণা মতো ত্রিপুরা আর বাংলার দায়িত্বের মধ্যে ফারাক রয়েছে। সৌরভ ত্রিপুরার পর্যটনের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর। আর বাংলার ক্ষেত্রে তিনি রাজ্যের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর। এর আগে রাজ্যের সঙ্গে যে চুক্তি হয়েছিল অভিনেতা শাহরুখ খানের সঙ্গে। মাঝে অবশ্য মমতা জানিয়েছিলেন, রাজ্যের পর্যটন ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডরের দায়িত্ব তিনি অভিনেতা তথা দলেরই সাংসদ দেবের উপরে দিতে চান।
সৌরভকে নিয়ে রাজনৈতিক টানাপড়েনের জল্পনা নতুন কিছু নয়। কখনও কখনও শোনা গিয়েছে তিনি বিজেপিতে যোগ দিতে পারেন। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ কলকাতায় এসে সৌরভের বাড়িতে নৈশভোজে দলীয় নেতাদের নিয়ে গেলে সে জল্পনা আরও অনেক বেড়ে যায়। ত্রিপুরার সরকার সৌরভকে দায়িত্ব দেওয়ার পরে বাংলার বিজেপি নেতৃত্ব এমনটাও বলেছিল যে, তৃণমূল প্রাপ্য সম্মান দেয়নি, বিজেপি দিল। ফের জল্পনার আবহ তৈরি হয়। যদিও তার কিছু দিনের মধ্যেই দেখা যায়, মমতার স্পেন সফরের সময়ে মাদ্রিদে শিল্পপতিদের সঙ্গে বৈঠকে সৌরভের উপস্থিতি নিয়ে নতুন জল্পনাও তৈরি হয়েছে। যদিও সৌরভ সব সময়েই দুই দলের থেকে সমদূরত্ব বজায় রাখার কথাই জানিয়ে এসেছেন। সেটা স্পষ্ট করতে শাহকে যেমন মমতার পছন্দের দই খাইয়েছেন, তেমনই বাংলার প্রতিনিধি হিসাবে বার বার দেশ তথা বিশ্বের দরবারে সওয়াল করেছেন। যেমনটা করেছেন মঙ্গলবারও। বিশ্ব বঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি প্রথম থেকেই হাজির ছিলেন। নিজের বক্তৃতায় বলেন, ‘‘রাজ্যে সত্যিই বিনিয়োগের পরিবেশ তৈরি হয়েছে। আপনারা আসুন।’’ আর সেই অনুষ্ঠানেই মমতা তাঁর বক্তৃতার শেষে সৌরভের নতুন দায়িত্বের ঘোষণা করেন।