মেয়ে সানার পোস্ট নিয়ে আলোড়ন। পাল্টা পোস্ট সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের। —ফাইল চিত্র
মেয়ে সানার একাধিক ‘রাজনৈতিক’ পোস্ট, এবং তা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় তুমুল আলোড়ন। শেষ পর্যন্ত ‘নতুন মাঠে’ পরিস্থিতি সামলাতে নামতে হল সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে। সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ-প্রতিবাদের আবহেই খুশবন্ত সিংহকে উদ্ধৃত করে সৌরভ-কন্যার পোস্ট ঘিরে উত্তাল হয়ে উঠেছে সোশাল মিডিয়া। তা আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে আসতেই এ বার ব্যাট ধরলেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। বললেন, ওকে জড়াবেন না। রাজনীতি সম্পর্কে জানার ব্যাপারে তাঁর মেয়ে সানা যে খুবই ছোট, তা-ও দাবি সৌরভের।
বুধবার দুপুরে সানার ‘রাজনৈতিক’ পোস্ট সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড় তুলে দেয়। যদিও পরে তা সরিয়ে ফেলা হয়। কিন্তু, তা যে আলোচনার ভরকেন্দ্রে উঠে এসেছে, তা বুঝতে অসুবিধা হয়নি প্রাক্তন ক্রিকেট অধিনায়ক তথা বিসিসিআই প্রেসিডেন্ট সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের। এর পরেই ময়দানে নামেন তিনি। টুইটে তিনি লেখেন, ‘এই সব বিষয় থেকে সানাকে দয়া করে দূরে রাখুন। এই পোস্টটা সত্যি নয়। রাজনীতির কিছু সম্পর্কে জানার ব্যাপারে ও খুবই ছোট।’
অবশ্য, নিজের পোস্টে নিজস্ব কোনও মন্তব্য করেননি সদ্য আঠারো পেরনো সানা গঙ্গোপাধ্যায়। বদলে খুশবন্ত সিংহের লেখা উদ্ধৃত করেন তিনি। কিন্তু, সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ-প্রতিবাদ চলছে। এ রাজ্যেও কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে পথে নেমে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ দেখানো হচ্ছে। কোথাও কোথাও অশান্তিও ছড়িয়েছে। আর সেই আবহেই সৌরভ-কন্যার এমন ‘পোস্ট’ রীতিমতো সাড়া ফেলে দিয়েছে। কী লিখেছেন সানা? ইনস্টাগ্রাম স্টোরি হিসেবে পোস্ট করতে গিয়ে তিনি ২০০৩ সালে প্রকাশিত খুশবন্ত সিংহের ‘দ্য এন্ড অব ইন্ডিয়া’কে বেছে নিয়েছেন। সানা সেই বই থেকে তুলে ধরেছেন যে অংশ, সেখানে লেখা হয়েছে, ‘প্রতিটা ফ্যাসিস্ত সরকারের একটা দল বা গোষ্ঠীর প্রয়োজন হয়। নিজেদের বেড়ে ওঠার জন্য তারা ওই দল বা গোষ্ঠীগুলিকে ব্যবহার করতে তাদের শয়তানেও পরিণত করে। দু’একটা দল দিয়ে এটা শুরু হয়। কিন্তু সেটা কখনওই সেখানে শেষ হয় না। ঘৃণার উপর নির্ভর করে যে আন্দোলন, সেই আন্দোলন নিজেকে ধরে রাখতে পারে অবিরাম একটা ভয় বা দ্বন্দ্বের বাতাবরণ তৈরি করে।’’
আরও পড়ুন: মুসলিম নন বলে নিশ্চিন্ত! মূর্খের স্বর্গে আছেন, পোস্ট সৌরভ-কন্যা সানার
রাজনৈতিক মহলের মতে, সানা এই উদ্ধৃতির মাধ্যমে আসলে বিজেপি এবং সঙ্ঘ পরিবারকেই নিশানা করতে চেয়েছেন। এখানেই থেমে থাকেননি সানা। খুশবন্তের লেখার আরও কিছু অংশ তিনি পোস্ট করেছেন। সেই অংশে লেখা হয়েছে, ‘আজ যারা আমরা নিজেদের নিরাপদ মনে করছি, ভাবছি আমরা তো মুসলমান বা খ্রিস্টান নই, তারা মূর্খের স্বর্গে বাস করছি। সঙ্ঘ ইতিমধ্যেই বামপন্থী ইতিহাসবিদ এবং পশ্চিমি সংস্কৃতিতে বিশ্বাসী যুবসমাজকে টার্গেট করেছে। কাল তাদের ঘৃণা গিয়ে পড়বে স্কার্ট পরিহিত মহিলা, যাঁরা মাংস খান, মদ্যপান করেন, বিদেশি সিনেমা দেখেন, বছর বছর তীর্থে যান না, দাঁতনের পরিবর্তে টুথপেস্ট ব্যবহার করেন, আয়ুর্বেদিকের বদলে অ্যালোপ্যাথি ওষুধ পছন্দ করেন, দেখা হলে ‘জয় শ্রী রাম’ বলার বদলে হাত মেলান বা চুম্বন করেন, তাঁদের উপর। কেউ নিরাপদ নয়। ভারতকে বাঁচাতে হলে এগুলি আমাদের ভীষণ ভাবে অনুধাবন করতে হবে।’
এখানেই থামেননি সানা। জামিয়া মিলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় এবং আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের পথ ধরে দেশের কোন কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিক্ষোভ-প্রতিবাদে মুখর হয়ে উঠছে তার একটি মানচিত্রও পোস্ট করেন তিনি।
আরও পড়ুন: বৈঠকে সন্তুষ্ট রাজ্যপাল, কিন্তু তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য সিএএ বিরোধী বিজ্ঞাপন নিয়ে
নেট দুনিয়ায় ইতিমধ্যেই সানার এই পোস্ট বহু আলোচিত। তাদের একটা অংশের মতে, গোটা পোস্টটাতে যে ভাবে খুশবন্তের লেখার মাধ্যমে সানা ভারতের বর্তমান পরিস্থিতিকে তুলে ধরেছেন, তা প্রশংসনীয়। কেউ কেউ আবার সানার বয়সকে উল্লেখ করে লিখেছেন, রাজনীতি বোঝার জন্য বড়ই অল্প বয়স। সেখানেই অপর পক্ষ মনে করিয়ে দিয়েছেন, ভারতে ভোট দেওয়ার বয়স কিন্তু ১৮। সানার বয়স ১৮ পেরিয়ে গিয়েছে বলেও মন্তব্য করেছেন তাঁদের একাংশ।
সৌরভ সব সময়েই রাজনৈতিক আঙিনা থেকে নিজেকে দূরে রেখেছেন। তাঁর মুখে কোনও রাজনৈতিক মন্তব্য কখনওই শোনা যায়নি। কিন্তু সানার পোস্ট রাজনৈতিক বার্তায় ভরপুর বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।