পূর্ব নির্ধারিত সূচি মতোই মঙ্গলবার দুপুর আড়াইটে নাগাদ শিলিগুড়ির তেনজিং নোরগে বাস টার্মিনাসে পৌঁছেছিলেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব। উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমের (এনবিএসটিসি) কিছু নতুন বাস উদ্বোধনের কথা ছিল সংস্থার চেয়ারম্যান গৌতমবাবুর। অনুষ্ঠান শুরুও হয়। তখনই মন্ত্রীর মোবাইলে একটি ফোন আসে। বেশ কিছু ক্ষণ কথাও বলেন মন্ত্রী। তার পরে সভায় তাঁর মিনিট সাতেকের বক্তৃতা জুড়েই ছিল নিগমের চেয়ারম্যান হিসেবে তাঁর কাজের সাফল্যের বিবরণ।
দলের নেতাদের একাংশের ফোনে ফোনে তত ক্ষণে খবর ছ়ড়িয়ে গিয়েছে, গৌতমবাবু আর নিগমের চেয়ারম্যান নেই। তাঁর জায়গায় এনবিএসটিসি-র নতুন চেয়ারম্যান মনোনীত হয়েছেন জলপাইগুড়ি কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান সৌরভ চক্রবর্তী। জলপাইগুড়ি এবং আলিপুরদুয়ারে তৃণমূলের জেলা সভাপতিও সৌরভবাবু।
হঠাৎ করে কোনও বিধিবদ্ধ সংস্থার চেয়ারম্যান বদলে যাওয়ার ঘটনা অবশ্য তৃণমূল জামানায় প্রথম নয়। শিলিগুড়িতেই তার উদাহরণ রয়েছে। বছর তিনেক আগে বাগডোগরা থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে একই উড়ানে কলকাতা পৌঁছেছিলেন শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষর (এসজেডিএ) তৎকালীন চেয়ারম্যান রুদ্রনাথ ভট্টাচার্য। দমদম বিমানবন্দরে পৌঁছে জানতে পারেন, তাঁকে নিতে সরকারি গাড়ি আসেনি। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কিছু আগেই এসজেডিএ-র চেয়ারম্যান পদ থেকে তাঁকে সরিয়ে সে জায়গায় মন্ত্রী গৌতমবাবুকে বসানো হয়েছে। তৃণমূলের অন্দরের খবর, এসজেডিএ-র ক্ষেত্রে দুর্নীতির অভিযোগের কারণেই তখন সংস্থার চেয়ারম্যান পরিবর্তন করা হয়।
তবে এ দিন এনবিএসটিসি-র চেয়ারম্যান বদলের ক্ষেত্রে সদ্য সমাপ্ত পুরভোটের ফলের প্রভাব পড়েছে বলে মনে করছেন তৃণমূলেরই কিছু নেতা। এ বার পুরভোটে শিলিগুড়িতে গৌতম দেবের নেতৃত্বে লড়াই করে বামেদের কাছে হেরে গিয়েছে তৃণমূল। কিন্তু সৌরভবাবুর নেতৃত্বে জলপাইগুড়ি এবং মালবাজার দুই পুরসভা একক ভাবে দখল করেছে তৃণমূল। দল সূত্রে খবর, বিশেষত জলপাইগুড়ি পুরসভায় নিরঙ্কুশ গরিষ্ঠতা পাওয়ায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও সন্তুষ্ট। জলপাইগুড়ির জেলা সভাপতি হিসেবে পুরভোটের জয়ের এই ‘পুরস্কার’-ই সৌরভবাবু পেলেন বলে মনে করা হচ্ছে।
গৌতমবাবুর ঘনিষ্ঠদের অনেকেরই অবশ্য দাবি, তিনি উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতর ও শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ি উন্নয়ন পর্ষদ ছাড়াও একই সঙ্গে দশটি গুরুত্বপূর্ণ পদের দায়িত্ব সামলাচ্ছিলেন। তাই কয়েকটি পদের দায়িত্ব ছাড়তে তিনি দলনেত্রীর কাছে আর্জি জানিয়েছিলেন। তাঁদের দাবি, সেই মতোই গৌতমবাবুকে এনবিএসটিসি-র চেয়ারম্যানের পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।