শুভেন্দুর সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়নি বলে দাবি তুষারের। তার সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অভিষেক। —ফাইল চিত্র।
দিল্লিতে শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতার ‘সাক্ষাৎ’ ঘিরে বিতর্ক তুঙ্গে। শুক্রবার দু’জনেই দাবি করেছেন তাঁদের মধ্যে দেখা হয়নি। শুভেন্দুর দাবি, তুষার দেখা করতে চাননি। অন্য দিকে, তুষারের দাবি, শুভেন্দু এসেছিলেন বটে, তিনি অন্য কাজে ব্যস্ত থাকায় দেখা হয়নি। যদিও ইতিমধ্যেই তুষারের অপসারণ চেয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে তৃণমূলের চিঠি পৌঁছেছে। সেই আবহে শুক্রবার টুইটও করলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। অভিযোগ করলেন, শুভেন্দুর সঙ্গে দেখা হওয়ার বিষয়টা ‘ধামাচাপা’ দেওয়ার চেষ্টা করছেন তুষার। একই সঙ্গে তিনি তুষারের অফিসের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ প্রকাশের দাবিও জানালেন। বিজেপি যদিও এর মধ্যে বিতর্কের কিছু দেখছে না। তাদের মতে, দু’জন ব্যক্তির মধ্যে দেখা হতেই পারে। তা নিয়ে বিতর্কের কিছু নেই বলেই দাবি তাদের।
বৃহস্পতিবার তুষারের দিল্লির বাড়িতে শুভেন্দু গিয়েছিলেন বলে দাবি করেছিলেন তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। কুণালের দাবির প্রেক্ষিতে শুভেন্দু বলেছিলেন, ‘‘জেল খাটা কারও অভিযোগ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাই না।’’ সারদা এবং নারদ-কাণ্ডের তদন্ত করছে সিবিআই। সেই সিবিআইয়ের আইনজীবী সলিসিটর জেনারেল তুষার। ওই দুই মামলায় এক জন অভিযুক্তের সঙ্গে কেন তুষার দেখা করেছেন, এই প্রশ্ন তুলে সলিসিটর জেনারেল পদ থেকে তাঁর অপসারণ চেয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠিও দেয় তৃণমূল। তৃণমূলের তিন সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায়, ডেরেক ও’ব্রায়েন এবং মহুয়া মৈত্র ওই চিঠি লেখেন। তুষারের অপসারণ চেয়ে তাঁরা লেখেন, ‘প্রভাব খাটানোর উদ্দেশ্যেই এমন বৈঠকের আয়োজন হয়েছিল বলে আশঙ্কার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে বিচার প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা এবং নিরপেক্ষতা বজায় রাখার জন্য তুষারকে সরানো প্রয়োজন।’
এই আবহেই শুক্রবার শুক্রবার মুখ খোলেন সলিসিটর জেনারেল তুষার। জানান, আগে থেকে কিছু না জানিয়ে শুভেন্দু অধিকারী তাঁর সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন বটে। কিন্তু বিজেপি বিধায়কের সঙ্গে দেখা করার সময় পাননি তিনি। তাই বিতর্কের কোনও অবকাশ নেই। শুক্রবার লিখিত একটি বিবৃতি প্রকাশ করেন তুষার জানান, ‘আগে থেকে কিছু না জানিয়ে বৃহস্পতিবার দুপুর ৩টে নাগাদ আমার বাসভবন তথা দফতরে হাজির হন শুভেন্দু অধিকারী। কিন্তু পূর্ব নির্ধারিত বৈঠক নিয়ে নিজের চেম্বারে ব্যস্ত ছিলাম আমি। আমার কর্মীরা ওঁকে দফতরের ওয়েটিং রুমে অপেক্ষা করতে বলেন। চা পানের প্রস্তাবও দেওয়া হয়।’ কিন্তু শুভেন্দু অপেক্ষা করলেও, তিনি সময় বার করতে পারেননি বলে দাবি তুষারের। বিবৃতিতে তুষার আরও লিখেছেন, ‘বৈঠক শেষ হলে আমার ব্যক্তিগত সচিব শুভেন্দু দেখা করতে এসেছেন বলে জানান। আমি ওঁকে অনুরোধ করি, শ্রীযুক্ত অধিকারীকে জানিয়ে দিন আমি দেখা করতে পারব না। এত ক্ষণ যে ওঁকে অপেক্ষা করতে হল, তার জন্য ক্ষমাও চেয়ে নিই। এটা জানার পর, দেখা করার জন্য জোরাজুরি না করে ধন্যবাদ জানিয়ে চলে যান উনি। তাই শ্রীযুক্ত অধিকারীর সঙ্গে সাক্ষাতের কোনও প্রশ্নই ওঠে না।’
এই বিবৃতি প্রকাশ্যে আসতেই দু’টি টুইট করেন অভিষেক। লেখেন, ‘শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে গোপন সাক্ষাৎ ধামাচাপা দেওয়ার যে চেষ্টা শ্রীযুক্ত মেহতা করছেন, তা তখনই গ্রহণযোগ্য হবে যখন তিনি শুভেন্দু তাঁর বাসভবনে থাকাকালীন সেখানকার সিসিটিভি ফুটেজ প্রকাশ করবেন। তা ছাড়া, আগে থেকে অনুমতি না নিয়ে কি সলিসিটর জেনারেলের বাসভবনে উপস্থিত হয়েছিলেন শ্রীযুক্ত অধিকারী? রিপোর্ট বলছে, একঝাঁক আধিকারিকের উপস্থিতিতে সলিসিটর জেনারেলের বাসভবনে ঢুকেছিলেন শ্রীযুক্ত অধিকারী এবং সেখানে ৩০ মিনিট মতো ছিলেন।’ এর পরেই তিনি লেখেন, ‘তা হলে কি সত্যিই বৈঠক হওয়ার কথা ছিল? ঘটনাক্রম যে ভাবে কদর্য হয়ে উঠছে, তাতে সত্য বেরিয়ে আসবে বলেই আশা করতে পারি।’
শুক্রবারও এ বিষয়ে মুখ খুলেছেন কুণাল। তিনি বলেন, ‘‘বৈঠক যদি না হয়ে থাকে, তা হলে গতকালই কেন অস্বীকার করলেন না কেন শুভেন্দু? আজ তুষার মেহতার বিবৃতির পর কেন দেখা হয়নি বলেছেন?’’ কুণাল আরও বলেন, ‘‘সলিসিটর জেনারেল বলছেন, শুভেন্দু তাঁর বাড়ি গিয়েছিলেন। কিন্তু দেখা হয়নি। তা যদি আদৌ সত্য হয়, তা হলে বলতে হয়, নারদ মামলায় তৃণমূলের নেতাদের ক্ষেত্রে আদালতে তিনি বলেছিলেন, প্রভাবশালীরা বাইরে থাকলে সমস্যা। ওই মামলায় এফআইআর-এ তো শুভেন্দুরও নাম ছিল! তিনি প্রভাব খাটাতে সিবিআই-এর আইনজীবীর বাড়িতে গেলে, তাঁকে গ্রেফতার করা হবে না কেন?’’ পরে টুইটারেও নিজের বক্তব্য তুলে ধরেন কুণাল।
তবে বিজেপি নেতা শমীক ভট্টাচার্যের দাবি, দুই ব্যক্তির মধ্যে দেখা হতেই পারে। তাতে এত বিতর্কের কিছু নেই।