শহরের কাছে ওঝা-রাজ, মৃত্যু সাপে কাটা মহিলার

পুলিশ জানায়, দেগঙ্গার চাঁপাতলার কুমরুলির ওই মহিলার নাম ছপুরাবিবি (৩৭)। তাঁর স্বামী করিম মণ্ডল কাঠ ব্যবসায়ী। বাসিন্দারা জানান, নতুন বাড়ি তৈরি হচ্ছিল ছপুরাদের।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ জুলাই ২০১৯ ০৪:৩৯
Share:

প্রতীকী ছবি।

অদূরেই শহর কলকাতায় রয়েছে চিকিৎসার নানান ব্যবস্থা। তারও আগে রয়েছে স্থানীয় হাসপাতাল। তা সত্ত্বেও হাসপাতালে না-পাঠিয়ে দুই ওঝার ভরসায় থাকায় মারা গেলেন দেগঙ্গার এক সাপে কাটা মহিলা। বাড়ি তাঁর কলকাতার ৫০ কিলোমিটারের মধ্যে।

Advertisement

পুলিশ জানায়, দেগঙ্গার চাঁপাতলার কুমরুলির ওই মহিলার নাম ছপুরাবিবি (৩৭)। তাঁর স্বামী করিম মণ্ডল কাঠ ব্যবসায়ী। বাসিন্দারা জানান, নতুন বাড়ি তৈরি হচ্ছিল ছপুরাদের। তার সামনে টিনে ঘেরা ছাউনিতে থাকতেন ওই দম্পতি। ঘরে ডাঁই করে রাখা ছিল, বালি, সিমেন্ট, কাঠের তক্তা। তার মধ্যেই সোমবার রাতে মাটিতে শুয়ে ছিলেন করিম-ছপুরা। করিম মঙ্গলবার বলেন, ‘‘ভোর ৪টে নাগাদ ছপুরার চিৎকারে ঘুম ভেঙে যায়। আলো জ্বালিয়ে দেখি, ওর কান থেকে রক্ত ঝরছে আর কাঠের ফাঁকে ঢুকে যাচ্ছে একটা সাপ।’’

ছপুরার কাতরানি শুনে ছুটে আসেন আত্মীয়-পড়শিরা। ছপুরাকে মোটরবাইকে বসিয়ে এলাকার ওঝা ইয়াদ আলির কাছে নিয়ে যান করিম। দেখেশুনে ইয়াদ জানান, এর চিকিৎসা তাঁর কম্মো নয়। ছপুরাকে বাড়িতে ফিরিয়ে আনা হয়। বাসিন্দারা জানান, তত ক্ষণে আরও নেতিয়ে পড়েছেন ছপুরা। এ বার তিন কিলোমিটার দূরে মামুরাবাদের ওঝা গোলাম সাত্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে। করিমের ভাইপো শহিদুল্লা ইসলাম বলেন, ‘‘কাকিমার তখন দম নিতে কষ্ট হচ্ছিল। সাত্তার নাকেমুখে ফুঁ দিতে থাকে। ঘটিতে করে করে জলপোড়া দেয়। জল খাওয়াতে থাকে। কিন্তু শ্বাসনালিতে জল আটকে যায়।’’

Advertisement

কেটে যায় আরও এক ঘণ্টা। তখন আর সাড় নেই ছপুরার। শহিদুল্লা জানান, সাত্তার ওঝা বলেন, ‘এ বার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময় হয়েছে।’ তখন সকাল ৯টা। বিশ্বনাথপুর স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসক জানিয়ে দেন, আগেই মৃত্যু হয়েছে ছপুরার। হাসপাতালে পুলিশ জানায়, ময়না-তদন্তের রিপোর্ট এলে পুরো বিষয়টি পরিষ্কার হবে।

বিকেলে বাড়িতে মৃতদেহ ঘিরে ভিড় করেন পড়শিরা। কেউ বলেন, ‘সাপে কামড়ালে আমরা তো ওঝার কাছেই যাই।’ কেউ বলেন, ‘সাপে কাটলে বাঁধন দেওয়া হয়। ছপুরার কানে ছোবল মারায় বাঁধন দেওয়া যায়নি।’ করিম বলেন, ‘‘হাসপাতালে নিয়ে গেলেই ও বেঁচে যেত। আমার মাথাটাই গোলমাল হয়ে গিয়েছিল।’’

দেগঙ্গা ব্লকের স্বাস্থ্য আধিকারিক সুরজ সিংহ বলেন, ‘‘সঙ্গে সঙ্গে আনলে ওঁকে হয়তো বাঁচানো যেত। সাপে কামড়ালে সরকারি হাসপাতালে আনার জন্য নানা ভাবে প্রচার চলছে। তা সত্ত্বেও কুসংস্কার বন্ধ হচ্ছে না।’’

এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও।সাবস্ক্রাইব করুনআমাদেরYouTube Channel - এ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement