মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিশানা করলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি। ফাইল চিত্র।
নারী এবং শিশুকল্যাণ খাতে দেওয়া ২৬৭ কোটি টাকা খরচই করেনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। শনিবার কলকাতায় সাংবাদিক বৈঠকে এমন দাবিই করেছেন কেন্দ্রীয় নারী এবং শিশুকল্যাণ মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি। কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে প্রায়ই বঞ্চনার অভিযোগে সরব হন মুখ্যমন্ত্রী। বকেয়ার টাকা না মেটানো নিয়ে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে লাগাতার অভিযোগ করে আসছে তৃণমূল সরকার। এর পাল্টা এ বার মুখ খুললেন স্মৃতি। তাঁর মন্ত্রক থেকে দেওয়া ২৬৭ কোটি ৫১ লক্ষ টাকা কেন খরচ করেনি বাংলার সরকার, এর জবাব চেয়েছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। স্মৃতির পাল্টা কেন্দ্রকে নিশানা করেছে তৃণমূলও।
রাজ্যের প্রাপ্য টাকা কেন্দ্রীয় সরকার দিচ্ছে না বলে বার বার অভিযোগ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। রাজনৈতিক ভাবে ক্ষমতা দখল করতে না পেরে বাংলার সরকারকে ‘আর্থিক ভাবে অবরুদ্ধ’ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ তৃণমূলের। এই অভিযোগের পাল্টা কেন্দ্রের পাঠানো টাকা খরচ না করা নিয়ে যে দাবি করলেন স্মৃতি, তা এই পর্বে নতুন মাত্রা যোগ করল। কলকাতায় এসে রাজ্যের এই বঞ্চনার অভিযোগ প্রসঙ্গে স্মৃতি বলেন, ‘‘তৃণমূল সরকার যা অভিযোগ করে, তার নেপথ্যে আসল সত্যটা সকলের জানা দরকার। আমার মন্ত্রক থেকে নারী এবং শিশুকল্যাণ খাতে বাংলার সরকারকে ২৬৭ কোটি ৫১ লক্ষ টাকা দেওয়া হয়েছিল। সেই টাকা এখনও পড়ে রয়েছে। খরচ হয়নি।’’ রাজ্যের নারী এবং শিশুদের কল্যাণের জন্য মোদী সরকারের পাঠানো টাকা রাজ্য সরকার কেন খরচ করেনি, এর জবাব চেয়েছেন স্মৃতি।
এই প্রসঙ্গে তৃণমূল সাংসদ শান্তনু সেন সংবাদমাধ্যমে বলেন, ‘‘যারা ‘বেটি বাঁচাও, বেটি পড়াও’-এর ৮৫ শতাংশ টাকা বিজ্ঞাপনের জন্য খরচ করে, তাদের মুখে এই সব কথা মানায় না। পশ্চিমবঙ্গ সরকার সঠিক ভাবেই কাজ করছে। রাজনৈতিক ভাবে ক্ষমতা দখল করতে পারছে না। তাই নানা রকম শর্ত আরোপ করে আর্থিক ভাবে অবরুদ্ধ করা হচ্ছে। প্রতিহিংসা পরায়ণতা থেকেই এই কাজগুলি করছে।’’
বঞ্চনার অভিযোগের প্রসঙ্গ টানার পাশাপাশি, ১০০ দিনের কাজে দুর্নীতি নিয়েও শনিবার সরব হন স্মৃতি। ১০০ দিনের কাজের টাকা না দেওয়া নিয়ে সম্প্রতি কেন্দ্রকে দুষেছেন মমতা। গত বৃহস্পতিবার বর্ধমানের সভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী এই নিয়ে কেন্দ্রকে হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন। বলেছেন, ১০০ দিনের কাজের টাকা না দিলে ‘দুর্বার’ আন্দোলন হবে। কেন এই খাতে কেন্দ্রীয় সরকার টাকা দেবে না, এই নিয়ে প্রশ্নও তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। মমতার এই অভিযোগের পাল্টা স্মৃতি বলেন, ‘‘১০০ দিনের কাজে পুরো দুর্নীতি হচ্ছে। গরিবের টাকা নিজেদের পকেটে পুরছে তৃণমূল। তাই ক্লান্ত হয়ে এখন নিজেরা টাকা মেটাচ্ছে।’’
প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় দুর্নীতি নিয়েও রাজ্যকে বিঁধেছেন স্মৃতি। বলেছেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় জেলায় জেলায় কী হচ্ছে, সকলেই জানেন। এ বার বাজেটে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় ৬৬ শতাংশ বরাদ্দ বৃদ্ধি করা হয়েছে। এখনও পর্যন্ত গরিবদের জন্য ৩ কোটি ঘর বানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।’’ এর পরই তৃণমূল সরকারের উদ্দেশে স্মৃতির খোঁচা, ‘‘প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার টাকা নাগরিক কল্যাণের জন্য খরচ করা উচিত, দলের কর্মীদের জন্য নয়।’’
প্রধানমন্ত্রী মাতৃ বন্দনা প্রকল্পের টাকা রাজ্য সরকার তাদের মাতৃ প্রকল্পে খরচ করছে বলে দাবি করেছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। এই ব্যাপারে রাজ্য সরকারই চিঠি লিখে কেন্দ্রকে জানিয়েছেন বলে দাবি করেছেন স্মৃতি। কেন্দ্রের প্রকল্প রাজ্য নিজেদের নামে চালাচ্ছে বলে অতীতেও অভিযোগ করেছে বিজেপি।