Pegasus

Pegasus Software: স্মার্টফোনে মেতে নজরদারি-ফাঁদে

ফোনের মাধ্যমে ব্যক্তির অন্তরঙ্গ পরিসরে ঢুকে যে কোনও ব্যক্তিগত মুহূর্তের ছবি বা ভিডিয়ো বাজারে ছেড়ে দেওয়াও সাইবার-অপরাধীদের কাছে জলভাত।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ জুলাই ২০২১ ০৬:০০
Share:

প্রতীকী চিত্র।

২৪ বছর আগের কথা। সিবিআইয়ের হাতে রাজনীতিবিদ, সাংবাদিকদের মোবাইল ফোন ঘাঁটাঘাঁটি নিয়ে তখনও তোলপাড় হয়েছিল। এ তো ব্যক্তির নিজস্ব পরিসর লঙ্ঘনের সমান বলে, এর বিরুদ্ধে সরব হয় গণ সংগঠন— পিপলস ইউনিয়ন ফর সিভিল লিবার্টিজ (পিইউসিএল)।

Advertisement

আর এখন সরকারের কোপদৃষ্টিতে পড়া প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা বা সাংবাদিকই নন, যে কোনও সাধারণ নাগরিক অনায়াসে এই নিরন্তর নজরদারি বা আষ্টেপৃষ্ঠে আড়ি পাতার খপ্পরে পড়তে পারেন। ধরা যাক, রেস্তরাঁয় মা-বাবার সঙ্গে খেতে যাওয়া এক সাধারণ কিশোরী। আর পাঁচ জনের মতোই সারা ক্ষণ মগ্ন তের স্মার্টফোনটিতেই। রাষ্ট্রের তা-বড় বিরোধী নেতা, স্পর্শকাতর মামলার উকিল কিংবা কেঁচো খুঁড়তে কেউটে বের করা সাংবাদিকদের মতো সেই কিশোরীটিও আজ সমান বিপন্ন। অজান্তে সেও ফোনের নজরদার গুপ্তচরদের নিশানায় পড়তে পারে।

অল্প বয়সি ছেলে বা মেয়ে থেকে শুরু করে ইনস্টাগ্রামে, ফেসবুকে মত্ত যে কোনও নাগরিকই ইদানীং কার্যত তাঁর প্রতি মুহূর্তের খতিয়ান ‘আপডেট’ করতেই অভ্যস্ত। তাঁর ব্যক্তিজীবনের কতটা প্রকাশের, কতটা নয় তা নিয়ে পরোয়া নেই। এই অবস্থায় নজরবন্দি হওয়ার বিপদের আশঙ্কা এখন ঢের বেশি। ইন্টারনেটে অপরাধ বৃদ্ধি নিয়ে সাইবার বিশেষজ্ঞ রাজর্ষি রায়চৌধুরীর মতে, “আমাদের দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়লেও ইন্টারনেট নিয়ে শিক্ষা এবং সচেতনতা বাড়েনি।” খোদ কলকাতা পুরসভার এক আধিকারিক আধার কার্ড আপডেট করতে গিয়ে গুগল-সার্চের শরণাপন্ন হন এবং ইন্টারনেট থেকে প্রাপ্ত নম্বর খতিয়ে না-দেখেই আধার আপডেট করতে গিয়ে কয়েক হাজার টাকা খুইয়েছিলেন। কারণ, আধার আপডেট করার নামে নিজেদের নম্বর দিয়ে ফাঁদ পেতেছিল ব্যাঙ্ক জালিয়াতেরা।

Advertisement

সরকার কখন আড়ি পাতে: আইন ও বিধি

• দেশের নিরাপত্তা, সার্বভৌমত্ব, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা, অপরাধে উস্কানি বা কোনও তদন্তের স্বার্থে তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৬৯ নম্বর ধারায় কেন্দ্রীয় বা রাজ্য সরকারের কারও ফোনে আড়ি পাতা, নজরদারি করা, বার্তা পড়ার ক্ষমতা রয়েছে। কম্পিউটার থেকে পাঠানো ই-মেল বা কম্পিউটারে রাখা তথ্যেও নজরদারি চালানোর ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে ওই আইনে। একই ভাবে টেলিগ্রাফ আইনের ৫ নম্বর ধারাতেও নিরাপত্তার স্বার্থে আইনত আড়ি পাতার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।

• আড়ি পাতার ক্ষমতা থাকলেও তা আইন, বিধিনিয়ম ও নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া বা ‘স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিয়োর’ মেনেই সেই ক্ষমতা কাজে লাগানো যায়।

• প্রতিটি ক্ষেত্রে আলাদা ভাবে, কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব, রাজ্যের ক্ষেত্রে রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিবের অনুমতি নিতে হয়

দুনিয়াজোড়া ফাঁদের জাল কত দূর বিস্তৃত সেটাই চোখে আঙুল দিয়ে দেখাচ্ছে, পেগাসাস-কাণ্ড। সাইবার আইন বিশারদ বিভাস চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, “যা চলছে তাতে গণতন্ত্রটাই হ্যাক করা হচ্ছে, বলা যায়।” বাস্তবিক ১৯৯৭-এ পিইউসিএলের মামলায় স্রেফ মোবাইল ফোনে আড়ি পাতা নিয়েই মাথাব্যথা ছিল। এখন দেখা যাচ্ছে, গোটা ফোন-যন্ত্রটাই নজরদারের দখলে।

ভুবনজোড়া ফাঁদ

সমাজমাধ্যমে উটকো অ্যাপ ক্লিকে সাবধান

অচেনা কারও সঙ্গে ভিডিয়ো কল ঝুঁকির

অচেনা কারও সঙ্গে হোয়াটস অ্যাপ কলেও বিপদ হতে পারে

নেটব্যাঙ্কিংয়ের জন্য কোনও লিংকে ক্লিক করতে হলে দেখে নিন

অচেনা ওয়েবসাইটে ভেবেচিন্তে ঢুকুন

আপাত নিরীহ ইন্টারনেট লিঙ্কেই থাকতে পারে হ্যাকিং বা নজরদারির ফাঁদ

ফোনে আড়ি পাতার ভয় থাকলে কোনও কোনও প্রভাবশালী ব্যক্তি ইদানীং হোয়াটসঅ্যাপ কলে কথা বলেন। হোয়াটসঅ্যাপে নজরদারির ভয় থাকলে ফেসটাইম বা অন্য কোনও অ্যাপের কথাও কেউ কেউ ভাবেন। পেগাসাস-কাণ্ড দেখাচ্ছে, অ্যান্ড্রয়েড বা আইফোন, যে কোনও স্মার্টফোনই এখন আগাপাশতলা নজরদারের কব্জায়। ফোনের মাধ্যমে ব্যক্তির অন্তরঙ্গ পরিসরে ঢুকে যে কোনও ব্যক্তিগত মুহূর্তের ছবি বা ভিডিয়ো বাজারে ছেড়ে দেওয়াও সাইবার-অপরাধীদের কাছে জলভাত। সুকৌশলে ঢুকিয়ে দেওয়া গুপ্তচর অ্যাপের মাধ্যমে ব্যক্তির প্রতিটি মুহূর্তেরই সাক্ষী থাকতে পারে নজরদারেরা। ব্যক্তিগত তথ্য প্রকাশ করে নানা ভাবে হুমকি, ব্ল্যাকমেলের ছক কষা হচ্ছে।

বিভাসবাবুর কথায়, ‘‘পিইউসিএল মামলার সময়ে সুপ্রিম কোর্টও ব্যক্তির ‘রাইট টু প্রিভেসি’ নিয়ে চিন্তিত ছিল। এখন সেই সঙ্কট চরম পর্যায়ে। অথচ ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষা বিল এখনও সংসদীয় কমিটির জিম্মায় পড়ে রয়েছে। তা রক্ষাকবচ হিসেবে আইনে কার্যকর করা না-গেলে ভয়ানক দিন অপেক্ষা করে আছে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement