শেখ সাদ্দাম।
হুগলি নদীর মা ও মেয়ের অগ্নিদগ্ধ দেহ উদ্ধারের তদন্তে পুলিশ ইতিমধ্যেই শেখ মনজুর আলম মল্লিক ও শেখ সাদ্দাম নামে দুই যুবককে গ্রেফতার করেছে। ঘটনায় জড়িত আরও কয়েকজনের খোঁজে তল্লাশি চলছে বলে পূর্ব মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার জানিয়েছেন। মা-মেয়ে খুনে ধৃত সাদ্দামের সঙ্গে রাজ্যের শাসকদলের যোগাযোগের অভিযোগ নিয়ে ইতিমধ্যে শোরগোল পড়েছে। বিষয়টি নিয়ে আসরে নেমে পড়েছে বিজেপিও।
রাজ্য বিজেপির তরফে ইতিমধ্যে সাদ্দামের ‘তৃণমূল যোগে’র প্রমাণ হিসেবে বেশ কিছু ছবি (ছবিগুলির সত্যতা আনন্দবাজার যাচাই করেনি) প্রকাশ করা হয়েছে। সেখানে সাদ্দামের সঙ্গে দেখা যাচ্ছে জেলার দাপুটে তৃণমূল নেতা তথা রাজ্যের পরিবহণ মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীকে। সোমবার বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ সরাসরি অভিযোগ করেন, ‘‘মা ও মেয়েকে পুড়িয়ে মারার ঘটনায় অভিযুক্ত সাদ্দাম রাজ্যের পরিবহণ মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীর ডান হাত।’’ তাঁর দাবি, ‘‘সাদ্দাম তৃণমূলের ভক্ত হিসাবে ‘আই সাপোর্ট টিএমসি’ নামে গ্রুপ চালাত। শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে তার একাধিক ছবি রয়েছে। ভোট লুট করতে গিয়ে সাদ্দাম ধরাও পড়েছিল। সিআরপিএফ তাকে ধরে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। কিন্তু শুভেন্দুবাবুর ঘনিষ্ঠ বলে তাকে পুলিশ পরে ছেড়ে দেয়। এই রকম ব্যক্তি তৃণমূলের কাছে সম্পদ কি না এবং রাজ্যে আইনশৃঙ্খলা বলে কিছু আছে কি না, আমি জানি না।’’
পুলিশ সূত্রেও জানা গিয়েছে, তৃণমূলের সক্রিয় কর্মী হিসেবে পরিচিত সাদ্দামকে ২০১৮ সালে পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময় তৃণমূলের বাইক বাহিনীর নেতৃত্ব দেওয়ার অভিযোগে সুতাহাটা থানার হাতে তুলে দিয়েছিল সিআরপি।
এ প্রসঙ্গে শুভেন্দুর প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। মেসেজের জবাব দেননি তিনি। তবে তৃণমূলের জেলা সভাপতি শিশির অধিকারী পাল্টা বলছেন, ‘‘চণ্ডীগড়ে এক সাধু ধরা পড়েছেন, যাঁর হয়ে মোদীজি বক্তৃতা করতেন। দিলীপবাবু তো খড়্গপুরে অনেক সমাজবিরোধীকে নিয়ে হাঁটেন। আমি যদি সে সব কথা তুলি তা হলে কি কাদা ছোড়াটা কম হবে?’’ শিশিরের মতে, ‘‘শুভেন্দু জনপ্রতিনিধি। পূর্ব ভারতের অন্যতম শ্রেষ্ঠ নেতা। তাঁর জনপ্রিয়তা অনেকের কাছে ঈর্ষার কারণ। বিজেপির কাছেও সেটাই কারণ হতে পারে। তবে শুভেন্দুকে যত আক্রমণ করবেন, তত দিলীপবাবুরা পশ্চিমবঙ্গে ধ্বংস হয়ে যাবেন।’’
কিন্তু সাদ্দামের সঙ্গে শুভেন্দুর ছবির কী ব্যাখ্যা?
শিশিরের জবাব, ‘‘শুভেন্দুকে আক্রমণ করে কোনও লাভ নেই। এরকম কত সাদ্দাম কত লোকের সঙ্গে ঘুরে ছবি তোলে। সেই ছবিকে পুঁজি করে একটা জঘন্য খুন, তার প্রমাণ লোপাটের চেষ্টা ভারতীয় দণ্ডবিধিতে চরম অপরাধ বলে আমার মনে হয়। দোষীর উপযুক্ত শাস্তিই চাই।’’
সোমবার কাঁথিতে পুরভোট নিয়ে দলীয় কমর্সূচিতে এসে বিজেপির রাজ্য সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসুও হলদিয়ায় জোড়া খুনের ঘটনায় সরব হয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘উত্তরপ্রদেশ ও হায়দরাবাদে নারী নির্যাতনের ঘটনা সেখানকার সংবাদমাধ্যম বিস্তারিত তুলে ধরেছে। কিন্তু হলদিয়ায় মা-মেয়ের উপর যে ভাবে অত্যাচার করা হয়েছে, তা নিয়ে এ রাজ্যের সংবাদমাধ্যমে বিস্তারিত কিছুই তুলে ধরা হচ্ছে না।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘খুনের ঘটনায় অভিযুক্তেরা হলদিয়ায় ত্রাস সৃষ্টি করেছে। আমরা নজর রাখছি, সাদ্দাম যেন জামিনে মুক্ত না হয় বা জেল ভেঙে না পালায়।’’ তিনি জানান, আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি বিজেপির মহিলা মোর্চা তমলুকে জেলা পুলিশ সুপারের অফিস ঘেরাও করবে। সেখানে জেলা ও রাজ্য মহিলা মোর্চার নেতৃত্ব থাকবেন। ঘটনার প্রতিবাদে লাগাতার প্রতিবাদ আন্দোলনও চলবে।